২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০২:২৩:৪৭ পূর্বাহ্ন
সংসদে জিএম কাদেরের কথায় ওবায়দুল কাদেরের উষ্মা
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০১-২০২৪
সংসদে জিএম কাদেরের কথায় ওবায়দুল কাদেরের উষ্মা

দ্বাদশ সংসদের অধিবেশন শুরুর দিন বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের স্পিকারকে ধন্যবাদ দিতে দাঁড়িয়ে যেভাবে সংসদের ‘ভারসাম্য’ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।


বুধবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “সংসদ ভারসাম্যপূর্ণ না হলে তিনি কেন এলেন, আবার তিনি সংসদে যা বলার একাই বললেন।”


গত দুই সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবার একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে মাত্র ১১টি আসন নিয়ে। আওয়ামী লীগের ২২৩টি আসনের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিপরীতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬২ আসন পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, যাদের বেশিরভাগই আবার আওয়ামী লীগের।


সে বিষয়ে ইংগিত করেই মঙ্গলবার দ্বাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশনে কথা বলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, যিনি এবার সংসদে বিরোধী দলীয় নেতার আসন পেয়েছেন।


স্পিকার নির্বাচনের পর শিরীন শারমিন চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানাতে গিয়ে জিএম কাদের বলেন,“সংসদ সদস্যের সংখ্যার বিচারে বর্তমান সংসদে ভারসাম্য রক্ষা হয়নি। আসন সংখ্যার বিচারে এবার সংসদে শতকরা ৭৫ ভাগই সরকার দলের। স্বতন্ত্র ২১ ভাগ। তারাও প্রায় সরকার দলীয়।


“৩-৪ ভাগ শুধু বিরোধী দলীয় সদস্য। এ সংসদে সম্পূর্ণ জাতিকে খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। এ সংসদ কখনো নিখুঁতভাবে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে না।”


এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান যেভাবে ওই বক্তব্য দিয়েছেন, সেটা ‘নিয়মের লঙ্ঘন’।


“গতকাল কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে কথা বলেননি, আমি আনুষ্ঠানিকতা একটু বলেছি। যা বলার তো জিএম কাদেরই বলেছেন। উনি স্পিকারকে ধন্যবাদ দেওয়ার নামে সংসদে ফ্লোর নিয়ে যে কথা বলেছেন, সেটা গতকাল বলা তার উচিত হয়নি।”


ওবায়দুল কাদের বলেন, “স্পিকারকে ধন্যবাদ দেওয়ার নামে শুরুতেই উনি ফ্লোর নিয়ে যে কথা বললেন, মনে হল যে তুলকালাম হয়েছে, লম্বা একটা বক্তব্য দিলেন। বিষয়টা ছিল ধন্যবাদ জানানো, উনাকে লম্বা বক্তব্য দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।


“গতাকল তিনি নিয়ম লঙ্ঘন করে কথা বলেছেন। সামনে তার কথা বলার যথেষ্ট সুযোগ আছে। সংসদে আপনি আসলেন এবং নেতা নির্বাচিত হয়েই আসলেন। কেউ নেতা, কেউ উপনেতা– আনুষ্ঠানিকতা মেনেই তো সংসদে আসলেন।”


জাতীয় পার্টিকে নিয়ে কটাক্ষ করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “স্বাধীনতার পর এদেশে একজন শুধু বিরোধীদলের নেতা ছিলেন, এখন নেতা, উপনেতা। এখনতো তারা এগারো জন, সেটা ফুটবল টিম বা ক্রিকেট টিম, যাই হোক, আর এভাবে বলা ঠিক হবে না।”


সংবাদ সম্মেলনে সংরক্ষিত নারী আসনের নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা ওবায়দুল কাদের।


তিনি বলেন, সংসদে আসন সংখ্যার অনুপাতে আওয়ামী লীগ ৩৮টি সংরক্ষিত নারী আসন পাবে। আর স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা সবাই মিলে ৪৭ বা ৪৮টি আসন পাবে।


“আমরা সংরক্ষিত আসনে মনোনয়নে পরীক্ষিত ত্যাগীদের গুরুত্ব দেব। সংরক্ষিত আসন পঞ্চাশের মধ্যে আমাদের সদস্য সংখ্যার সঙ্গে স্বতন্ত্রদের পক্ষ থেকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।


এখানে মনোনয়ন চাওয়া ও ফরম নেওয়ার যে হিড়িক, সে তুলনায় দেওয়ার সংখ্যা তো খুবই কম। পরীক্ষিত ত্যাগীদের গুরুত্ব দেব। যারা দুঃসময়ের পরীক্ষিত বন্ধু তাদের ব্যাপারটা অগ্রাধিকার দেব।”


নির্বাচনের পর যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে যে সমালোচনা করা হয়েছিল, সে বিষয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা দেখলাম, নির্বাচনের ফলাফলের পর যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, তিনি প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।


পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল অধিবেশনে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত ছিলেন। কোনো দেশের গণতন্ত্র ত্রুটিমুক্তি নয়। আমরাও সম্পূর্ণভাবে ত্রুটি মুক্তি নই।”


মঙ্গলবার সংসদ অধিবেশন বসার দিন ভোট বর্জন করা বিএনপির কালো পতাকা মিছিলে পুলিশের বাধা নিয়েও ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।


জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বিএনপির কালো পাতাক মিছিল ছিল অবৈধ। পুলিশের অনুমতি নেয়নি সেটাও অনিয়ম। আপনি যখন তখন ফ্রি স্টাইল কর্মসূচি নেবেন এটা হতে পারে না। নির্বাচনে অংশ নেননি এটা ভুল করেছেন। এখন কালো পতাকা মিছিল করছেন।


“কালো পতাকার প্রশ্ন কেন আসবে? আজকে দেশি-বিদেশি স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষী তাদের বন্ধু রাষ্ট্র, নির্বাচনের আগে তারা বিভিন্নভাবে একটা দেশের ক্ষমতাসীনদের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছে। নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতির মত কিছু বিষয় বার বার দেখেছি।”


ওবায়দুল কাদের বলেন, “তাদের কালো পতাকা, কালো ব্যাজের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই। পুলিশকে অমান্য করে তাদের দম্ভোক্তি শুনেছি- ‘আমরা আর অনুমতি নেব না’। অনুমতি না নিয়ে রাজপথে ফ্রি স্টাইলে করবে, আর আমরা চুপচাপ বসে থাকব, এটা হবে না।”


অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজি, মারুফা আক্তার পপি এসময় উপস্থিত ছিলেন।

শেয়ার করুন