২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:১৩:৩৩ পূর্বাহ্ন
বেহাত ৩ হাজার একর জমি উদ্ধারে অনীহা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১২-২০২৩
বেহাত ৩ হাজার একর জমি উদ্ধারে অনীহা জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের

জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার একর জমি অবৈধ দখলে আছে। এসব জমি থেকে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলাতে ইদানীং অনীহা প্রকাশ করছেন সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার আইনি ক্ষমতাসম্পন্ন এই কর্মকর্তারাই এত দিন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে আসছিলেন। উচ্ছেদ কার্যক্রম বিষয়ে কৌশলে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হতে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জাগৃকের কর্মকর্তাদের হঠাৎ এমন অনীহায় বেহাত জমি উদ্ধার নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।


সূত্রমতে, রাজধানীর বৃহত্তর মিরপুর, মোহাম্মদপুরসহ সারা দেশে সরকারি আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কাজ করে জাগৃক। বর্তমানে সংস্থাটির প্লট ও ফ্ল্যাটসংক্রান্ত ৪০টির মতো প্রকল্প চলমান। এসব প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। অধিগ্রহণ করা এসব জমির মধ্যে অবৈধ দখলে আছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার একর।  


অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম প্রসঙ্গে জাগৃকের নির্বাহী প্রকৌশলী (ঢাকা বিভাগ-১) জোয়ারদার তাবেদুন নবী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘উচ্ছেদ কার্যক্রমের জন্য এখন থেকে ঢাকা জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিতে একটি অফিস আদেশ পেয়েছি। এর বেশি মন্তব্য করতে পারব না।’


জাগৃক সূত্রে জানা যায়, ২০০০ সালে গৃহসংস্থান অধিদপ্তর থেকে কর্তৃপক্ষ হওয়ার পর এই দপ্তরের কাজ দিন দিন বেড়েই চলছে। তাই অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে সংস্থাটিতে প্রেষণে নিয়োজিত প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা বা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়েই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু হঠাৎ করে গত ২৯ নভেম্বর কর্তৃপক্ষের ২৯৪তম বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের আলোকে একটি চিঠি জারি করা হয়। জাগৃকের উপপরিচালক আর এম সেলিম শাহনেওয়াজের সই করা সেই চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিপুল পরিমাণ জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। সেসব জমি উদ্ধার করা প্রয়োজন। এসব জমি উদ্ধারের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীদের সরাসরি উচ্ছেদ প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে চিঠিতে। এ ছাড়া প্রস্তাবিত জমিতে আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞা বা স্থিতাবস্থা থাকলে উচ্ছেদ প্রস্তাব না পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে।


জাগৃকের উপপরিচালক (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) আর এম সেলিম শাহনেওয়াজ বলেন, এটি বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত। সবকিছু ভেবেচিন্তে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।


জাগৃকের দুজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই প্রস্তাবের মাধ্যমে নিজেদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। জাগৃকের আইন শাখা থাকায় এর মাধ্যমে যাচাই করে ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে অবৈধ জমি উদ্ধারের কাজ করা হয়ে থাকে। এখন তা জেলা প্রশাসনকে জানাতে বলা হয়েছে। এতে জমি উদ্ধারে কোনো সুফল আসবে না। ফলে মিরপুর ও মোহাম্মদপুরে বেদখল হয়ে থাকা সাড়ে তিন হাজার একর জমি উদ্ধার কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়বে।


এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে জাগৃকের চেয়ারম্যান খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

তবে সংস্থার সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) মোহাম্মদ কুদ্দুস আলী সরকার গতকাল মঙ্গলবার রাতে বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে আমাদের ডেপুটি কমিশনারের ক্ষমতা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে তা প্রয়োজন হয়। কয়েক মাস ধরে জনপ্রশাসন থেকে আমাদের অফিসারদের সেই ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে না। তাই আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে চাইছি। আবার যখন ডেপুটি কমিশনারের ক্ষমতা পাওয়া যাবে, তখন জাগৃক নিজেই তা করবে।’


শেয়ার করুন