২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:৩৬:৩৯ অপরাহ্ন
পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-০১-২০২৪
পঞ্চমবার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা

দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অনন্য নজির স্থাপন করে পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে যাচ্ছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এদিন তিনি টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেবেন। এরপরপরই শপথ নেবেন নবগঠিত মন্ত্রিসভার সদস্যরা। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। এরই মধ্যে তিনি চার মেয়াদে ২০ বছর সরকারপ্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।


বুধবার সন্ধ্যায় তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তের বিষয়টি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন শেখ হাসিনা। এদিন সকালে সংসদীয় দলের সভায় শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থ ও পঞ্চমবারের মতো সংসদ নেতা নির্বাচিত করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সম্মতি দেন রাষ্ট্রপতি। সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে একথা জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ-সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন এবং তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে।’ নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা আজ সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথ নেবেন বলে ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।


স্মার্ট বাংলাদেশ : ‘উন্নয়ন দৃশ্যমান, বাড়বে এবার কর্মসংস্থান’ এই স্লোগান দিয়ে ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ। বিএনপিসহ তাদের বলয়ে থাকা বিরোধী দলগুলোর বর্জনের মধ্যে এ নির্বাচনে ২২২টি আসনে জয়ী হয় আওয়ামী লীগ। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে জয়ী হন। এই আসনে ভোটার দুই লাখ ৯০ হাজার ২৯৭ জন। এরমধ্যে ভোট পড়েছে দুই লাখ ৫৩ হাজার ১৬৯। শেখ হাসিনা ভোট পান ২ লাখ ৪৯ হাজার ৯৬২। এখানে ভোট পড়ার হার ৮৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রথম ১৯৮৬ সালে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ নির্বাচনে সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।


১৯৯৬ সালের ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে প্রথমবার বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। সেবার জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে দলটি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যার ২১ বছর পর সেই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে আবারও প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কাছে পরাজিত হয় দলটি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ হয় সংসদে প্রধান বিরোধী দল। ২০০১ সালের নির্বাচনে হারতে হয় তাকে, যার পেছনে বিদেশের ষড়যন্ত্র ছিল বলে শেখ হাসিনা নিজেই বিভিন্ন সময় দাবি করেছেন। এরপর ২০০৭ সালে এক-এগারোর সময় সেনা নিয়ন্ত্রিত সরকারের নতুন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে হয় তাকে; রাজনীতি থেকে শেখ হাসিনাকে বাদ দেওয়ার সেই চেষ্টার মধ্য দিয়ে দৃশ্যত আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠেন তিনি।


২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা নিজের রাজনৈতিক জীবনে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনে টানা দ্বিতীয় ও মোট তিন মেয়াদে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। সেই সরকারেও প্রধান হন শেখ হাসিনা। ওই নির্বাচনে অবশ্য অংশ নেয়নি বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ওই নির্বাচনে অংশ নেওয়া না নেওয়া নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল বিএনপি। শেষ পর্যন্ত কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে দলটি। সংলাপে অংশ নেয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। তারপর নির্বাচনে আসতে রাজি হয় তারা। সেই নির্বাচনেও ভূমিধস জয় পায় আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে জয়ের পর টানা তৃতীয় ও মোট চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা। সেই সরকারেরও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন তিনি (শেখ হাসিনা)।


শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে যখন দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন, তখন বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল পাঁচের কাছাকাছি, ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে সেই প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ ছুঁই ছুঁই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ২০২১ সালে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দশের ঘরে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি থাকলেও, ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা লাগে দেশের অর্থনীতিতে। মহামারির খাঁড়া সামলানোর মধ্যে দুই বছর পর অর্থনীতির ‘বোঝার উপর শাকের আঁটি’ হিসাবে আবির্ভূত হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ।


ইতোমধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও রাষ্ট্রপতির কার্যালয় শপথ অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। নবনির্বাচিত সংসদ-সদস্যরা ছাড়াও প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, কমিশনার, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, সরকারের সিনিয়ন সচিব, সচিব, তিন বাহিনীর প্রধান, রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার এবং বিদেশি মিশন প্রধান, সিনিয়র সাংবাদিক, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের নেতারা শপথ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্যদের ব্যবহার করা সব গাড়ি পরিবহণপুলে জমা নেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ৪০টি গাড়ি নতুন মন্ত্রীদের জন্য চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি পরিবহণপুল ৪০টি গাড়ি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চাহিদার আলোকে প্রস্তুত করে রেখেছে।


শেয়ার করুন