ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে উদ্ধব ঠাকরে পদত্যাগ করেছেন। এতে করে রাজ্যটিতে শিবসেনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।
চলমান রাজনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যেই বুধবার রাতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনার এ নেতা। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর সরকারি ফেসবুক পেজে লাইভ বক্তৃতা দেওয়ার সময়ে নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন উদ্ধব ঠাকরে। মূলত মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে মহারাষ্ট্রের শিবসেনা, কংগ্রেস আর জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির জোট সরকার পতনের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে।
এ ছাড়া এ ঘোষণার সঙ্গেই শিবসেনার অভ্যন্তরে যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তার একটা অধ্যায় শেষ হলো বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য উদ্ধব ঠাকরে পদত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার আগে ভারতীয় সময় রাত ৯টায় সুপ্রিমকোর্ট আদেশ দেয়, বৃহস্পতিবার ঠাকরেকে বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হবে। আদালত এ প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না।
শাসক দলের একটা বড়সংখ্যক বিধায়ক উদ্ধব ঠাকরের বিরোধিতা করায় রাজ্যটির গভর্নর মুখ্যমন্ত্রীকে শক্তি পরীক্ষা দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার বিরুদ্ধেই শিবসেনা সুপ্রিমকোর্টে গিয়েছিল। তবে সেখানে আদেশ তার বিরুদ্ধে যাওয়ার পরেই পদত্যাগ করেন শিবসেনাপ্রধান।
বিবিসির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, শিবসেনা কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল হওয়া সত্ত্বেও কংগ্রেস আর জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে জোট সরকার চালাচ্ছিল। তবে শিবসেনারই এক নেতা একনাথ শিণ্ডের নেতৃত্বে দলের কিছু বিধায়ক চলতি মাসের ২১ তারিখ মুখ্যমন্ত্রী ঠাকরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন।
প্রথমে কয়েক দিন গুজরাটে, তার পর বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আসামের গুয়াহাটিতে কাটিয়ে রাতেই একটি ভাড়া করা বিমানে গোয়ায় পৌঁছিয়েছেন শিন্ডে ও তার সঙ্গী বিধায়করা। প্রথমে বিদ্রোহীদের সংখ্যা ছিল ১১।
তবে শেষমেশ শিণ্ডের দাবি অনুযায়ী, তার সঙ্গে ৫০ জন বিধায়ক রয়েছেন।
তবে মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের কাছে একটি চিঠি দিয়ে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা দেভেন্দ্র ফাডনবীশ দাবি করেছেন, ৩৬ বিধায়ক মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে আর সমর্থন করছেন না। সেই চিঠির ভিত্তিতেই রাজ্যপাল বিধানসভায় শক্তি পরীক্ষার নির্দেশ দেন।
বিদ্রোহী বিধায়ক ও তাদের নেতা একনাথ শিণ্ডের বক্তব্য হচ্ছে— শিবসেনার স্বাভাবিক জোট সঙ্গী ছিল বিজেপি। দুদলের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনাও হিন্দুত্বকে কেন্দ্র করে। আবার তারা সর্বশেষ নির্বাচনেও লড়েছিল জোট বেঁধে।
কিন্তু ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে একমত না হওয়ায় মতাদর্শগতভাবে সম্পূর্ণ বিরোধী মেরুতে থাকা কংগ্রেস আর জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির সঙ্গে জোট বাঁধেন উদ্ধব ঠাকরে। দলকে বিজেপির সঙ্গে ফের জোট বাধার দাবি করছিলেন শিণ্ডে। তার গোষ্ঠীকেই আসল শিবসেনা বলেও দাবি করেন তিনি।