২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, সোমবার, ০৮:৩০:২৮ পূর্বাহ্ন
পিএম অফিসের একক ক্ষমতাই দুর্নীতির অন্যতম কারণ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-১২-২০২৪
পিএম অফিসের একক ক্ষমতাই দুর্নীতির অন্যতম কারণ

‘রাজনীতিবিদ, আমলা ও ব্যবসায়ী- এই তিন পক্ষের যোগসাজশেই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতি হয়েছে। আওয়ামী লীগের শাসনামলে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিনিময় ছাড়া কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপিত হয়নি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও পিএম অফিসের একক ক্ষমতার কারণেই এসব দুর্নীতির বিস্তার হয়েছে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করা হলে দুর্নীতি কমানো সম্ভব।’


শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর এফডিসিতে ‘বিগত সরকারের আমলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতের দুর্নীতি’ নিয়ে আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম. তামিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।


অধ্যাপক ড. ম. তামিম বলেন, ‘এস আলম ও সামিট গ্রুপের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি অনুসন্ধানে ফরেনসিক স্ক্রুটিনি প্রয়োজন। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) দেশের সবচেয়ে অস্বচ্ছ একটি প্রতিষ্ঠান। এই অস্বচ্ছতার পেছনে বিগত সরকারের স্বার্থ জড়িত ছিল। লস দেখিয়ে দেখিয়ে উচ্চমূল্য নির্ধারণের জন্যই প্রতিষ্ঠানটিকে অস্বচ্ছ রাখা হতো। বর্তমান সরকার এসেও এখন পর্যন্ত প্রক্রিয়াটিকে স্বচ্ছ করতে পারেনি।’


তিনি আরও বলেন, ‘তিন দিনের মধ্যে কোনো আলাপ-আলোচনা ছাড়াই তড়িঘড়ি করে আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি করা হয়। আদানির সঙ্গে চুক্তিটি অসম। এক্ষেত্রে শতভাগ ক্যাপাসিটি চার্জ পেমেন্টের পরেও ৪০ ভাগ আরও অতিরিক্ত বিদ্যুতের মূল্য দিতে হয়। এই চুক্তিটি পুনঃবিবেচনা করা দরকার। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে মাফিয়াদের আইনের আওতায় না আনলে মাফিয়াতন্ত্র দমন হবে না। নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন না করে কমিশনের লোভেই এলএনজির দিকে ঝুঁকে পড়া ছিল ভুল উদ্যোগ। জবাবদিহিতাকে এড়ানোর জন্য বিগত সরকার গণশুনানির পরিবর্তে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম নির্ধারণ করত, যা ছিল অস্বচ্ছ।’


সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘ডাকাতরা বাংলাদেশে আর্থিক খাতের মতো জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিল। লুটেরাদের সুযোগ করে দিতে ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিতর্কিত ইনডেমনিটি আইন পাশ করেছিল, যার মেয়াদ দফায় দফায় বাড়িয়ে দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল। বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াও বিতরণ, সঞ্চালন ও মিটার কেনাকাটার নামে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। যাতে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য মিলেছে। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষমতা ও চাহিদা কতটুকু তার কোনো সঠিক হিসাব নেই। গত সাড়ে ১৫ বছরে কোনো দরপত্র ছাড়াই বেসরকারি খাতে শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। যার বেশিরভাগই কোনো কাজে আসেনি। বিগত সরকার সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন না করেই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। ফলে যতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো তা সঞ্চালন লাইনের অভাবে বিতরণ সম্ভব হতো না। তাই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হওয়া সত্ত্বেও লোডশেডিং থেকে আমাদের মুক্তি মেলেনি।’ 


তিনি আরও বলেন, ‘শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুতের আওতায় আনা হয়েছে বলে বিগত সরকার মানুষকে মিথ্যা গল্প শুনিয়েছে। ফেরি করে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলা হলেও বিদ্যুতের ফেরিওয়ালারা এখন জেলে অথবা পলাতক। বিদ্যুতের এমন মিটার বসিয়েছে বাতি না জ্বললেও মিটার ঘোরে। প্রিপেইড মিটারে রিচার্জ করার সঙ্গে সঙ্গে এক-চতুর্থাংশ টাকা মিটার খেয়ে ফেলে। শিল্প কারখানাগুলোতে গ্যাসের পাইপে গ্যাসের পরিবর্তে বাতাস দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিটি সম্পূর্ণ একপাক্ষিক ও দেশবিরোধী। এতে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষিত হয়নি। জনগণকে পাশ কাটিয়ে গোপনীয়ভাবে আদানি গ্রুপের সঙ্গে এই চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়। চুক্তি স্বাক্ষরকারী তৎকালীন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান চুক্তির কপি না দেখেই স্বাক্ষর করেছেন বলে জানা গেছে। আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তি স্বাক্ষরকারী তৎকালীন পিডিবি চেয়ারম্যানকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যাবে কোন প্রেক্ষিতে কাদের চাপে তিনি চুক্তিপত্র না দেখেই এতে স্বাক্ষর করেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আদানির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তিটি প্রকাশ করলে মানুষের মধ্যে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। তবে যেহেতু ভারত থেকে এই বিদ্যুৎ কেনায় বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষিত হয়নি, তাই সরকার এই চুক্তি বাতিলের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে।’


শেয়ার করুন