২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১০:২৩:৩৬ অপরাহ্ন
এখনই সময় ॥ গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০১-২০২৪
এখনই সময় ॥ গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরানোর

হঠাৎ পাল্টে গেছে রাজধানীর গণপরিবহন চিত্র। উত্তরা-মতিঝিল লাইনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মেট্রোরেল সার্ভিস চলাচলের ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছেন শত শত যাত্রী। অন্যদিকে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে বাস সার্ভিসে। ফলে শুধু মতিঝিল-মিরপুর নয়, উত্তরার বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন রুটের বাসগুলোতে তীব্র যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। তাই ব্যবসায় ক্ষতি সামলাতে বাস সংস্কার করা ও সিটিং সার্ভিসসহ যাত্রীবান্ধব বাস সার্ভিস চালুর কথা ভাবছেন মালিকরা। তবে গণপরিবহন ব্যবস্থায় স্বেচ্ছাচারিতা দূর করে শৃঙ্খলা ফেরাতে এখনই উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল লাইনে মেট্রোরেল সার্ভিসে প্রতিদিন বাড়ছে যাত্রীদের চাপ। 

গত শনিবার উত্তরা থেকে মতিঝিল মেট্রোরেল চলাচল করছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। যাত্রীদের আস্থার প্রতীকে পরিণত হয়েছে ঢাকার প্রথম মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন-৬)। যানজট ও পরিবহন সংকটসহ সড়কের নানা ঝক্কি এড়াতে মেট্রোরেলে বাড়ছে যাত্রীর চাপ। অন্যদিকে যাত্রী সংকটে পড়ছে মতিঝিল থেকে উত্তরা ও মিরপুরে যাতায়াতকারী বাসগুলো। মেট্রোরেলের কল্যাণে বাস এড়াতে পেরে স্বস্তি পেয়েছেন যাত্রীরা। কিন্তু বাসমালিকরা বিপাকে পড়েছেন। তারা বলছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে যাত্রীসেবা উন্নয়নে মনোযোগ দেবেন।

২০২২ সালের ২৯ ডিসেম্বর উত্তরা-আগারগাঁও অংশে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রী পরিবহন শুরু করে মেট্রোরেল। গত বছর ৪ নভেম্বর থেকে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে মেট্রোরেল চলাচল আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগে মতিঝিল পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা চলাচল করলেও গত ২০ জানুয়ারি পর সকাল ৭টা ১০ মিনিট থেকে রাত ৮টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলাচল করছে মেট্রোরেল সার্ভিস। বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ যাত্রী মেট্রোরেলে চলাচল করছে বলে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা জানান। 



প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণার উল্লেখ করা হয়, মেট্রোরেলের যাত্রীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৯ দশমিক ৪১ শতাংশ আগে পাবলিক বাস ব্যবহার করতেন। জরিপে অংশ নেওয়া ১৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ যাত্রী মেট্রোরেল চালুর আগে যাতায়াত করতেন সিএনজিচালিত অটোরিক্সায়, ৬ দশমিক ৮০ শতাংশের বাহন ছিল মোটরসাইকেল, রিক্সার যাত্রী ছিলেন ৫ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ ছাড়া ৪ দশমিক ৫১ শতাংশ প্রাইভেটকার, ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ রাইড শেয়ারিং সেবায় প্রাইভেটকার বা মোটরসাইকেল এবং ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ যাত্রী অন্যান্য যানবাহন ব্যবহার করতেন।

যাত্রীরা জানান, রাজধানীর বাসগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। সেখানে মেট্রোরেল বড় ধরনের স্বস্তি বয়ে এনেছে। হরতাল-অবরোধেও মেট্রোতে চলাচল সম্পূর্ণ নির্বিঘœ। ফলের বাসের যাত্রীরা ঝুঁকে পড়েছেন মেট্রোরেলে। লাইনে তাই মিরপুর-মতিঝিল রুটে চলাচলকারী বাসগুলো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যাত্রীসংকট কারণে বাস চলাচল অর্ধেকে মেনে এসেছে বলে মালিকরা জানান।


সরজমিন মতিঝিল-মিরপুরের রুটের বিভিন্ন বাসে ঘুরে দেখা গেছে, সকালের দিকে বেশির ভাগ স্ট্যান্ডে যাত্রীদের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকছে বাসগুলো। আগে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বরে যাত্রীদের যে চাপ ছিল, তা এখন নেই। একসময় ১০ নম্বর গোলচত্বরে আসার আগেই বাস যাত্রীকে পূর্ণ হয়ে যেত। এখন ১০ নম্বর গোলচত্বরেও যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল বাসগুলোকে। সে তুলনায় মেট্রোরেলের স্টেশনগুলোতে যাত্রীর চাপ আগের চেয়ে বেড়েছে।

বাসে অপেক্ষারত যাত্রী ও বাসচালকদের সহযোগীদের সঙ্গে কথা হয়। তারা বলছেন, সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত অফিসগামী যাত্রীদের ভিড় থাকে। তবে মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর থেকে বাসে যাত্রী কম। যাত্রীর জন্য বাসগুলোকে দীর্ঘক্ষণ স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। যাত্রী খরায় বেশি ভুগছে মিরপুর থেকে মতিঝিলগামী বাসগুলো। সে তুলনায় মিরপুর থেকে সাভার, গাজীপুর, নিউমার্কেট কিংবা বাড্ডাগামী বাসগুলোকে যাত্রীর জন্য বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায়নি। বিকল্প পরিবহনের একটি বাসের চালকের সহকারী সালাম মিয়া বলেন, ‘সকালে এখন যাত্রী কম থাকে। আগে লোকাল যাত্রী বেশি উঠলেও এখন সিটিং সার্ভিসের যাত্রী বেশি।’



মতিঝিল এলাকায় বেশির ভাগ বাস দেখা গেছে ফাঁকা। দুই একটি বাসে কিছু যাত্রী তাও গুলিস্তান সায়েন্সল্যাব ও ধানমন্ডি রুটের। মিরপুর রুটে বাসের যাত্রী নেই বললেই চলে। যাত্রী সংকটের কারণে মিরপুর রুটের বিকল্প অটো পরিবহন মতিঝিল বাদ দিয়ে গুলিস্তান হয়ে যাত্রাবাড়ী রুটে চলাচল করছে। এ ছাড়া যাত্রাবাড়ী-মিরপুর রুটের শিকড় পরিবহন, বিজয় পরিবহন ও ট্রান্সসিলভা পরিবহনে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে। এ সব বাসে যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান ও পুরানা পল্টনসহ লোকাল যাত্রী বেশি উঠছে।


মিরপুরের যাত্রী হচ্ছে না বলে বাস চালকরা জানান। শিকড় পরিবহনে রবিন নামের এক যাত্রী বলেন, ‘মেট্রোরেল চালু হওয়া বাসের যাত্রী কমে গেছে। এখন অনেক যাত্রী ট্রেনের চলাচল করে। মেট্রো আসায় বাসওয়ালাদের উচিত শিক্ষা হইছে। আগে আমাদের জিম্মি করত এরা। এখন যাত্রী পায় না।’

চ্যালেঞ্জের মুখে বাস মালিকরা ॥ এই পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বলে জানান বাসমালিকরা। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলাতে তারা পরিকল্পনা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন। বাস সংস্কার করা, সিটিং সার্ভিস চালুসহ যাত্রীবান্ধব বাস সার্ভিস দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করার কথা ভাবছেন তারা। এ বিষয়ে বিকল্প অটো পরিবহনের মালিক এবং সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, ‘মেট্রোরেল চালুর ফলে বাস যাত্রী অর্ধেকে মেনে এসেছে। যাত্রী সংকটের কারণে মতিঝিল রুট পরিবর্তন করে যাত্রাবাড়ী নেওয়া হয়েছে।


শেয়ার করুন