১৫ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০২:৩৫:০৫ অপরাহ্ন
ফ্যাসিস্টদের অভয়ারণ্য ভারত
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৭-০৩-২০২৫
ফ্যাসিস্টদের অভয়ারণ্য ভারত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন শহরে নির্বিঘ্ন আশ্রয়ে থেকে বাংলাদেশ ঘিরে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছেন পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা। সেখানে বসেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে কলকাঠি নাড়ছেন। কলকাতার মাটি অভয়ারণ্য বানিয়ে তারা বাংলাদেশকে অগ্নিগর্ভ করে তোলার চেষ্টা করছেন।


এ লক্ষ্যে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরের চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, ভাড়াটে কিলার, মাদক ব্যবসায়ী, সোনা কারবারি, সীমান্তবর্তী এলাকার চিহ্নিত স্মাগলার, সশস্ত্র সর্বহারা গ্রুপের সদস্যসহ বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে এই নেতারা যোগাযোগ রাখছেন। তাদের ইশারায় অশান্ত হয়ে উঠছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল। সংক্রিয় হচ্ছে নিষিদ্ধ সর্বহারা গ্রুপ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ পার্বত্য অঞ্চল অশান্ত করার পেছনেও আছে তাদেরই হাত। এসব করতে বিনিয়োগ করছেন বিপুল পরিমাণ অর্থ। যা গত ১৬ বছরে অবৈধভাবে আয় করেছেন।


৫ আগস্টের পর পতিত শাসক দলের প্রায় ৪৫ হাজার নেতাকর্মী ভারতে এসেছেন। তার মধ্যে অধিকাংশই কলকাতায়। এরা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টেলিগ্রাম, সিগন্যাল, হোয়াটসআপ গ্রুপসহ বিভিন্ন ডিজিটাল এবং সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছেন। শুধু তাই নয়, শান্তিতে নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতেও পরাজিত এই চক্রটির সদস্যরা কষছেন নানা ছক। অপকর্ম বাস্তবায়নের নির্দেশও দিচ্ছেন এসব মাধ্যম ব্যবহার করে।


আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের ধারণা, দেশ অস্থিতিশীল হলে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হবে। এতে করে শেখ হাসিনাসহ দলের নেতাদের বিরুদ্ধে যে বিচার প্রক্রিয়া চলছে তা বাধাগ্রস্ত হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়াকেও বানচাল করা যাবে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।


এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই মুহূর্তে কলকাতায় অবস্থান করা দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, এটাকে ঠিক পালিয়ে আসা বলা যায় না। কৌশলগত কারণে সাময়িকভাবে আমরা আত্মগোপনে আছি।


কলকাতার সল্ট লেকে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ-সদস্য পঙ্কজ নাথ বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, আমরা আপাতত আন্ডারগ্রাউন্ড আছি, ডিজিটাল মাধ্যমেই নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে বাধ্য হচ্ছি। তিনি দাবি করেন, আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। শেখ হাসিনাকে অ্যাপের মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে রাখলে তিনি তার সময়মতো জবাব দেন।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পলাতক নেতাদের অনেকেই দিল্লি, পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামে ঘাঁটি গেড়েছেন। কলকাতার রাজারহাট-নিউটাউন, পার্ক স্ট্রিট, সল্টলেক, নিউ আলীপুর, ভবানীপুর, বালিগঞ্জ প্রভাবশালীদের ঠিকানায় পরিণত হয়েছে। কলকাতা শহর ও শহরতলিতে আছেন অনেকে। এদের প্রায়ই দেখা-সাক্ষাৎ হয়, চলে আড্ডাবাজি, খাওয়া-দাওয়া। পলাতকদের ভাষায় তাদের ‘হেডকোয়ার্টার’ হচ্ছে কলকাতা। এখানে বসেই যাবতীয় পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে।


এদের মধ্যে দলীয় কর্মকাণ্ড দেখভাল করছেন আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। সরকারের গোপন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করছেন। পুলিশ বাহিনীতে যে এখনো অস্থিরতা বিরাজ করছে, তারা পুরোপুরি কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না-এর পেছনে সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের নেতৃত্বে একটি কোর কমিটিও গঠন করা হয়েছে।


শেয়ার করুন