বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্টারলিংকের যাত্রা শুরু হয়েছে পাঁচ মাস আগে। তবে এখনও পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহক সংখ্যা দুই হাজারের কম। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যমতে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্টারলিংকের গ্রাহক ছিল ১ হাজার ৮৬২ জন, যার মধ্যে আবাসিক গ্রাহক ১ হাজার ২৫১ জন।
ইলন মাস্কের মালিকানাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবাদাতা। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় থেকেই তারা বাংলাদেশের বাজার ধরার চেষ্টা চালিয়ে আসছিল এবং পরীক্ষামূলক কার্যক্রমও পরিচালনা করেছিল। পরবর্তী সময়ে গত বছরের ৫ আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এলে বিষয়টি নতুন করে গতি পায়। চলতি বছরের মার্চে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৯০ দিনের মধ্যে স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু করতে নির্দেশ দেন। সেই অনুযায়ী গত ২০ মে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশে স্টারলিংকের কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রযুক্তিভিত্তিক গণমাধ্যম রেস্ট অব ওয়ার্ল্ড-এর তথ্যমতে, বিশ্বের ১০০টির বেশি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে স্টারলিংক। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম তারা আনুষ্ঠানিকভাবে সেবা চালু করে। আফ্রিকার ২০টির বেশি দেশেও তাদের সেবা রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, কেনিয়ায় ২০২৩ সালের জুলাইয়ে স্টারলিংক চালু হওয়ার পর ২০ মাসে গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ১৭ হাজার ৬৬ জন। আর নাইজেরিয়ায় ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক হয়েছে প্রায় ৫৯ হাজার ৫০০ জন।
বাংলাদেশে তুলনামূলক কম গ্রাহক প্রসঙ্গে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘স্টারলিংক যেসব সুবিধা দিচ্ছে, তার তুলনায় গ্রাহক সংখ্যা এখনও খুবই কম।’
বিটিআরসি সূত্র জানায়, বর্তমানে স্টারলিংক কালিয়াকৈরে দুটি, যশোর ও রাজশাহীতে একটি করে গেটওয়ে স্থাপন করেছে। এছাড়া সৈয়দপুর, কক্সবাজার, সিলেট ও কুমিল্লায় নতুন গেটওয়ে স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) থেকে প্রতিষ্ঠানটি ৮০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইডথ নিয়েছে, যার মধ্যে ৩০ জিবিপিএস বর্তমানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন সভায় জানা গেছে, আইনানুগ আড়িপাতা ব্যবস্থার (লফুল ইন্টারসেপশন) জন্য স্টারলিংক যে মনিটরিং টুল সরবরাহ করেছে, তা প্রত্যাশিতভাবে কাজ করছে না। এই বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) আলোচনা চলছে।
বিটিআরসি আরও জানিয়েছে, দেশীয় আইআইজি অপারেটরের মাধ্যমে স্টারলিংকের গ্রাহক সেবা কার্যক্রম সঠিকভাবে চলছে কি না, তা পর্যবেক্ষণের জন্য তারা প্রতিষ্ঠানটিকে আলাদা টুল সরবরাহ করতে বলেছে। স্টারলিংক জানিয়েছে, তারা এনটিএমসিকে দেওয়া একই টুল বিটিআরসিকেও দিতে পারবে। তবে বিটিআরসি মনে করছে, উভয় সংস্থার প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে এই টুলের সক্ষমতা পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
এ ছাড়া স্টারলিংক বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী দেশগুলোতে ব্যান্ডউইডথ বিক্রির অনুমোদন চাইছে। তারা বাণিজ্যিকভাবে ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিজড সার্কিট (আইপিএলসি) ও ‘আনফিল্টারড আইপি’ সেবা চালুর অনুমতি চেয়ে গত আগস্টে বিটিআরসিকে চিঠি দেয়। তবে কমিশনের সর্বশেষ বৈঠকে বলা হয়, এই ধরনের বাণিজ্যিক ব্যবস্থার কোনো বিধান বর্তমান গাইডলাইনে নেই।
বিটিআরসি আরও জানায়, বিদেশি গ্রাহক বা রোমিং ব্যবহারকারীরা বাংলাদেশে স্টারলিংকের সেবা নিচ্ছে কি না এবং তারা দেশের স্থাপিত গ্রাউন্ড স্টেশনের মাধ্যমে সংযুক্ত কি না—এ বিষয়েও স্পষ্টতা আনতে প্রতিষ্ঠানটিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশে স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের নতুন অধ্যায় শুরু করলেও, প্রযুক্তি খাতে স্টারলিংকের প্রকৃত বাজার সম্ভাবনা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা এখনও সময়ের অপেক্ষা।

