বাংলাদেশ থেকে ভারতে চোরাপথে পাচার হচ্ছে স্বর্ণ। আসছে মাদক। জড়িত গডফাদাররা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। দুবাই, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানজুড়ে বিশাল নেটওয়ার্ক গডফাদারদের। বাংলাদেশের সীমান্তসংলগ্ন গ্রামগুলোয় রয়েছে তাদের ব্যাপক তৎপরতা।
অনুসন্ধানে মিলেছে মহেশপুর, জীবননগর, দর্শনা, চৌগাছা দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ গেটওয়ে হিসাবে পাচারকারীরা ব্যবহার করে আসছে। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের ট্রেজারিতে স্বর্ণের স্তূপ দিনদিন উঁচু হচ্ছে। শুধু মহেশপুর সীমান্ত থেকে ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত সাতটি অভিযানে জব্দ করা হয়েছে ২১ কেজি ৩৬০ গ্রামের বেশি এবং ২০২৩ সালে ১০টি অভিযানে ১২ কেজি ৬৩৪ গ্রাম স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। ২০২২ সালে ৯টি মামলার বিপরীতে ৩৩ কেজি ১৮৯ গ্রামের বেশি স্বর্ণ ঝিনাইদহ ট্রেজারিতে জমা দিয়েছে বিজিবি (খালিশপুর-৫৮)। ২০২১ সালে মহেশপুর থানায় বিজিবির করা ৩টি মামলায় ৩ কেজি ২১৬ গ্রাম জব্দ স্বর্ণ ট্রেজারিতে জমা হয়েছে। ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, হাটবাজার ও রাস্তায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা থলে থেকে জব্দ করা হয়েছে এসব স্বর্ণ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত মহেশপুরে স্বর্ণ চোরাচালানের মামলা হয়েছে ২৬টি। ঝিনাইদহ ট্রেজারিতে ৭০ কেজি ৩৯৯ গ্রামের বেশি স্বর্ণ জমা দেওয়া হয়েছে। যার বর্তমান বাজারমূল্য ৭০ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা (প্রতি গ্রাম ১০ হাজার টাকা হিসাবে)। একই সময়ে পাশের জেলা চুয়াডাঙ্গার ট্রেজারিতেও বিপুল পরিমাণ উদ্ধার করা স্বর্ণ জমা পড়েছে। সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ ভারতে পাচার হয়েছে ২০২২ সালে। এ সময়ে বিগত দিনের রেকর্ড ভেঙে ৩৩ কেজি ১৮৯ গ্রামের বেশি স্বর্ণ জব্দ করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, যে পরিমাণ সোনা জব্দ করা হচ্ছে, তার চেয়ে শতগুণ বেশি ওপারে (ভারতে) পাচার হচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিজিবি এবং পুলিশের সোর্স হিসাবে যারা কাজ করে, তারাও স্বর্ণ পাচার ও হুন্ডি সিন্ডিকেটের সদস্য। কেউ কেউ কমিশন এজেন্ট হিসাবেও কাজ করে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্য রয়েছেন যারা গডফাদারদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকেন। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হলেও প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসে না। কারও শান্তি হয় আবার কারও কারও অপরাধ ধামাচাপা পড়ে যায়।