পাবনার ঈশ্বরদীতে আল্লাহর দান এগ্রো কমপ্লেক্স চালের মিলের (কারখানা) বর্জ্য নিষ্কাশিত পানিতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ৪৫টি পরিবার। বর্জ্য নিষ্কাশিত-এ পানিতে পানিবাহিত রোগ চুলকানি ও পঁাচড়াতে আক্রান্ত হচ্ছেন এসব পরিবারের সদস্যরা। এজন্য জনবসতি এলাকায় বর্জ্য নিষ্কাশিত পানি প্রবেশ বন্ধের দাবিতে মিলের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা।
বুধবার দুপুরে উপজেলার পাবনা- ঈশ্বরদী মহাসড়কের অরণকোলা বাগবাড়িয়া চকনারিচা এলাকাস্থ ওই কারখানার সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়।
স্থানীয়রা জানান, বিগত ২০১১ সাল থেকে আল্লাহর দান কমপ্লেক্স চাউল মিলটি মুড়ি ও মোটা চাউল প্রক্রিয়াকরণের (প্রসেসিং) কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। তবে ওই চাউল মিল কারখানার বর্জ্য মিশ্রিত নোংরা পানি নির্দিষ্ট ক্যানালের মাধ্যমে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিষ্কাশিত করা হচ্ছে। এতে বসবাসরত ৪৫টি পরিবারের বসতবাড়িতে এ পানি উঠে গেছে। এতে পানি বন্দি হয়ে পড়েছে শতাধিক মানুষ।
আর তারা প্রত্যেকেই বর্জ্য পানিজনিত কারণে চুলকানি ও পঁাচড়া রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, আশপাশের আবাদি জমিতেও এ বর্জ্য মিশ্রিত পানি ঢুকে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি কাজ। সমস্যা সমাধানের জন্য একাধিকবার আল্লাহদান এগ্রো কমপ্লেক্স মালিক আনোয়ার হোসেন আনু শাহকে বলেও স্থায়ী কোনো সমাধান হয়নি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ওই মিলের পেছনে একটি নির্দিষ্ট ক্যানেলের মাধ্যমে নিষ্কাশিত হচ্ছে বর্জ্য মিশ্রিত পানি।
কিন্তু ক্যানাল সংযুক্ত পুকুরটি ভরে গেছে। এতে অতিরিক্ত পানি মিল সংলগ্ন বসতবাড়িগুলোতে ঢুকি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এ কারণে বসতবাড়ির ভেতর ও চলাচলের রাস্তায় প্রবেশে ব্যাপক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। দুর্গন্ধযুক্ত এ নোংরা পানিতে চলাচলের কারণে শিশুসহ বড়দের শরীরে দেখা দিয়েছে নানা ধরনের চর্মরোগ।
ভুক্তভোগী মোছা. মুক্তা খাতুন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই মিল কারখানার নোংরা পানি আমাদের বাড়িঘরের দিক দিয়ে বের করে দিচ্ছে।
বাড়ির ভেতর ও রাস্তায় পানি বেঁধে থাকে সবসময়। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আমাদের। কিছু বললেই মিলের মালিক আমাদের নানাভাবে হুমকিধমকি দেন।
ভুক্তভোগী আবু বক্কর সিদ্দিক ও শাহাবুদ্দিন শরিফ বলেন, একাধিকবার বলেও মিল মালিক এসবের কোনো কর্ণপাতই করেন না। এমন নোংরা পানির দুর্গন্ধে ও পানির মধ্যে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে শিশুসহ অনেকের শরীরে নানারকম চর্মরোগ দেখা দিয়েছে। শুধু তাই নয়, আশপাশের আবাদি জমিতেও এ পানি প্রবেশ করার কারণে চাষাবাদ ব্যাহত হচ্ছে। আজ বাধ্য হয়ে মিল কারখানার সামনে বিক্ষোভ করছি। বর্জ্য মিশ্রিত এসব পানি থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।
তবে এ ব্যাপারে আল্লাহর দান এগ্রো কমপ্লেক্স চাউল মিলের স্বত্বাধিকারী মো. আনোয়ার হোসেন আনু শাহ এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের কারখানার পানি নিষ্কাশনের আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে তা অতিরিক্ত ভরে যাওয়ার কারণে কিছু পানি বাইরে চলে গেছে। যার কারণে একটু সমস্যা হয়েছে। তবে বিষয়টি নজরে আসা মাত্রই পাম্প মেশিন বসিয়ে বাইরে যাওয়া পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক পানি বেরও হয়ে গেছে। স্থানীয় একটি চক্র এলাকাবাসীকে উসকে দিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন বলেও দাবি করেন আনোয়ার হোসেন আনু শাহ।
ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে সমস্যাটি অবশ্যই সমাধানের ব্যবস্থা করা হবে।

