২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৬:১৭:১৩ পূর্বাহ্ন
তৈরি পোশাকে ছয় বছরে নতুন কারখানা ১১৬৮
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০১-২০২৪
তৈরি পোশাকে ছয় বছরে নতুন কারখানা ১১৬৮

রানা প্লাজা ধস, তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ড, কোভিড মহামারী ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের মতো একের পর এক সংকট এলেও দেশে তৈরি পোশাক কারখানার সংখ্যা বেড়েছে। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠনÑ বিজিএমইএর তথ্য বলছে, গেল ছয় বছরে দেশে তৈরি পোশাকশিল্পে এক হাজার ১৬৮টি নতুন কারখানা হয়েছে।

বিজিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছয় বছরে দেশে ৬০৩টি কারখানা সংগঠনটির অস্থায়ী সদস্যপদ নিয়েছে। স্থায়ী সদস্যপদ পেয়েছে ৫৬৫টি কারখানা।

পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউয়ে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় পোশাক রপ্তানি বড় ধরনের হুমকিতে পড়ে। তখন অনেক উদ্যোক্তাই নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন। সেই জায়গা থেকে ব্যবসা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। শুধু তাই নয়, নিত্যনতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে নতুন কারখানা গড়ে উঠেছে, যা পোশাকশিল্পের জন্য ইতিবাচক।

সংগঠনটির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, কোভিডের আগের চেয়ে পরেই নতুন কারখানা বেশি গড়ে ওঠে। করোনার আগের দুই বছর- ২০১৮ ও ২০১৯ সালে যথাক্রমে ৬১টি ও ৮১টি কারখানা গড়ে ওঠে। করোনার বছর (২০২০ সাল) ছিল ৫৮টি। পরের বছর থেকেই নতুন কারখানার সংখ্যা বাড়তে থাকে। ৮৬টি কারখানা হয়েছিল ২০২১ সালে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে নতুন কারখানা হয়েছে যথাক্রমে ১৮২ ও ১৩৪টি।

বিজিএমইএর সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘এটি শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়। এটি শিল্প নিয়ে উদ্যোক্তাদের মনোভাবের নিদর্শনও, যা পোশাকশিল্পকে শক্তি জোগাচ্ছে। গত কয়েক বছরে যেসব কারখানা আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে, তারা সবাই পোশাকশিল্পে নতুন নয়। বিদ্যমান ইউনিটগুলোর একটি অংশ ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছে। এ ছাড়া শিল্পের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছেন, এমন পেশাজীবীরাও উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।’

ফারুক হাসান বলেন, ‘কোভিড মহামারী কীভাবে বিশ্ব অর্থনীতিতে ভয়াবহ ছোবল বসিয়েছে, যার প্রভাব থেকে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের এই শিল্পও মুক্ত ছিল না। আমরা হঠাৎ করেই অনেক অর্ডার হারিয়ে ফেলি এবং নন-পেমেন্ট, ডিসকাউন্ট, ডেফার্ড পেমেন্ট এবং জাহাজীকরণ সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হই। এসব সমস্যায় শিল্প জর্জরিত হয়। এমনই একটি নজিরবিহীন সময়ের মধ্য দিয়ে আমরা সবাই যাচ্ছিলাম। যখন আমাদের কারুরই ধারণা ছিল না যে, এই মহামারী থেকে বিশ্বকে পুনরুদ্ধার করতে আরও কতদিন অপেক্ষা করতে হবে! গর্বের বিষয় হলো, এতসব সংগ্রামের মধ্যেও আমরা, বিজিএমইএ পরিবার ভেঙে পড়িনি, মাথা উঁচু রেখে শুধু ঝড়েরই মোকাবিলা করিনি, বরং আগের চেয়ে শক্তিশালী হয়ে উঠেছি। টেকসই ও দায়িত্বশীল ফ্যাশনে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প যে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম, তা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছি।

কারখানা স্থাপনের পর বিজিএমইএর সদস্যপদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স, ভবনের নকশা, প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ আবেদন করতে হয়। সেই আবেদনের পর বিজিএমইএর কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট কারখানা ভবনের নিরাপত্তাসহ কমপ্লায়েন্সের বিভিন্ন বিষয়ে সরেজমিনে পরিদর্শন করে অস্থায়ী সদস্যপদ দেন। এরপর আমদানি ও রপ্তানি সনদ, বন্ড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন সনদ পাওয়ার পর চূড়ান্ত সদস্যপদ দেওয়া হয়।

কোভিড মহামারী প্রাথমিক পর্যায়ে রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়ে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে পোশাক রপ্তানি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তুলনায় ৬০০ কোটি ডলার কমে যায়। তবে পরের বছরগুলোতে অব্যাহতভাবে উন্নতি করে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের ২৮০০ কোটি ডলার থেকে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩১০০ কোটি ডলার, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪২০০ কোটি এবং সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৭০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়।

শেয়ার করুন