ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ বিষয়ে মন্তব্যের পর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে অপসারণ করতে আন্দোলনে নেমেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন মহল। রাষ্ট্রপতিকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ বলে তার পদত্যাগের দাবিতে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামও দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তবে রাষ্ট্রপতি নিজ থেকে পদত্যাগ না করলে কীভাবে অপসারণ করা হবে, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।
এমন অবস্থায় রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কী ভাবছে, তার ওপর ভিত্তি করে দুয়েক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার।
সম্প্রতি মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জানান, তার কাছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ বা নথিপত্র নেই।
এর প্রতিক্রিয়ায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল গত সোমবার সচিবালয়ে নিজের দপ্তরে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি যে বলেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র পাননি, এটা হচ্ছে মিথ্যাচার এবং এটা হচ্ছে ওনার শপথ লঙ্ঘনের শামিল।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে নতুন করে প্রসঙ্গ তোলা সন্দেহজনক। এটা একটা দুশ্চিন্তার বিষয় যে, কেন হচ্ছে এটা? বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব সেই কারণ খোঁজা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া।
তিনি বলেন, আমরা টিভিতে দেখেছি রাষ্ট্রপতি তিন বাহিনীর প্রধানকে পাশে নিয়ে বলেছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি (রাষ্ট্রপতি) সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। জাতির সামনে তিন বাহিনীর প্রধানকে পাশে দাঁড় করিয়ে এমন কথা বলার পর এ নিয়ে আর কোনো কথা থাকে না। শেখ হাসিনাও এক টেলিফোন কনভারসেশনে নিজে বলেছেন, যেভাবে পদত্যাগ করার কথা আমি সেভাবে পদত্যাগ করিনি। অর্থাৎ পদত্যাগ করেছেন তিনি। যিনি পালিয়ে যান, তার পদত্যাগ করা বা না করায় কী আসে যায়। রাষ্ট্রপতি এসব বলেন কীভাবে?’
গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান অভিভাবক। কিন্তু তার ভূমিকা রাজনৈতিক ও নৈতিক স্খলনের শামিল। এমনকি শপথ লঙ্ঘনের শামিল। আমরা মনে করি তার এ পদে থাকা উচিত নয়।
সংবিধান বাতিলের দাবির বিষয়ে বলেন, সংবিধান বাতিল করার কোনো সুযোগ নেই। কারণ বর্তমান যে সরকার রয়েছে তারাও কিন্তু এ সংবিধান মেনেই শপথ নিয়েছিলেন। তারা যদি সংবিধান বাতিল করেন তাহলে এ সরকারও শপথ ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন।
বাম গণতান্ত্রিক জোট ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (মার্ক্সবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেন, আমরা মনে করি এটি মীমাংসিত বিষয়। গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন এবং পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। শপথ গ্রহণ করে উপদেষ্টারা দায়িত্ব নিয়েছেন। আমরা মনে করি অন্তর্র্বর্তী সরকার ও রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব হবে সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। সংস্কারের বিষয়ে একমত হয়ে নির্বাচনে যাওয়াটা জরুরি মনে করি।
তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানকে একটা মুজিববাদী সংবিধান হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। আমরা এ সংবিধানের সমালোচনা করি। তবে এটাও মীমাংসিত সত্য যে, বাহাত্তরের সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধের আকাঙক্ষাও রয়েছে। ফলে এটাকে এক কথায় বাতিল করা নিয়েও আমাদের আপত্তি রয়েছে।