২০২১ সালে ভারতের বিপক্ষে সিডনিতে টেস্ট দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক। সে ম্যাচে খেলেছিলেন ৬২ রানের ঝলমলে এক ইনিংস। মনে করা হচ্ছিল এই উইল পুকোভস্কি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার ওপেনিং জুটিতে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিতেই এসেছেন। কিন্তু বিধি বাম, তিনি আর কখনও অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতেই পারলেন না! সে ম্যাচটা তার শেষ হয়ে গিয়েছিল কাঁধের চোটে।
তবে মূল সমস্যা সেটা নয়। কাঁধের ওই চোটটা তার ক্যারিয়ারে ‘ব্যতিক্রম’ই হয়ে এসেছিল। তার ক্যারিয়ারজুড়ে মূল সমস্যা হয়ে ছিল মাথায় বল লাগা। ২০১৯ সাল থেকে সব ধরনের ক্রিকেটে কনকাশন সাব নিয়ম প্রচলন ঘটার পর থেকে সবচেয়ে বেশি কনকাশন সাব হয়েছে এই উইল পুকোভস্কির জন্যই। কেন, কীভাবে তার মাথাতেই বল লাগে, সেটা এক গবেষণার বিষয়ই বটে। সব মিলিয়ে ১৩ বার বল লেগেছে তার মাথাতে। অবশেষে এবার সে কারণেই মোটে ২৭ বছর বয়সে পুকোভস্কি ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিচ্ছেন।
গত বছরের মার্চে একটি বাউন্সারে মাথায় আঘাত পান তিনি। এরপর থেকে আর খেলেননি। মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার এসইএন রেডিওতে বলেন, ‘কীভাবে আবার পেশাদার খেলায় ফিরব, সেটা কল্পনা করাই কঠিন। কারণ আমি ঠিকভাবে জীবনও যাপন করতে পারছি না।’
সে কারণেই এবার তিনি ক্রিকেটকে বিদায় বলছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি আমার মস্তিষ্কে যতটা ক্ষতি হয়েছে, তাতে আর ঝুঁকি নিতে চাই না। মাথায় আঘাতের কারণে মানসিক দিক থেকে সমস্যা হচ্ছে, এটা তো আছেই। এর পাশাপাশি ক্লান্তি, মাথাব্যথা, এসব তো নিয়মিত হয়। বাম পাশে কিছু হলে আমি অস্বস্তি বোধ করি। মাথা ঘোরে, বমি বমি লাগে।’
এই কনকাশনগুলো তার পারফর্ম্যান্সেও যে প্রভাব ফেলছে, তাও মনে করিয়ে দেন তিনি। অবসরের সিদ্ধান্তে এটাও একটা নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে। তিনি বলেন, ‘কনকাশনের আগের আমি আর এখনকার আমি এক না। পরিবার আর বন্ধুরাও সেটা বুঝতে পারছে। এটা আমার জন্য ভয়ের, তাদের জন্যও।’
মাত্র ১৮ বছর বয়সে তারকা ভিক্টোরিয়া দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন পুকোভস্কি। তখনই সবাই ধরে নেয়, সামনে বড় কিছু হতে যাচ্ছেন তিনি। কিন্তু শর্ট বলের প্রতি দুর্বলতা ছিল তার। ক্যারিয়ারে ১৩ বারের মতো মাথায় আঘাত পেয়েছেন, তাতে ‘অবদান’ ছিল সে দুর্বলতারও। সবশেষ যেবার হলো, সেবার চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, তিনি যেন খেলা ছেড়ে দেন। তিনিও মেনে নিলেন। আর এভাবেই শেষ হয়ে গেল পুকোভস্কির স্বপ্নের মতো যাত্রা। যে তরুণ একসময় অস্ট্রেলিয়ার ভবিষ্যৎ ছিলেন, তিনিই এখন মাঠ থেকে চিরতরে বিদায় নিলেন।