০৪ নভেম্বর ২০২৫, মঙ্গলবার, ০৫:২৪:৫৪ অপরাহ্ন
খুলনার পাঁচটি আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, একটিতে নতুন মুখ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১১-২০২৫
খুলনার পাঁচটি আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা, একটিতে নতুন মুখ

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি খুলনার ছয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। তালিকায় আছেন দীর্ঘদিনের পরিচিত ও অভিজ্ঞ নেতারা। শুধু একটি আসনে নতুন মুখ।


গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন। স্থানীয় নেতা–কর্মীদের মতে, জামায়াত আগে থেকেই প্রার্থিতা ঘোষণা করে প্রচারণা চালাচ্ছে। প্রতিটি আসনে বিএনপির কয়েকজন করে নেতা প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। প্রার্থী ঘোষণায় তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা স্বস্তি পেয়েছেন। তবে তরুণ নেতৃত্বের প্রত্যাশা অপূর্ণ থেকে গেছে। এ ছাড়া খুলনা-২ ও খুলনা-৬ আসনে দলের ঘোষিত প্রার্থীদের মাঠের বড় ধরনের দ্বন্দ্ব মিটিয়ে নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে হবে।


খুলনা-১ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি


দলীয় ঘোষণায় খুলনা-১ (দাকোপ–বটিয়াঘাটা) আসনটি আপাতত ‘হোল্ড’ রাখা হয়েছে। এ আসনে দলীয় কোন্দল মিটিয়ে প্রার্থিতা ঘোষণা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। এই আসন থেকে জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা জিয়াউর রহমান (পাপুল) মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। আসনটিতে আমীর এজাজ খান একাধিকবার ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন।


অভিজ্ঞ মুখই ভরসা


খুলনা–২ (সদর–সোনাডাঙ্গা) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা–৩ (খালিশপুর–দৌলতপুর–খানজাহান আলী) আসনে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা–৪ (রূপসা–তেরখাদা–দিঘলিয়া) আসনে নির্বাহী কমিটির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা–৫ (ডুমুরিয়া–ফুলতলা) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সাবেক সভাপতি আলী আসগর লবি, আর খুলনা–৬ (পাইকগাছা–কয়রা) আসনে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব মনিরুল হাসান বাপ্পিকে মনোনয়ন দিয়েছে দল।


নগর বিএনপির সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ২০১৮ সালের নির্বাচনে খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকেই তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ ছাড়া তিনি বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী হিসেবে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও লড়েছেন।


২০২১ সালের ডিসেম্বরে নগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ হারানোর পর কোণঠাসা হয়ে পড়লেও রাজনীতি থেকে সরে যাননি নজরুল ইসলাম। বিভিন্ন ব্যানারে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কেন্দ্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন। মনোনয়ন ঘোষণার পর তাঁর অনুসারীরা উচ্ছ্বসিত হলেও বর্তমান নগর বিএনপির নেতৃত্বপন্থীরা এখনো বিষয়টি সহজভাবে নিতে পারেননি। ফলে খুলনা-২ আসনে দীর্ঘদিনের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব এবার দলের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন নগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম (তুহিন)।


খুলনা–৩ ও ৪: আগের দুই মুখই থাকলেন


খুলনা বিএনপির রাজনীতিতে জাতীয় নির্বাহী কমিটির দুই নেতা রকিবুল ইসলাম (বকুল) ও আজিজুল বারী (হেলাল) এখনো প্রভাবশালী ভূমিকা রাখছেন। দুজনই এর আগের নির্বাচনে খুলনা–৩ ও খুলনা–৪ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। এবারও একই আসনে তাঁদের পুনর্বিবেচনা করেছে দল। খুলনা–৩ আসনে রকিবুল ইসলামের বিকল্প হিসেবে আর কেউ খুব একটা আলোচনায় ছিলেন না। তবে খুলনা–৪ আসনে আজিজুল বারীর সঙ্গে মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি পারভেজ মল্লিক।


২৯ বছর পর খুলনা-৫-এ বিএনপির প্রার্থী


১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-৫ আসনে বিএনপি প্রার্থী দিয়েছিল। এরপর ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট গঠনের পর জামায়াতে ইসলামীর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয় খুলনা–৫ আসন। এর পর থেকে বিএনপির কেউ এই আসনে প্রার্থী হননি। এবার দীর্ঘ ২৯ বছর পর এই আসনে প্রার্থী হচ্ছেন আলী আসগর (লবি)।


এ আসনে আরও মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ইবাদুল হক রুবায়েদ ও বিএনপি নেতা শফি মোহাম্মদ খান। ইবাদুল হক ও শফি মোহাম্মদের আগে নির্বাচনী অভিজ্ঞতা নেই। এদিকে ২০০১ সালের উপনির্বাচনে খুলনা-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন আলী আসগর। হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এই ব্যবসায়ীকে ওই সময় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়। পরবর্তী সময়ে খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক হন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে তিনি রাজনীতির মাঠে ছিলেন না। তবে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনায় কয়েক মাস ধরে তিনি খুলনা-৫ আসনে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।


খুলনা–৬: নতুন মুখ মনিরুল হাসান


সবচেয়ে বেশি আলোচনায় খুলনা–৬ আসন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর এ আসনটি চারদলীয় জোটের অংশ হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এর পর থেকে জামায়াতের প্রভাব ছিল প্রবল।


এবার এই আসনে মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মন্টু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম, জিয়া ফাউন্ডেশনের পরিচালক আমিরুল ইসলাম, বাসসের চেয়ারম্যান আনোয়ার আলদীন, পাইকগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মজিদ এবং ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহসভাপতি রফিকুল ইসলাম। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েছেন সদ্য দায়িত্ব পাওয়া জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব মনিরুল হাসান।


তাঁর নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুদিন ধরে কমবেশি আলোচনায় ছিল। গত শনিবার তাঁকে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব করা হয় এবং সোমবারই কেন্দ্রীয়ভাবে তাঁর প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়। তাঁর বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলায়।


মনোনয়নবঞ্চিত জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মোমরেজুল ইসলাম বলেন, ‘মনোনয়ন নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করব না।’


জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব মনিরুল হাসানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও সাড়া মেলেনি।


শেয়ার করুন