তানোর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ৮ মে। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন, বর্তমান চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না এবং তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। এই দু’জনের মধ্যে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী সমর্থন দিয়েছেন ময়নাকে। ময়না এমপির দুঃসম্পর্কের ভাতিজা বলেও গোটা উপজেলা জুড়ে পরিচিত। গত ১৫ বছরে এই ময়না এমপির দোহায় দিয়ে উপজেলা জুড়ে চালিয়েছেন ব্যাপক বাণিজ্য। স্কুল-কলেজ হাট-ঘাট থেকে শুরু করে এমন কোনো প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে এমপির নামে ময়নার বাণিজ্য চলেনি। ফলে নির্বাচন এলেই ময়নার দাপট আরও বেড়ে যায়। এবারওে তার ব্যতিক্রম হয়নি। এমপি সমর্থন দিয়েছেন বলে ময়না দলীয় প্রার্থী হিসেবে নিজেকে যেমন পরিচয় করে দিচ্ছেন, তেমনি তাঁর সমর্থকরাও একই কথা বলে বেড়াচ্ছেন। আর নির্বাচনী মাঠেও নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে যাচ্ছেন তারা।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের যেসব নেতাকর্মী মামুনের পক্ষে কাজ করছেন, তাঁদেরকেউ এমপি ফারুক চৌধুরী এবং ময়না ও তাঁদের লোকজন নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এ নিয়ে তাঁদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ উত্তেজনা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এমন অবস্থা শুধু তানোর উপজেলাতেই নয়, রাজশাহীর যেসব উপজেলায় নির্বাচনী তফশিল ঘোষণা হয়েছে, সেসব উপজেলাতেই স্থানীয় এমপি সমর্থিতরা আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচার চালানো হচ্ছে। আর কোণঠাসা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বি অন্য প্রার্থীদের।
তানোরে আরেক প্রার্থী মামুনকে সমর্থন দিচ্ছেন গত সংসদ নির্বাচনে এমপি ওমর ফারুকের সঙ্গে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে হেরে যাওয়া প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানী। গোলাম রাব্বানী অভিযোগ করে বলেন, ‘এমপি মনে করেন তিনি একাই আওয়ামী লীগ করেন। আর আমরা যারা আজীবন আওয়ামী লীগ করে আসছি, তাঁরা সব জলে ভেসে আসা নেতাকর্মী। কিন্তু তিনি যে আওয়ামী লীগে ভেসে আসা নেতা, সেটি এথন আর মানতে চান না। তাই তিনি দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে লূৎফর হায়দার রশিদ ময়নাকে সমর্থন দিচ্ছেন। তাঁর পক্ষে থাকতে নেতাকর্মীদের নানাভাবে হযমকি-ধমকিও দেওয়া হচ্ছে। অথচ এই ময়নার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নাই। তাঁকে দলের নেতাকর্মীরা চাচ্ছেন না।’
তবে ময়না দাবি করেন, এমপি ওমর ফারুক তাঁর হয়ে কাজ করছেন না। তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরআ কাজ করছেন। তিনি নিজেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবেও কোথাও পরিচয় দিচ্ছেন না।’
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলাতেও আগামী ৮ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখানেও এমপি বর্তমান চেয়ারম্যান ও বিতর্কিত নেতা জাহাঙ্গীর আলমকে সমর্থন দিচ্ছেন। জাহাঙ্গীরকে বলা হচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী। অন্যদিকে বেলাল উদ্দিন সোহেলকে বলা হচ্ছে বিদ্রোহী প্রার্র্থী। সোহেলের বিরুদ্ধেও মাদক কারবারিতে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত মাদক কারবারি। তবে গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমপির সমর্থনপূষ্ট হয়ে দলীয় নৌকা প্রতীকও বাগিয়ে নিয়ে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন এই সোহেল। সেখান থেকে পদত্যাগ করে এখন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এ উপজেলার প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা বদিউজ্জামান রবু বলেন, এমপি যেহেতু জাহাঙ্গীরকে সমর্থন দিয়েছেন, তাই তিনি দলীয় প্রার্থী হিসেবে নিজেকে পরিচয় করে দিচ্ছেন।’
এদিকে, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মধ্যে স্থানীয় এমপি আবুল কালাম আজাদ সমর্থন দিচ্ছেন উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান জাকিরুল ইসলাম সান্টুকে। এখানে বিদ্রোহী হিসেবে ধরা হচ্ছে আরেক প্রার্থী আব্দুর রাজ্জাককে। সান্টুর পক্ষে দলীয় সভা করে তাঁকে একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। সেই সভায় এমপি নিজেই উপস্থিত ছিলেন। দলীয় নির্দেশনা উপেক্ষা করে জাকির হোসেন সান্টুকে প্রার্থী ঘোষণা করার পরে এমপি আবুল কালাম আজাদ তাঁর হয়ে অনেকটা প্রকাশ্যে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ আছে।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জাকিরুল ইসলাম সান্টুর জন্য দলের সব নেতাকর্মী কাজ করছেন। আমি কোনো কাজ করছি না।’
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নিজেকে পরিচয় করাচ্ছেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শরিফুল ইসলাম। তাঁকে এমপি স্থানীয় এমপি ও পল্লী কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা সমর্থন দিচ্ছেন। আর সে কারণে অনেকটা ভয়ভীতি দেখিয়ে দলের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও কাছে টানার চেষ্টা করছেন শরিফ। এ নিয়ে এখানে দলের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা। আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘জোট সরকারের আমলে আমি নির্যাতনের শিকার হয়ে এখনো পঙ্গু হয়ে আছি। অথচ আমার হয়ে কাজ না করে এমপি সমর্থন দিয়েছেন শরিফকে। দুইদিন আগে রাজনীতিতে আসা শরিফ সেই দাপটে এলাকার নেতাকর্মীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে কাছে টানার চেষ্টা করছেন। যদিও তাতে কোনো লাভ হবে না।
তবে শরিফ এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এমপি সমর্থন দেতওয়ায় দলের নেতাকর্মীরা এমনিতেই আমার হয়ে কাজ করছেন।’
অপরদিকে পুঠিয়া উপজেলা নির্বাচনে এমপি দারা সমর্থন দিচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম হিরা বাচ্চুকে। ফলে সেখানেও বাচ্চু দলীয় প্রার্থী হিসেবে দলের একটি অংশের নেতাকর্মীরা পরিচয় দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আহসানুল হক মাসুদ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করানো হচ্ছে। এ নিয়ে এখানেও দলের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও উত্তেজনা।
রাজশাহীর বাঘায় স্থানায় এমপি শাহরিয়ার আলম সমর্থন দিয়েছেন সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রোকনুজ্জামান রিন্টুকে। এখানে উপজেলা চেয়ারম্যান রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু। লাভলু শাহরিয়ার বিরোধী হওয়ায় তাঁকে এবারও সমর্থন দেননি শাহরিয়ার। তবে এবার লাভলু নির্বাচনে অংশ নিবেন কি না সেটি এখনো নিশ্চিত করতে পারেননি। এছাড়া এখোনে আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী রয়েছেন পিন্টু। তিনি গত বাঘা পৌরসভা নির্বাচনে আক্কাছ আলীর কাছে পরাজিত হন।