১০ অগাস্ট ২০২৫, রবিবার, ০৯:২৪:৫৩ অপরাহ্ন
প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফর ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছেন প্রবাসীরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৮-২০২৫
প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফর ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখছেন প্রবাসীরা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন সোমবার (১১ আগস্ট)। ইতোমধ্যে তার এ সফর নিয়ে প্রবাসীদের মধ্যে নতুন স্বপ্নের পারদ ক্রমেই বাড়ছে।


সরকার প্রধানের এ সফরের মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজারটি খুলতে পারে- এমন আশায় বুক বাঁধছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সফরটি নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা। সফরে কী পেতে যাচ্ছে নতুন বাংলাদেশ? বন্ধ শ্রমবাজার কি আবার খুলবে? এমন নানা প্রশ্ন প্রবাসীদের মনে।


মালয়েশিয়া প্রবাসী ব্যবসায়ী মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিনের সাধারণ শ্রমিক ও শিক্ষিত শ্রেণির মানুষেরও আশা এবার যেন বন্ধ শ্রমবাজার খুলে যায়। তাহলে দেশ থেকে অনেক মানুষের মালয়েশিয়ায় কর্মসংস্থান হবে। সেই সঙ্গে প্রবাসী ১২ লাখ বাংলাদেশির অন্যান্য সমস্যারও সমাধান হবে।’


মালয়েশিয়া প্রবাসী প্রায় ১২ লাখ বাংলাদেশি যাতে ভালো থাকে এটি যেমন চাই, তেমনি আরও বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি এখানে চাকরি পাবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা বলে জানান আনিছুর রহমান।


আরেক প্রবাসী মকবুল হোসেন বলেন, ‘মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ড. ইউনূস বিদ্যমান অবৈধদের বৈধতা ও ভিসা জটিলতা নিরসন ছাড়াও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন আশা করছি। শ্রমিক ভিসার সমাধান করা গেলে রেমিট্যান্স আরও বাড়বে। আমাদের আশা, বৈঠকে তিনি বাংলাদেশিদের ভিসা জটিলতা অবৈধদের বৈধতার বিষয়ে জোরালোভাবে তুলে ধরবেন এবং সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।’ 


প্রধান উপদেষ্টার মালয়েশিয়া সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান।


মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বন্ধু আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে সোমবার (১১ আগস্ট) দেশটিতে যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিন দিনের দ্বিপাক্ষিক এ সফরে প্রতিরক্ষা, জ্বালানি ও হালাল খাদ্যসহ বিভিন্ন খাতে পাঁচটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর এবং তিনটি নোট বিনিময় হওয়ার কথা রয়েছে।


মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) কুয়ালালামপুরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে জটিলতা, প্রতিরক্ষা, জ্বালানি, ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা, রোহিঙ্গা সংকট, কৃষি, হালাল খাদ্য ও সমুদ্র অর্থনীতি এবং আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুই দেশের সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এমনটি জানা গেছে ঢাকা-কুয়ালালামপুরের কূটনৈতিক সূত্রে।


শীর্ষ পর্যায়ের এ বৈঠকের পর সমঝোতা স্মারকগুলো স্বাক্ষর করা হবে। এরপর বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি ‘জয়েন্ট বিজনেস কাউন্সিল’ উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে।


প্রধান উপদেষ্টার এ সফর নিয়ে বেশ আশাবাদী পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি সম্প্রতি গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা আশাবাদী যে অনেকগুলো বাধা দূর করতে পারব। প্রথমত, সর্বোচ্চ পর্যায়ে একটি সফর হচ্ছে; দ্বিতীয়ত, দুই দেশের সরকার প্রধানের মধ্যে ভালো রসায়ন আছে, আমরা সেটি কাজে লাগাব। 


সূত্রগুলো বলছে, দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষর হতে যাওয়া সম্ভাব্য এমওইউগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, জ্বালানি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) ও ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (আইএসআইএস), বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিএমসিসিআই) ও মিমোস (মালয়েশিয়ান কোম্পানি), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) ও মালয়েশিয়ান ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমআইসিসিআই)-এর মধ্যে চুক্তি।


এছাড়া যেসব বিষয়ে নোট বিনিময়ের কথা রয়েছে সেগুলো হলো- হালাল খাদ্য ব্যবস্থাপনা, ফরেন সার্ভিস একাডেমি ও ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমেসি অ্যান্ড ফরেন রিলেশানসের (আইডিএফআর) মধ্যে সহযোগিতা এবং উচ্চশিক্ষা খাত।


সফরটি সম্পর্কে অবহিত আছেন এমন এক সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইউনিভার্সিটি কেবাংসান মালয়েশিয়া (ইউকেএম) প্রধান উপদেষ্টাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করবে।


সফরসূচি অনুযায়ী, মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর প্রধান উপদেষ্টাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপর প্রধান উপদেষ্টা বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে একটি ব্যবসায়িক সেমিনারে অংশগ্রহণ করবেন। এরপর বাংলাদেশ কমিউনিটির সঙ্গে মতবিনিময়, ইউকেএম থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ, কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন ও মালয়েশিয়ার কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক এবং প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী তুন ডা. মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে।


প্রধান উপদেষ্টার সফরসঙ্গী হিসেবে থাকছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়ামসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা। আগামী ১৩ আগস্ট ঢাকার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার।


শেয়ার করুন