০৯ নভেম্বর ২০২৫, রবিবার, ০২:০৫:২৮ অপরাহ্ন
ই-মানি ইস্যু করতে পারবে ব্যাংক বহির্ভূত প্রতিষ্ঠান
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-১১-২০২৫
ই-মানি ইস্যু করতে পারবে ব্যাংক বহির্ভূত প্রতিষ্ঠান

বাংলাদেশ ব্যাংক একটি খসড়া প্রবিধান প্রকাশ করেছে, যার ফলে ব্যাংক-বহির্ভূত দেশি ও বিদেশি কোম্পানিগুলো পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) বা মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করার লাইসেন্স পেতে পারবে। 'রেগুলেশনস ফর ই-মানি ইস্যুয়ারস ইন বাংলাদেশ' শীর্ষক খসড়াটি জনসাধারণের মতামতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। এই বিধিমালার মাধ্যমে মোবাইল ও অনলাইন আর্থিক সেবায় দীর্ঘদিনের ব্যাংক-নির্ভর যে মডেল প্রচলিত ছিল, তা থেকে সরে আসা হচ্ছে। এই নতুন কাঠামোর আওতায় ব্যাংক ও স্বাধীন ডিজিটাল ফিন্যান্স কোম্পানি উভয়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে ই-মানি ইস্যু করতে পারবে।


বিদ্যমান এমএফএস ও পিএসপি অপারেটরদের তারা ব্যাংক-নির্ভর হোক বা না হোক এই প্রবিধান কার্যকর হওয়ার ছয় মাসের মধ্যে নতুন কাঠামোর সঙ্গে সংগতি রেখে নতুন লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। বাংলাদেশে বর্তমানে ই-মানি ইস্যু করে বিকাশ, রকেট ও নগদের মতো এমএফএস প্রতিষ্ঠানসহ টালি-পে, পাঠাও-পে ও সেবা পে-র মতো পিএসপিগুলো। এসব প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল লেনদেন ও পেমেন্ট সেবার মাধ্যমে ই-মানি সৃষ্টি করে থাকে।


তাদের কার্যক্রমকে নীতিমালা ও তদারকির আওতায় আনতে বাংলাদেশ ব্যাংক এই খসড়া প্রবিধান প্রণয়ন করেছে। এর লক্ষ্য ই-মানি ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিত করা।


খসড়া অনুযায়ী, এসব নতুন নিয়মের লক্ষ্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়ানো, ই-মানির নিরাপত্তা ও নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করা এবং প্রতিযোগিতামূলক ও উদ্ভাবন-নির্ভর পেমেন্ট পরিবেশ তৈরি করা।


খসড়া প্রবিধানে দুই ধরনের ই-মানি ইস্যুকারী প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে। অনুমোদিত ইএমআই, যার মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতো নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো থাকবে এবং ডেডিকেটেড ইএমআই, যারা ব্যাংক-বহির্ভূত সত্তা হিসেবে শুধু ই-মানি ও এ-সংক্রান্ত পেমেন্ট কার্যক্রম পরিচালনা করবে।


আবেদনকারীদের, বিশেষ করে ডিইএমআইদের ন্যূনতম ৫০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন থাকতে হবে, তিন বছরের ব্যাবসায়িক ও ঝুঁকি পরিকল্পনা জমা দিতে হবে, যথাযথ ও উপযুক্ত সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং গ্রাহকের অর্থ সুরক্ষিত রাখতে ট্রাস্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট প্রতিষ্ঠা করতে হবে।


ই-মানি ইস্যুকারীদের অবশ্যই শক্তিশালী ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কাঠামো বাস্তবায়ন করতে হবে, নির্ভরযোগ্য অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণসহ পরীক্ষিত প্রযুক্তিব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে, উচ্চ মূল্যের লেনদেনের জন্য মালটি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ব্যবহার করতে হবে এবং ক্রমাগত পরিবর্তনশীল হুমকির বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্ন জালিয়াতি শনাক্তকরণ ও সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া, ই-মানি ইস্যুকারীদের শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ও নিরবচ্ছিন্ন নিয়ন্ত্রক তদারকি নিশ্চিত করার জন্য বাধ্যতামূলক বোর্ড অডিট ও ঝুঁকি কমিটি গঠন করতে হবে। এই নিয়ম লঙ্ঘন করলে ন্যূনতম ৫০ লাখ টাকা জরিমানা, লাইসেন্স বাতিল বা দেওয়ানি ও ফৌজদারি মামলা হতে পারে।


চূড়ান্ত প্রবিধান জারির আগে অংশীজনদের মতামত জমা দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রবিধানটি গৃহীত হলে নতুন এই কাঠামো বাংলাদেশের ডিজিটাল ফিন্যান্স খাতকে নতুনভাবে সাজাবে এবং চীন, ভারত ও মালয়েশিয়ায় প্রচলিত আন্তর্জাতিক চর্চার সঙ্গে আরো বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।


শেয়ার করুন