অভিযানের পরও চট্টগ্রামে কমছে না চালের দাম। আগের মতোই অস্থির বাজার। সব ধরনের চালের দামই কেজিতে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের পাইকারি বাজারখ্যাত চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ ও পাহাড়তলী বাজারে প্রতি বস্তা চালের দাম বেড়েছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। কেজিপ্রতি ৬২ টাকার নিচে কোনো চালই পাওয়া যাচ্ছে না। মিলাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ পাইকারদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চালের দাম বাড়ার অন্যতম কারণ মিলার ও ব্যবসায়ীদের কারসাজি। তারা বাজারে চাল বিক্রি করছে না। নগরীর বিভিন্ন স্থানে বিশাল বিশাল শেড তৈরি করে চালের মজুত গড়ে তুলছেন মিলাররা। ফলে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। আর হু হু করে বাড়ছে দাম।
খাদ্য অধিদপ্তর খোলা বাজারে চাল বিক্রি (ওএমএস) এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিম্ন আয়ের মানুষদের মাঝে কম দামে চাল বিক্রি করছে। এরপরও বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না। জি-টু-জি’র আওতায় বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা হলেও দামের ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ছে না।
সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে বড় বড় চালের মিলার ও চাল ব্যবসায়ী রয়েছেন। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী মিলার ও ব্যবসায়ীরা কত টন চাল কত দিন মজুত রাখতে পারবেন তার সীমা রয়েছে। চাল ব্যবসায়ীরা এসব তোয়াক্কা করছেন না। নগরীতে চাল ব্যবসায়ীদের তালিকা রয়েছে। তালিকা ধরে ধরে জেলা প্রশাসন ও খাদ্য বিভাগ অভিযান পরিচালনা করে। ফলে চাল ব্যবসায়ীরা বেশি অনিয়ম করে নিজেদের রক্ষা করতে পারেন না। এসব কারণে এখন নগরীর বাইরে হাটহাজারী, ফটিকছড়ির ঝংকার মোড়, সাতকানিয়ার কেরানী হাট, লোহাগাড়ার পদুয়া ও দরবেশ হাট এলাকায় চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বড় বড় শেড তৈরি করে অবৈধভাবে চালের মজুত গড়ে তুলছেন। ফলে খাদ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নজর এড়ানো সম্ভব হচ্ছে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের মোকামগুলো চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। একদিকে চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে অন্যদিকে সরবরাহ কমিয়ে দিচ্ছে। ফলে বাজারে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
সরকারি পর্যায়ে রেকর্ড মজুতের পাশাপাশি আমনের ভরা মৌসুমে সংকট না থাকলেও কারসাজির মাধ্যমে অস্থির করে তোলা হয়েছে দেশের চালের বাজার। নির্বাচনের পরপরই সাত দিনে প্রকারভেদে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত। বিশেষ করে ৫০ কেজির প্রতি বস্তা নূরজাহান ২০০ টাকা, সিদ্ধ মিনিকেট আড়াইশ টাকা এবং দেশি বেতির দাম বস্তায় ৩৫০ টাকা বেড়েছে।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, এ সময় চালের দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। আমনের ভালো ফলন হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে চালের যথেষ্ট আমদানি রয়েছে। ১৫ দিন আগেও পাইকারিতে সিদ্ধ চালের মধ্যে প্রতি বস্তা জিরাশাইল ছিল ৩ হাজার ১০০ টাকা, পাইজাম ২ হাজার ৬০০ টাকা, নূরজাহান ২ হাজার ৪০০ টাকা, মিনিকেট ২ হাজার ৪০০ টাকা, ভিয়েতনাম বেতি ২ হাজার ৩৫০ টাকা এবং দেশি বেতি ২ হাজার ৫০০ টাকা। সোমবার প্রতি বস্তা জিরাশাইল ৩ হাজার ৪০০ টাকা, পাইজাম ২ হাজার ৭৫০ টাকা, নূরজাহান ২ হাজার ৭০০ টাকা, মিনিকেট ২ হাজার ৯০০ টাকা, ভিয়েতনাম বেতি ২ হাজার ৬৫০ টাকা এবং দেশি বেতি ২ হাজার ৯০০ টাকায় উঠে গেছে। সিদ্ধ চালের মতো আতপ চালের ক্ষেত্রেও ৩ হাজার ১০০ টাকার কাটারি হয়েছে ৩ হাজার ৪৫০ টাকা, ২ হাজার ৮০০ টাকার মিনিকেট ৩ হাজার টাকা এবং ৩ হাজার ৫০০ টাকার নাজিরশাইল ৩ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে চিনিগুঁড়া চালের দাম প্রতি বস্তা ৭০০ টাকা বেড়ে উঠে গেছে ৬ হাজার ৬০০ টাকায়। আবার অনেক মিলার সরকারের সঙ্গে চাল সরবরাহের চুক্তি করলেও চাল দিচ্ছে না। ফলে চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণেও বাড়ছে দাম। চাক্তাইয়ের চাল ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম সোহাগ যুগান্তরকে বলেন, শুধু নগরীর ভিতরে অভিযান পরিচালনা করলে হবে না। চাল ব্যবসায়ীরা এখন নানা কৌশলে চালের মজুত গড়ে তুলছে। তারা নগরীর বাইরে বিভিন্ন উপজেলায় বিশাল বিশাল চালের গুদাম নির্মাণ করে অবৈধভাবে মজুত করছেন।