২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৪:৪৫:০২ পূর্বাহ্ন
ইউজিসির চিঠিতে ষড়যন্ত্র দেখছে আইআইইউসি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-১২-২০২৩
ইউজিসির চিঠিতে ষড়যন্ত্র দেখছে আইআইইউসি

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) থেকে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী ও তাঁর স্ত্রী রিজিয়া সুলতানা চৌধুরীর মাসে ১৪ লাখ টাকা সম্মানী গ্রহণের ব্যাখ্যা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যে চিঠি দিয়েছে, তাতে ষড়যন্ত্র দেখছে আইআইইউসি। বিষয়টি নিয়ে গত শনিবার রাতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে একটি ব্যাখ্যা পাঠিয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির পাবলিক রিলেশন অফিস। নামবিহীন কর্মকর্তার স্বাক্ষরে পাঠানো ওই বিজ্ঞপ্তিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও ইউজিসিকে একহাত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।


আইআইইউসি কর্তৃপক্ষের পাঠানো ওই ব্যাখ্যায় বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে চট্টগ্রাম-১৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর মনোনয়নে ঈর্ষান্বিত চক্র বিএনপি-জামায়াতের আওয়ামী লীগবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ইউজিসি, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ বিভিন্ন স্থানে বেনামি উড়োচিঠি দিয়ে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরির অপপ্রচার চালাচ্ছে। মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে দুদকে পাঠানো একটি বেনামি উড়োচিঠির ভিত্তিতে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।


এ বিষয়ে মতামত জানতে আইআইইউসির উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম আরিফ ও রেজিস্ট্রার আকতারুজ্জামান কায়সারের ফোন নম্বরে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া মেলেনি। খুদে বার্তা দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।


দুদক ও ইউজিসির সমালোচনা করে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আ ন ম শামসুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোটি কোটি টাকার অর্থ আত্মসাতের লিখিত অভিযোগ আইআইইউসি কর্তৃপক্ষ দুদকে জমা দিয়েছে প্রায় এক বছর আগে। কিন্তু এক বছর পরও এই অভিযোগ এখনো দুদক পুরোপুরি আমলে নেয়নি। অথচ সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে বেনামি উড়োচিঠি দুদক থেকে ইউজিসিতে আসামাত্রই আইআইইউসিতে পাঠানো হয়েছে।


 ‘বেনামি বা উড়োচিঠির ওপর ভিত্তি করে দুদক অনুসন্ধান চালাতে পারে। অনেক সময় অভিযোগদাতা নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে নিজের নাম গোপন করে। সে ক্ষেত্রে অভিযোগটি গুরুত্বপূর্ণ মনে হলে আমরা অনুসন্ধান চালাই।’


ইউজিসির বিষয়ে আইআইইউসির ক্ষোভের কারণ কী—এমন প্রশ্নের উত্তরে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, ‘আইআইইউসি থেকে অবৈধভাবে ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সদস্য টাকা নেওয়ার বিষয়ে দুদক অনুসন্ধান করতে একটি চিঠি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দেয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটি আমাদের কাছে পাঠায়। তারপর আমরা সেটি আইআইইউসির কাছে ব্যাখ্যা চাই। আমরা জামায়াত-বিএনপি হতে যাব কেন?’


উল্লেখ্য, এমপি নদভী ও তাঁর স্ত্রী ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য রিজিয়া সুলতানা চৌধুরী আইআইইউসি থেকে প্রতি মাসে সম্মানী বাবদ ৭ লাখ করে মোট ১৪ লাখ ও গাড়ির তেল খরচ বাবদ ২ লাখ টাকা নেন—এমন অভিযোগ আসার পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা তলব করে ৮ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়টিকে চিঠি দেয় ইউজিসি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর ধারা ৪৪(৭) মোতাবেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীর ব্যয় ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।


আইন অনুযায়ী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং সদস্যদের আর্থিক সুবিধা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই বলেও চিঠিতে উল্লেখ করে ইউজিসি।


আইআইইউসি থেকে এমপি নদভী ও তাঁর স্ত্রীর বড় অঙ্কের আয়ের বিষয়টি কেবল দুদকে জমা পড়া অভিযোগে আছে, তা নয়। নদভী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছেন, তাতেও আইআইইউসি থেকে এই দম্পতির আয়ের কথা উল্লেখ আছে। হলফনামা অনুযায়ী, আইআইইউসি থেকে নদভীর বার্ষিক আয় ১ কোটি ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ৪৪২ টাকা। অর্থাৎ মাসে ১১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮৬ টাকা। তাঁর স্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার্ষিক আয় করেন ৪৪ লাখ ২২ হাজার ৪৪৬ টাকা।


শেয়ার করুন