০১ অগাস্ট ২০২৫, শুক্রবার, ০৩:২৪:৪৩ অপরাহ্ন
রাজশাহীতে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল আদালত চত্বর, আটক ৩৪
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৭-২০২৫
রাজশাহীতে নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল আদালত চত্বর, আটক ৩৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২০২৪ সালের জুলাই এর মাঝ থেকে শুরু হয় নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুম। এসবের প্রতিবাদে গতবছর ৩১ জুলাই সারাদেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির ডাক দেন জুলাই অভ্যুত্থানের নেতা-কর্মীরা। কর্মসূচিটি আদালত চত্বরের সামনে পালনের নির্দেশনা ছিল। 


দেশের বিভিন্ন জেলায় পুলিশি বাধা ও হামলা উপেক্ষা করে কর্মসূচি বাস্তবায়ন হলেও রাজশাহীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় কর্মসূচি ঠিকভাবে পালন করতে পারেননি শিক্ষার্থীরা। 


কর্মসূচি ঘোষণার খবরেই রাজশাহী মহানগর ও জেলাজুড়ে শুরু হয় গণগ্রেপ্তার। এ দিন আদালতের আশপাশের এলাকা থেকে ২৯ জনকে আটক করা হয়। এছাড়া জেলা পুলিশ আরও ৫ জনকেসহ মোট ৩৪ জনকে আটক করা হয়।



২০২৪ সালের ৩১ জুলাই কি ঘটেছিল তা জানতে বাসসের পক্ষ থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালন করতে শিক্ষার্থীরা রাজশাহীর আদালত চত্বরে জড়ো হবেন এই খবর আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে পৌঁছে যায়। সকাল থেকেই পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিন (র‌্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর বিপুল সদস্যকে আদালতের সামনে মোতায়েন করা হয়। 


পুলিশের পাশাপাশি নগর গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সেখানে সাদা পোশাকে অবস্থান নেয়। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত আদালত সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক তৎপর ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সেদিন আদালতপাড়ায় পুলিশি তৎপরতার পাশপাশি নগরের প্রবেশ পথ ও বিভিন্ন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি কার্যক্রম চালানো হয়। 


সন্দেহভাজনভাবে অনেক নির্দোষকেও সাময়িক সময়ের জন্য আটক করা হয়। 


কোর্টের পাশে পুলিশের গাড়িতে হামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা আরও বেড়ে যায়। নগরের মতিহার, বোয়ালিয়া ও রাজপাড়া থানা পুলিশ ২৯ জনকে বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করে। 


এদিকে, শিক্ষার্থীরা ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি পালন করতে না পারলেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম। এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের ৯ দফা মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। ৯ দফা না মানা হলে তারা সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানাবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন।


বিএনপিপন্থী শিক্ষকেরা মিছিল শেষে সমাবেশে বলেন, শিক্ষার্থীদের ৯ দফা মেনে নিন। অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিন। লাশ নিয়ে সরকার রাজনীতি করছে। শিক্ষার্থীদের এই ৯ দফা দাবি না মানলে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানাবেন তারা। ছাত্র আন্দোলন পরাজিত হতে পারে না। তারা জয়ী হবেই। 


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মিশকাত চৌধুরী মিশু ৩১ জুলাইয়ের কর্মসূচি নিয়ে বাসস’কে বলেন, কর্মসূচি ঘোষণার পর পরই আমরা অনলাইনের মাধ্যমে সবাইকে রাজশাহীর আদালত চত্বরে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলাম। 


আদালত চত্বরে প্রোগামটি করবো এই খবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খবর পেয়ে যায়। এরপর আদালত চত্বরে বিপুল পরিমাণ পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবি সদস্য মোতায়েন করা হয়। কর্মসূচিস্থলে যেতে পথে ও বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ৩০/৩৫ জনকে আটক করে পুলিশ ও ডিবি পুলিশ। পরিস্থিতি বিবেচনায় সেখানে আর কর্মসূচিটি পালনের জন্য যেতে পারিনি।


মিশু আরো বলেন, আমাদের যারা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তাদের ছাড়ানোর জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বোয়ালিয়া, রাজপাড়া ও মতিহার থানায় গিয়েছিলেন। সেখানে আমাদের শিক্ষকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসেছিলেন। স্যাররা কাউকে কাউকে ছাড়িয়ে আনতে পারলেও অনেককে চালান দিয়ে দেওয়া হয়। ৩১ জুলাই আমাদের জন্য খুবই দুর্বিসহ দিন ছিল। আমরা সব সময় গ্রেপ্তার আতঙ্কে ছিলাম।


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্মুখ সারির যোাদ্ধা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সালেহ হাসান নকীব বাসস’কে বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে ছিলাম। যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভালো কোনো কাজ করা যায় তখন বিজয় সুনিশ্চিত হয়। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম হাসিনার সরকার আর টিকবে না। তবে আন্দোলনের কয়দিন ছিল খুবই ভীতিকর ও কষ্টদায়ক।

শেয়ার করুন