০৮ নভেম্বর ২০২৫, শনিবার, ০২:০১:২৪ পূর্বাহ্ন
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম বড় নির্বাচনে জয় পেল ডেমোক্র্যাটরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-১১-২০২৫
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রথম বড় নির্বাচনে জয় পেল ডেমোক্র্যাটরা

যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা বিপুলভাবে জয় লাভ করেছে। এটি ছিল সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম বড় ধরনের নির্বাচন। এই জয় ডেমোক্র্যাট পার্টিকে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বের উত্থান ঘটাতে সহায়তা করেছে এবং আগামী বছরের কংগ্রেস নির্বাচনের আগে দলটিকে নতুন উদ্দীপনা দিয়েছে।


নিউইয়র্ক সিটিতে ৩৪ বছর বয়সী গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রী জোহরান মামদানি মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন।


এর মধ্য দিয়ে তিনি হবেন নিউইয়র্ক সিটির ১১১তম মেয়র। তিনি ১৮৯২ সালের পর শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র, একই সঙ্গে প্রথম মুসলিম মেয়র এবং আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম ব্যক্তি, যিনি এই পদে আসীন হলেন।  

মামদানির একসময় আইনপ্রণেতা ছিলেন। তার পরিচিতি ছিল না।


সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম পরিচিত ডেমোক্র্যাট নেতায় পরিণত হওয়ার এই উত্থান সত্যিই বিস্ময়কর। অন্যদিকে, ভার্জিনিয়া ও নিউ জার্সিতে যথাক্রমে ৪৬ বছর বয়সী অ্যাবিগেইল স্প্যানবার্গার এবং ৫৩ বছর বয়সী মিকি শেরিল গভর্নর পদে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন।

ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয় মাসের অস্থির শাসনকাল সম্পর্কে মার্কিন জনগণের প্রতিক্রিয়া কী? মঙ্গলবারের এই নির্বাচনগুলো অনেকটা সেই উত্তর অনেকটাই দিয়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে ডেমোক্র্যাটদের ভিন্ন ভিন্ন প্রচারণা কৌশলের কার্যকারিতা যাচাই করারও এটি একটি সুযোগ ছিল।


ওয়াশিংটনে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি এখনো নিজেদের জন্য একটি কার্যকর রাজনৈতিক পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।

তবে বলা যায়, মধ্যবর্তী নির্বাচন এখনও এক বছর দূরে। সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা কিছুটা কমলেও ডেমোক্র্যাট পার্টির সামগ্রিক ভাবমূর্তি এখনও ততটা জনপ্রিয় নয়। তাছাড়া মঙ্গলবারের এই সব প্রতিদ্বন্দ্বিতাই অনুষ্ঠিত হয়েছে ডেমোক্র্যাট ঘেঁষা অঞ্চলে। এসব এলাকা গত বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পকে সমর্থন করেনি।


মঙ্গলবারের নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীরা ডেমোক্র্যাট ভোটারদের মধ্যে নতুন করে উদ্দীপনা ও অংশগ্রহণের অনুপ্রেরণা জাগাতে পারেন। দলের অনেক সমর্থকই দীর্ঘদিন ধরে নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব দেখতে চেয়েছেন। নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল ১৯৬৯ সালের পর সর্বোচ্চ।


তিনজন ডেমোক্র্যাট প্রার্থীই তাদের প্রচারণায় অর্থনৈতিক ইস্যুগুলোর ওপর জোর দিয়েছেন। বিশেষ করে জীবনযাত্রার ব্যয় ও সামর্থ্যজনিত সংকট, যা অধিকাংশ ভোটারের প্রধান উদ্বেগের বিষয়। তবে স্প্যানবার্গার ও শেরিল দলের মধ্যপন্থী ধারা থেকে এসেছেন, আর মামদানি সেনেটর বার্নি স্যান্ডার্স ও মার্কিন প্রতিনিধি আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্তেজের ধাঁচে এক নির্ভীক প্রগতিশীল প্রার্থী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন।


মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের ডেমোক্র্যাটিক নেতা হাকিম জেফ্রিস এক্স-এ বলেছেন, ‘ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ফিরে এসেছে।’ নিউইয়র্ক সিটির প্রথম মুসলিম মেয়র হবার পথে থাকা জোহরান মামদানি সাবেক ডেমোক্র্যাট গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে (৬৭) পরাজিত করেছেন। কুয়োমো এবার স্বাধীন প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন, কারণ তিনি মামদানি থেকে দলীয় মনোনয়ন হারিয়েছিলেন। 


চার বছর আগে যৌন হয়রানির অভিযোগ অস্বীকার করার পর গভর্নরের পদ থেকে পদত্যাগ করা কুয়োমো মামদানিকে চরম বামপন্থী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন এবং তার প্রস্তাবনাগুলোকে অকার্যকর ও বিপজ্জনক বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে মামদানি বৃহৎ বামপন্থী নীতিগুলো বাস্তবায়নের জন্য করের হার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন। যেমন স্থগিত ভাড়া, বিনামূল্যে শিশু যত্ন এবং বিনামূল্যে সিটি বাস। 


ওয়াল স্ট্রিটের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিশ্বের আর্থিক রাজধানীতে একজন গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রীর নেতৃত্ব নেওয়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রিপাবলিকানরা ইতিমধ্যেই নির্দেশ দিয়েছেন, তারা মামদানিকে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির মুখ হিসেবে তুলে ধরবেন। ট্রাম্প ভুলভাবে মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং তার উত্থানের পর শহরের জন্য আর্থিক সহায়তা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 


মঙ্গলবার রাতে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে ট্রাম্প এই নির্বাচনের পরাজয়কে ব্যাখ্যা করেছেন, তার নাম ভোটপত্রে ছিল না এবং চলমান ফেডারেল সরকারের শাটডাউনও এর একটি কারণ।


সূত্র : রয়টার্স


শেয়ার করুন