দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে এখনই বলা যাবে না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। রোববার সন্ধ্যায় নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সিইসি।
ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর এ ব্রিফিংয়ে তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল– দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনটা কতটা স্বস্তিদায়ক ছিল? জবাবে সিইসি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে কিছুটা চ্যালেঞ্জ থাকে। সে ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ করার বিষয়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছিল। সেই সঙ্গে সরকারের তরফ থেকে আন্তরিকতা ছিল।
যে সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন ছিল, তা পেয়েছি। সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা বোঝা যাবে ফলাফলের পরে। এটা আমরা বলব না, আপনারা বলেন। জনগণ কী বলে, গণমাধ্যমে কীভাবে উঠে আসে, তার ওপর নির্ভর করে আমরা বলতে পারব নির্বাচনটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে কিনা। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তো গ্রহণযোগ্য হয়েছে এখনও বলিনি। আরেকটু অপেক্ষা করতে হবে।’
ব্রিফিংয়ের শুরুতে ভোট পড়ার হারের বিষয়ে সিইসি বলেন, এখনও নিশ্চিত করে ভোটের শতকরা হারের বিষয়টি বলা যাচ্ছে না। এমনিতে দেশব্যাপী আমরা যেটা পেয়েছি, সেটা ৪০ শতাংশের মতো। ড্যাশবোর্ডে ১০০ শতাংশ ভোটের হার আসেনি, তথ্য হালনাগাদ হয়নি। ৪০ শতাংশ যে ফলটা আসছে, এটি এখন পর্যন্ত নির্ভরযোগ্য। তবে এটার কিছুটা ব্যত্যয় হতে পারে। আরও তথ্য আসার পরে এই পার্সেন্টেজ বাড়তেও পারে, নাও পারে।
সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে মনিটরিং সেল পরিদর্শন করে নির্বাচনে দেশের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অল্প অল্প ভোট পড়ছে বলে মন্তব্য করেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোটার উপস্থিতি বাড়বে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
এই নির্বাচন নিয়ে স্বস্তির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের যে একটা শঙ্কা ছিল, ভোটার উপস্থিতি হয়তো আরও অনেক কম হবে। এর কারণ হচ্ছে বড় একটি পক্ষ নির্বাচন বর্জন করে পরোক্ষভাবে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। কয়েকটি কেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। একটি ট্রেনে আগুন দেওয়ার মতো মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। অনেকের মনেই এগুলো দেখে এক ধরনের শঙ্কা কাজ করে যে, নির্বাচনটা সহিংস হবে। কিন্তু আমরা দেখেছি, অনেক ভোটার স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের চেষ্টা করেছেন।
সিইসি বলেন, পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ ছিল। সহিংসতার ঘটনা গুরুতর কিছু ঘটেনি। তবে কয়েকটি কেন্দ্রের ভোট বন্ধ করতে হয়েছে। একজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে হয়েছে। একটি বিষয় স্বস্তিদায়ক ছিল যে, নির্বাচনী সহিংসতায় কোনো মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। কিছু আহত হতে পারে। তবে কিছু জায়গায় অনিয়ম হয়েছে। কিছু জায়গায় সিল মারা হয়েছে।
পোলিং এজেন্টের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, আমরা খুব জোর দিয়ে বলেছিলাম– প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ভোট হতে হলে কেন্দ্রে অবশ্যই প্রতিটি প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট থাকতে হবে। পরিদর্শনকালে আমি যেগুলো পেয়েছি সবাই একই দলের, নৌকার প্রার্থীর। বাদবাকি প্রার্থীদের কোনো লোকজন দেখিনি।
ব্রিফিংয়ে চার নির্বাচন কমিশনার, সচিবসহ ইসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, নির্বাচনে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ২৬.৩৭ শতাংশ ভোট পড়েছে।
বিকেল ৩টা পর্যন্ত দেশের আট বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে খুলনায় ৩২ শতাংশ। এর পরই বরিশালে ৩১ শতাংশ ভোট পড়েছে। এ ছাড়া ময়মনসিংহে ২৯ শতাংশ, ঢাকায় ২৫ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৭ শতাংশ, সিলেটে ২২ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৬ শতাংশ এবং রংপুরে ২৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।
ভোটকেন্দ্রে বেশি পরিমাণে জাল ভোট ও ভাঙচুরের ঘটনায় এ পর্যন্ত সাতটি ভোটকেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়েছে। দুপুর ১২টার পরে কক্সবাজারে ও নরসিংদীতে দুটি কেন্দ্রের ভোট বাতিল করা হয়। ভোটকেন্দ্রে জাল ভোটে সহায়তা করার অভিযোগে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাসহ ১৫ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
দুপুর ১টায় সংবাদ সম্মেলনে ইসি সচিব জাহাংগীর আলম বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৮.৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। নির্বাচনী অ্যাপসে কোনো কিছু আপডেট হচ্ছে না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ছয় বছর মেয়াদে ২৫ কোটি টাকার প্রকল্পের মাধ্যমে অ্যাপসটি তৈরি করা হয়েছে। প্রথম বছরে খরচ হয়েছে ৮ কোটি টাকা। অ্যাপসটি হ্যাক হয়নি, অ্যাপসটি স্লো করে দেওয়া হয়েছে। আমরা সারারাত ধরে অ্যাপসটি চালু রাখার চেষ্টা করেছি।