একদিকে নির্মাণ শ্রমিকের হাতুড়ির টুংটাং শব্দ আর একদিকে শিল্পী নিজের নিপুণ হাতে রং দিয়ে আঁকছেন স্টলের গায়ে বিভিন্ন চিত্রকর্ম। স্টলগুলোতে লাগানো হচ্ছে রঙ বেরঙের আলোকসজ্জা। আর বঙ্গবন্ধু চায়না বাংলাদেশ এক্সিবিশন সেন্টারের ভেতরের এসব কর্ম যেন বার্তা দিচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার ২৮তম আসর শুরু হওয়ার। তৃতীয়বারের মতো রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপ-শহরে ৪ নম্বর সেক্টরে বসতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার আসর। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরা (ইপিবি) ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যেগে বাণিজ্য মেলা আয়োজন করা হয় প্রতিবছর। ১ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধনের কথা থাকলেও ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কারণে ২১ জানুয়ারি মেলার উদ্বোধনের কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। মেলা উদ্ধোধনকে সামনে রেখে সব প্রস্তুতির কাজ চলছে বেশ জোড়েশোড়ে।
নির্দিষ্ট সময়ে মেলা উদ্ধোধনকে সামনে রেখে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে স্টলের নির্মাণের কাজ। নির্মাণ শ্রমিকরা কাজে এতই ব্যস্ত যে কথা বলার সময় নেই তাদের। এবারের আসরে ৩০০ ফুট এক্সপ্রেসওয়ের কাজ পুরোপুরি সম্পন্ন হওয়ায় ঢাকা থেকে আগত দর্শণার্থীরা ভোগান্তিহীন ভাবেই মেলায় আসতে পারবেন। তবে এশিয়ান বাইপাস সড়কের কাজ চলমান থাকার কারণে রূপগঞ্জ, নরসিংদী, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ সদর, ভৈরবসহ এসব অঞ্চল থেকে আসা দর্শণার্থীরা যানজটের কারণে ভোগান্তিতে পড়তে পারে। মেলার সফল করতে প্রশাসন সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করে যাচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইপিবির অতিরিক্ত সচিব ও বাণিজ্য মেলার পরিচালক ভিবেক সরকার।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, মেলার প্রধান ফটক ও প্রবেশদ্বারের কাজ চলছে। মেলার মূল অবকাঠামোর বাইরে চলছে বিভিন্ন দেশি বিদেশি কোম্পানির প্যাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ। মূল অবকাঠামোর ভেতরে বিভিন্ন প্রকার প্রসাধনী কোম্পানি, ইলেকট্রনিক্স ফার্নিচার, দেশি বিদেশি কাপড়ের দোকান রয়েছে। মেলা উদ্বোধনের আর মাত্র ৩ দিন বাকি থাকলেও মেলার সিংহভাগ স্টলই এখনো সম্পন্ন করতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। এবারের মেলায় দেশ-বিদেশের মোট ৩৩০টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন থাকবে। এর মধ্যে ১৫-১৮টি বিদেশি স্টল রয়েছে। বরাবরের মতো ভারত, পাকিস্তান, ইরান, তুরস্ক, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ব্যবসায়ীরা এবারের মেলায় অংশ নেবেন। এ ছাড়া স্থানীয় উদ্যোক্তারাও তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করবেন। সাধারণত প্রতিবছর ১ জানুয়ারি থেকে বাণিজ্য মেলা শুরু হয়। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে ২০২৪ সালের বাণিজ্য মেলা শুরুর সময় পেছানো হয়। গত ৭ জানুয়ারি দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ ও অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেলার নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২২ সাল থেকে পূর্বাচলের বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী প্রদর্শনী কেন্দ্রে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চলতি বছর সেখানে তৃতীয়বারের মতো ২৮তম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে বাণিজ্য মেলা অনুষ্ঠিত হতো। মূলত জনদুর্ভোগ এড়াতে বাণিজ্য মেলা মূল শহর থেকে পূর্বাচলে স্থানান্তর করে সরকার।
ইপিবি সূত্রে জানা যায়, গত বছর বাণিজ্য মেলায় দেশ-বিদেশের ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন ছিল। গত বছর সিঙ্গাপুর, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ ১০টি দেশের ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য প্রদর্শন ও বিক্রি করেন। মাসব্যাপী এ মেলায় ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এ ছাড়া মেলায় ৩০০ কোটি টাকার তাৎক্ষণিক রপ্তানি আদেশও পাওয়া যায়। মেলায় ৩০ থেকে ৩৫ লাখ দর্শনার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন বলে জানায় ইপিবি। ২০২৩ সালে মেলার প্রবেশের টিকিটের দাম ছিল বড়দের জন্য ৪০ টাকা আর শিশুদের জন্য ২০ টাকা। এ বছরও একই হারে ফি নির্ধারণ করা হবে বলে ইপিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় কারাপণ্য প্যাভিলিয়নের ঠিকাদার মজিবর রহমান বলেন, বাণিজ্য মেলার প্রতিবছরই কারাপন্যের একটি স্টল থাকে। কারাগারে থাকা কয়েদীদের হাতে তৈরি পণ্য এখানে প্রদর্শন করা হয়। আমার এ প্যাভিলিয়ন নির্মাণ শেষ পর্যায়ে আশা করি উদ্বোধনের আগেই আমরা এ প্যাভিলিয়নের কাজ শেষ করতে পারবো।
জারিন ফ্যাশনের ইনচার্জ রনি বলেন, আমরা প্রথমবারের মতো বাণিজ্য মেলার স্টল নিয়েছি। আমাদের স্টলটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ হিসেবে নিয়েছি। আমরা এখানে দেশীয়, ভারতীয় থ্রিপিছ ও পাকিস্তানি থ্রি-পিছ বিক্রি করবো। আমাদের স্টলের নির্মাণ কাজ ৮০ ভাগ সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাকি কাজ আমরা শিগগিরই শেষ করতে পারবো বলে আশা করছি।
অলিম্পিক প্যাভিলিয়নের ইনচার্জ সেলিম বলেন, ৮০ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মাণ হচ্ছে অলিম্পিক বিস্কুট কোম্পানির প্যাভিলিয়নটি। উদ্বোধনের আগে নির্মাণ কাজ শেষ হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখনও বলা যাচ্ছে না নির্বাচনের কারণে মেলা পেছানো হয়েছে। তাই কাজও পরে শুরু করতে হয়েছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো উদ্বোধনের আগে নির্মাণ কাজ শেষ করতে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বলেন, উদ্বোধনের আগে ৮০-৯০ ভাগ স্টল নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আমরা আশা করছি। মেলার ভেতরে ও বাইরে দর্শণার্থীদের নিরাপত্যার জন্য ৪-৫ পুলিশ ফোর্স মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া মেলার ভেতরে আমাদের নিজস্ব নিরাপত্যাকর্মী মোতায়েন থাকবে। পুরো মেলা জুড়ে প্রায় ৩০০ সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।