২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৭:০৮:০৬ অপরাহ্ন
মামলায় হাজিরা কমেছে নেতাকর্মীদের
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-১২-২০২৩
মামলায় হাজিরা কমেছে নেতাকর্মীদের

সরকার পতনের লক্ষ্যে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ২০ ডিসেম্বর সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে বিএনপি। ‘অসহযোগ আন্দোলন’র অংশ হিসাবে নিজ দলের নেতাকর্মীদের মামলায় হাজিরা না দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকার অধস্তন আদালতে। আগের তুলনায় আদালতে হাজিরা দেওয়ার সংখ্যা কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। এছাড়া প্রতিদিনই বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে করা বিভিন্ন থানার মামলায় সাজা দিচ্ছেন আদালত। বুধবার তিন মামলায় ২৯ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। আগস্ট থেকে ৫ মাসে ১০০ মামলায় বিএনপির ১ হাজার ৫৬১ জনের সাজা হয়েছে। এছাড়াও ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর আইনজীবীদের আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।


আইনজীবী ও আদালত থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন কমপক্ষে একশর উপরে হাজিরা থাকত। এখন হাজিরা দিচ্ছেন ২০-২৫ জন। আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় খোঁজ নিয়েও এর সত্যতা মিলেছে। ২০ ডিসেম্বরের পর দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা আদালতে হাজিরা দিতে আসেননি। এর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, বিএপি নেতা রফিকুল ইসলাম রতন, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম, সহ-দপ্তর সম্পাদক মনির হোসেন, কৃষক দল নেতা শাহাজাহান সম্রাটসহ আরও অনেকে। তবে দলটির কিছু কর্মীকে আদালতে হাজিরা দিতে দেখা গেছে। জামিন বাতিল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থেকেই তারা হাজিরা দিতে এসেছেন বলে জানান। আদালতে হাজিরা দিতে আসা বিএনপির এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমার কোনো পদ-পদবি নেই। দুই মামলার আসামি আমি। জামিনে থাকা অবস্থায় আদালতে হাজির না হলে জামিন বাতিল হয়ে যাবে। যার কারণে হাজিরা দিতে এসেছি।


তবে বিএনপির আইনজীবীদের দাবি, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ হাজিরা দিচ্ছেন না। যারা হাজিরা দিচ্ছেন তাদের কোনো পদ-পদবি নেই। তাদের অনেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িতও ছিলেন না। কিন্তু পুলিশ ধরে এনে মামলায় ঢুকিয়ে দেওয়ার কারণে তারা এখন বিএনপি করেন। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে যারা হাজিরা দিচ্ছে না তারা ভোগান্তিতে পড়বে।


সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবা বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা প্রায় ৩০০ মামলার আইনজীবী। তিনি বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসাবে বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন না। সবাই হাইকমান্ডের নির্দেশ মেনেই এই প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন। আমার কাছে যত মামলা আছে এর মধ্যে প্রতিদিন প্রায় ৫০ জনের মতো নেতাকর্মীর হাজিরা থাকে কিন্তু এখন কেউই হাজিরা দিচ্ছেন না। আর হাজিরা দিলেও বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজা হচ্ছে, না দিলেও সাজা হচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা এসব ভয় করে না।


ঢাকার সিএমএম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন থানার তদন্তাধীন মামলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের আদালতে হাজিরার সংখ্যা আগের থেকে কমেছে। অনেকেই আইনজীবীর মাধ্যমে সময়ের আবেদন করছেন। এর মধ্যে অনেকের আবেদন আদালত মঞ্জুর করেছেন। আবার যেসব আসামি দুই কার্যদিবসে হাজির না হয়ে সময় আবেদন করেছেন তাদের আবেদন নামঞ্জুর করার উদাহরণও রয়েছে।


২১ ডিসেম্বর বনানী থানার দুই মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী সোহেল হাজির না হওয়ায় জামিন বাতিল করে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. তোফাজ্জল হোসেনের আদালত। একইসঙ্গে সময় আবেদনও নামঞ্জুর করা হয়।


এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সুপ্রিমকোর্ট বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন যুগান্তরকে বলেন, এগুলো সব হচ্ছে ন্যায়বিচার বঞ্চিত মানুষদের একটা প্রতিবাদ। এজন্য জানুয়ারির ১ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত আদালত বর্জনের ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। আইনজীবীরা সুপ্রিমকোর্টসহ সারা দেশে এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এগুলো রেকর্ডে রাখা। যাতে করে ইতিহাসে এসব থেকে যায়। কেন এ আন্দোলন করেছিল, তার ব্যাখ্যা আসবে এক সময়। আর সরকারের যারা বলে বিএনপি নির্বাচনে এলে একরাতে সবাইকে ছেড়ে দিত, তাদের এসব বক্তব্য তো প্রমাণ করে সরকার বিচার বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এ আন্দোলনের এটাও একটা কারণ যে, সরকারের নিয়ন্ত্রণ থেকে বিচার বিভাগকে আমরা স্বাধীন দেখতে চাই।


ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আব্দুল্লাহ আবু যুগান্তরকে বলেন, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। জামিনে থাকা আসামিরা হাজিরা দিতে না এলে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হবে। তারাই ভোগান্তিতে পড়বে। তবে অনেকেই হাজিরা দিচ্ছেন।


বিএনপি নেতাকর্মীদের হাজিরা না দেওয়ার প্রতিবাদ ফলপ্রসূ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির এ কর্মসূচি হঠকারী সিদ্ধান্ত। তারা যদি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করে তাহলে নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন হবে। সেক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।


নাশকতার তিন মামলায় বিএনপির ২৯ জনের সাজা : রাজধানীর কোতোয়ালি, খিলক্ষেত থানার দুই মামলাসহ পৃথক তিন মামলায় বিএনপির ২৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী।


এরমধ্যে ২০১৮ সালে রাজধানীর খিলক্ষেত থানার নাশকতার পৃথক দুই মামলায় বিএনপির ২৬ নেতাকর্মীর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এক মামলায় ১৩ জনকে দণ্ডবিধির পৃথক দুই ধারায় ২ বছর করে ৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-হাজী এসএম ফজলুল হক, আক্তার হোসেন, মোবারক হোসেন দেওয়ান, জহির উদ্দিন বাবু, মিজানুর রহমান রেনু, সোহরাব হোসেন স্বপন, সৈকতুল ইসলাম, শামসুল আলম ওরফে চঞ্চল, মজনু দর্জি, রেজাউল মেম্বার, মুজিবর মেম্বার, নজরুল ইসলাম ও আ. করিম।


একই মামলায় আরও ৭ জনকে দণ্ডবিধির পৃথক দুই ধারায় ১ বছর করে ২ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-শহিদুল ইসলাম খোকন, নুরুল ইসলাম মুরাদ, শামীম মোল্লা, মানিক মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন ও আনোয়ার হোসেন। এছাড়া চার্জশিটভুক্ত বাকি ১৪ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাদের খালাস দিয়েছেন।


খিলক্ষেত থানার অপর মামলায় ৬ জনকে দণ্ডবিধির পৃথক তিন ধারায় ২ বছর করে ৬ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন-আক্তার হোসেন, মোবারক হোসেন দেওয়ান, মিজানুর রহমান রেনু, নূরে আলম তুহিন, জাকির হোসেন লিটন ও দিদার হোসেন।


এছাড়াও ৮ বছর আগে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার নাশকতার মামলায় তিনজনের ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৩০ দিনের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় চার্জশিটভুক্ত তিন আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-শাহাদাত হোসেন খান, শহিদুল ইসলাম ও জুয়েল মৃধা।


শেয়ার করুন