সারাদেশের মতো রাজশাহীর তানোরেও ঘূর্ণিঝড় ‘দানার’র কিছুটা প্রভাব দেখা দিয়েছে। এর ফলে আমনের পাঁকা ধানগাছ নুয়ে পড়েছে এবং শীতকালীন আগাম শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের রবিশস্যে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৩ অক্টোবর রাত থেকে শুরু হওয়া হিমেল হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টির কারণে শনিবার সকালে বিভিন্ন ফসলের মাঠে ক্ষতির দৃশ্য দেখা যায়। কৃষকরা তাদের আমনখেতে গিয়ে দেখেন ধানগাছ মাটিতে পড়ে গেছে, যার ফলে জমিতে পানি জমে গেছে এবং পঁচন ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ শুরু হয়েছে। কৃষি বিভাগ এ বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে পারেনি।
পাঁচন্দর ইউপির কৃষক আবুল হোসেন জানান, তিনি ৫ বিঘা জমির পাঁকা ধান শুকানোর জন্য কেটে রেখেছিলেন। দুই দিন ধরে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিতে তার জমিতে পানি জমেছে, ফলে ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। তিনি কৃষি কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করতে গিয়ে হতাশার কথা জানান।
অন্যদিকে, কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, “গত বছর আমন ধানের ভালো দাম পাইনি, তাই এবারে আমি হতাশায় ছিলাম। আগামী সপ্তাহ থেকে আমার ১০ বিঘা জমির ধান কাটা শুরু হবে, কিন্তু হঠাৎ ঝড়-বৃষ্টিতে বেশিরভাগ ধানগাছ মাটিতে শুয়ে পড়েছে।”
এছাড়া, শীতকালীন আগাম শাক-সবজিতে বৃষ্টির পানি জমে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক কৃষক জমি চাষ করে বিপদে পড়েছেন। কৃষক আয়ুব আলী ও আবদুল বারী বলেন, “বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় ইতোমধ্যে চরম ক্ষতি হয়ে গেছে। আগে ১ একর জমিতে প্রায় ৫০ মণ ধান পাওয়া যেত, এখন ৩০ মণ হবে কিনা সন্দেহ।”
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ২২ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমি। এর মধ্যে হাইব্রিড ২৮ হেক্টর, উফশী জাত ২২ হাজার ১১৭ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের চাষ হয়েছে ৫৫০ হেক্টর।
স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত স্বশিক্ষিত কৃষি বিজ্ঞানী নুর মোহাম্মাদ জানান, রোপা-আমন ধান রোপনে শুরুতে কৃষকদের প্রচুর বেগ পেতে হয়েছে। এখন বৃষ্টি-ঝড়ো হাওয়ায় নুয়ে পড়েছে আমনের খেত, যা উৎপাদনে কিছুটা হ্রাস করবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ জানান, ঘূর্ণিঝড় ‘দানার’ প্রভাব নয়, নিচু এলাকায় বাতাসে আমন ধানের গাছ পড়ে গেছে। তবে কৃষি বিভাগ সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আশা করা হচ্ছে শিগগিরই এ দুর্যোগ কেটে যাবে।