০৩ মে ২০২৪, শুক্রবার, ০৬:৪১:২৭ অপরাহ্ন
অর্থসংকটে বড় কাটছাঁট আসছে এডিপিতে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-১২-২০২৩
অর্থসংকটে বড় কাটছাঁট আসছে এডিপিতে

অর্থসংকটে পড়েছে সরকার। কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় না হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে প্রতিনিয়ত ধার করে মেটানো হচ্ছে অপরিহার্য ব্যয়।


সেই সঙ্গে নগদ টাকা ছাপিয়েও খরচ মেটানোর চেষ্টা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে চলতি অর্থবছরের জন্য অনুমোদিত বিশাল বরাদ্দের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বড় কাটছাঁটের পরিকল্পনা করছে সরকার। এ জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশন। নীতিমালায় বিভিন্ন কৌশলে কড়াকড়ি আরোপ করে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত করে আনা হচ্ছে। নীতিমালাটি এমনভাবে করা হয়েছে, যাতে ক্ষুদ্র, অপেক্ষাকৃত কম দরকারি ও ধীরগতির প্রকল্প, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের একই ধরনের প্রকল্প, এনজিওগুলোর সঙ্গে যৌথ প্রকল্পসহ আরও বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রকল্প এডিপি সংশোধনকালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাদ পড়ে যায়।


চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। এ ছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয় ১১ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকার এডিপি। সব মিলিয়ে এডিপির আকার ধরা হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯৪ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা আসবে ঋণ ও অনুদান থেকে। বাকিটা স্থানীয় মুদ্রায় খরচের পরিকল্পনা আছে। কিন্তু জনতুষ্টির এই এডিপি শেষ পর্যন্ত থাকছে না। সংশোধিত এডিপিতে ব্যাপক কাটছাঁট করে বরাদ্দ অনেক কমিয়ে আনা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে নীতিমালার আলোকে কত টাকা কাটছাঁট করা যাবে, তা এখনো নিশ্চিত নন সংশ্লিষ্টরা।


জানা গেছে, এডিপি সংশোধনের নীতিমালাটি এরই মধ্যে সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের কাছে পাঠানো হয়েছে, যাতে তারা নীতিমালার আলোকে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্প ও বরাদ্দের প্রস্তাব পাঠায়। নীতিমালায় দ্রুত এবং নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য, দারিদ্র্য নিরসন, কর্মসংস্থান উপযোগী কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি সহায়ক, বিদ্যুৎ-জ্বালানিবিষয়ক, প্রযুক্তি, জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলাসংক্রান্ত প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন মূলত সীমিত সম্পদের প্রসঙ্গটি সামনে এনে এডিপি কাটছাঁটের নীতিমালায় এসব কড়াকড়ি আরোপ করেছে।


জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজকে না করলে তেমন কোনো ক্ষতি হবে না, এমন প্রকল্প বাদ দিতে হবে। আমাদের সম্পদ সীমিত বলেই আমরা দরকারি প্রকল্পের কথা বলছি। অদরকারি প্রকল্প তো আমরা নেব না। বেশি মানুষের উপকার হয়—এমন প্রকল্পই আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’


পরিকল্পনা কমিশনের তৈরি করা নীতিমালার বিভিন্ন অংশে একাধিকবার কৃচ্ছ্রসাধনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হয়, নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের জন্য আগে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, ওই অর্থ থেকেই প্রকল্প প্রস্তাব করতে হবে। বাড়তি অর্থ চাওয়া যাবে না। শুধু অনুমোদিত প্রকল্পই বরাদ্দের জন্য বিবেচনায় নিতে হবে। এমনকি এডিপি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমস বা এএমএসে অন্তর্ভুক্ত না থাকলে কোনো নতুন অনুমোদিত প্রকল্পের জন্যও অর্থ চাওয়া যাবে না।


আবশ্যিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে—এমন প্রকল্প চিহ্নিত করে, প্রয়োজনে ধীরগতির প্রকল্প অথবা অন্য কোনো প্রকল্পের বরাদ্দ চাহিদা কমিয়ে এসব প্রকল্পে অর্থ সংস্থান করতে বলা হয়েছে নীতিমালায়। ঋণ-অনুদানের প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ বা ইআরডি যে নির্ধারিত বরাদ্দ ঠিক করে দেবে, সেটাই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। অনুমোদিত নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হলে প্রথম বছর শুধু ওই খাতেই অর্থ বরাদ্দ ও প্রকল্প শুরুর অত্যাবশ্যক কাজের চাহিদা দেওয়া যাবে। এর বাইরে নয়। জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলাসংক্রান্ত প্রকল্প অগ্রাধিকার পাবে। যেসব স্থানের প্রকল্পে পরিবেশগত সংকট তৈরি করার ঝুঁকি রয়েছে, সে ক্ষেত্রে পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা মেনে প্রস্তাব দিতে হবে।


এডিপিতে কাটছাঁটের এমন পরিকল্পনার বিষয়ে কৃষি অর্থনীতিবিদ ও শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পোভার্টি স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুল হক কাজল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বড় কাটছাঁটের ফলে প্রবৃদ্ধির ওপরে কিছুটা প্রভাব পড়বে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে অর্থনীতি কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালে পরের বছর প্রবৃদ্ধি আবারও স্বাভাবিক হবে। আর প্রকল্পে খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষি উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়, এমন প্রকল্পে অগ্রাধিকার এই সংকটময় সময়ে অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।’


শেয়ার করুন