০৬ মার্চ ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৯:৪২:৫৯ অপরাহ্ন
সমহারে শুল্কনীতি চালু করছেন ট্রাম্প, কতটা বিপদে পড়বে ভারত
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৩-২০২৫
সমহারে শুল্কনীতি চালু করছেন ট্রাম্প, কতটা বিপদে পড়বে ভারত

মার্কিন কংগ্রেসে ভাষণ দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারত, চীন, কানাডা, ইইউ-সহ বেশ কয়েকটি দেশের নাম করে বলেছেন, আমরা ওদের পণ্যের ওপর যে মাসুল বসিয়েছি, তার থেকে অনেক বেশি মাসুল ওরা আমাদের পণ্যের ওপর বসিয়েছে। এটা অত্যন্ত অন্যায্য ব্যবস্থা। 


ট্রাম্প বলেন, ভারত তো আমাদের তুলনায় ১০০ শতাংশের বেশি মাসুল বসিয়ে রেখেছে। চীন দ্বিগুণ মাসুল বসিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার মাসুল চারগুণ বেশি। আগামী ২ এপ্রিল থেকে ওরা যে হারে আমাদের পণ্যের ওপর মাসুল বসিয়ে রেখেছে, আমরাও একই হারে বসাব। ওরা যদি আমাদের পণ্য ওদের বাজারে ঢুকতে না দেয়, তাহলে আমরাও দেব না। ১ এপ্রিল থেকে করছি না, কারণ, মনে হতে পারে, আমি এপ্রিল ফুল করছি, বোকা বানাচ্ছি। তাই ২ এপ্রিল থেকে সম-হারে মাসুল চালু হবে।


ভারতের ওপর কী প্রভাব পড়বে?


রেটিং এজেন্সি মুডিজের রিপোর্ট অনুসারে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের উপর ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে। 


রিপোর্ট বলছে, ভারতের খাবার, বস্ত্র এবং ওষুধ শিল্প বিপদে পড়তে পারে। যে সব ভারতীয় সংস্থা মার্কিন বাজারের উপর নির্ভরশীল তারা বিপাকে পড়বে। তাদের মতে, এর ফলে ভারতীয় মুদ্রার উপর চাপ বাড়বে, মার্কিন ডলার শক্তিশালী হবে। আর্থিক বৃদ্ধি সুনিশ্চিত করতে রিজার্ভ ব্যাংকের হাতে খুব বেশি বিকল্প থাকবে না।


কোথায় চাপে পড়তে পারে ভারত?


যুক্তরাষ্ট্রের ৭৫ শতাংশ পণ্যের ওপরে ভারত পাঁচ শতাংশ হারে মাসুল বসিয়েছে। ফলে সেই সব জিনিসে সমহারে মাসুল বসানোর নীতিতে ভারতের কোনো অসুবিধা হবে না। কিন্তু পোশাক, বস্ত্রশিল্প, চটি-জুতোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র যদি ১৫ থেকে ৩৫ শতাংশ মাসুল বসায়, তাহলে ভারতের অসুবিধা হবে। 


গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বার্তাসংস্থা এএনআইকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি প্রতিটি  জিনিস আলাদা করে বেছে নিয়ে সমহারে মাসুল বসায়, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে ভারতের কোনো অসুবিধা হবে না। ভারতের মতো যুক্তরাষ্ট্র যদি অ্যাভাকার্ডোর উপরে উঁচু হারে মাসুল বসায়, তাহলে দিল্লির কিছু এসে যাবে না। কারণ, ভারত সেভাবে অ্যাভাকার্ডো আমদানি করে না। তারা যদি ক্ষেত্র অনুসারে মাসুল বসায় এবং সব কৃষিজ জিনিসের উপর উঁচু হারে মাসুল বসায়, তাহলে ভারতের ক্ষতি হবে। তখন ভারতকে হয় যুক্তরাষ্ট্রের জিনিসের ওপর মাসুল কমাতে হবে, অথবা পাল্টা কোনো ব্যবস্থা নিতে হবে।


অর্থনীতি বিষয়ক প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত রায়চৌধুরী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র হলো ভারতের সবচেয়ে বড় রপ্তানির জায়গাগুলির মধ্যে একটি। ফলে সমহারে শুল্ক বসানোর নীতির ফলে ভারতের রপ্তানি ধাক্কা খাবে।


জয়ন্ত বলেছেন, জানুয়ারিতে বিদেশি অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি শেয়ার বাজার থেকে ৭৮ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে তোলা হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকার মতো। ফলে শেয়ার বাজার রীতিমতো চাপে আছে। ট্রাম্পের এই ঘোষণার প্রভাব সেখানেও পড়তে পারে।


ভারত-মার্কিন বাণিজ্য চুক্তি 


ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল এখন যুক্তরাষ্ট্র সফর করছেন। তিনি মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনাও শুরু করে দিয়েছেন।


ইউএস-ইন্ডিয়া বিজনেস কাউন্সিলের সভাপতি অতুল কাশ্যপ বলেছেন, আমরা আশা করি, এই আলোচনা সফল হবে। এই বাণিজ্য চুক্তি অনেকদিন ধরেই বকেয়া আছে। এর ফলে বিশ্বের দুইটি বড় অর্থনীতির দেশ কাছাকাছি আসতে পারবে।


তিনি জানিয়েছেন, মার্কিন বাণিজ্যের মাত্র আড়াই শতাংশ ভারতের সঙ্গে হয়। এর পরিমাণ বাড়া দরকার। একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড রাখতে হবে। দুই দেশ দুই জনের বাজারে যাতে অবাধে ঢুকতে পারে, সেই ব্যবস্থা থাকা দরকার।


জয়ন্ত জানিয়েছেন, নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ভারতের উপর চাপ বেশি থাকবে। অ্যামেরিকা তাদের শর্ত বেশি করে চাপাতে চাইবে। ভারতকে তখন ট্রাম্পের অনেক দাবি মেনে নিতে হতে পারে।


শেয়ার করুন