২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার, ০৯:৩৯:২৬ অপরাহ্ন
পাবনায় ঠিকানা জটিলতায় হাসপাতালে বন্দি সুস্থ্য ৯ রোগি, তিনজনের মৃত্যু
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৮-২০২২
পাবনায় ঠিকানা জটিলতায় হাসপাতালে বন্দি সুস্থ্য ৯ রোগি, তিনজনের মৃত্যু পাবনায় ঠিকানা জটিলতায় হাসপাতালে বন্দি সুস্থ্য ৯ রোগি, তিনজনের মৃত্যু

পাবনা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর ঠিকানা জটিলতায় সুস্থ্য হয়েও বাড়িতে যেতে পারছে না। এমন ৯ জন রোগীর বাড়ির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে হাসপাতালেই মারা গেছেন তিনজন।

হাসপাতালের অভ্যন্তরে অচেনা দর্শনার্থী দেখলেই কাছে দৌঁড়ে এসে জিজ্ঞাসা করেন, ভাই আমার আব্বাকে কি চেনেন, আমাকে নিয়ে যেতে বলবেন আমি এখন সুস্থ্য হয়ে গেছি, আর কাউকে জ্বালাব না। ভাই প্লিজ আমার আব্বাকে বলেন আমাকে নিয়ে যেতে। এভাবেই অনেক সুস্থ্য রোগীই দর্শনার্থী দেখলেই কাকতি মিনতি করে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য।

প্রায় ২৫ বছর হাসপাতালে ভর্তি থাকা ঢাকার মগবাজার এলাকার সাইদ হোসেন চোখে ছলছল জ¦ল নিয়ে ভাঙ্গা কন্ঠে বলেন, ভাই আমি এখন সুস্থ্য কিন্তু কেউ আমাকে নিয়ে যায় না। কথাগুলো বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পরলেন। ঠিকানা জটিলতায় বাড়ি যেতে পারছে না সাইদ। পরিবারের কেউ তার খোঁজ নেন না।

সাইদের মতো ২২ বছর ধরে ভর্তি থাকা বদিউল আলম সুস্থ্য হয়েও যেতে পারছে না নিজ বাড়িতে। বদিউল আলম বললেন বাবা মা ভাই বোনদের কথা খুব মনে পড়ে। বাবা মার কথা মনে পড়লেই বুঁক ফাঁটা কান্না আসে কিন্তু কি করব কতবার স্যারদের কে বলি হাতে পায়ে ধরি কিন্তু বাড়িতে পাঠাচ্ছেন না।

পাবনা মানসিক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মহামান্য আদালতের রিটপিটিশন নং ১০৮৯৬/২০১৪ মোতাবেক ১৮/০৮/২০১৯ ইং তারিখে ১৫ জন রোগীর সঠিক ঠিকানা নির্ণয় করে শারীরীক ও মানসিক সুস্থ্যতা স¦াপেক্ষে আইনানুগ অভিভাবকের নিকট হস্তান্তরের নির্দেশ প্রদান করেন। হাসপাতাল কতৃপক্ষ মহামান্য আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ জন সহ আরো ৮ জন সর্বমোট ২৩ জন ঠিকানা জটিলতা রোগীর মধ্যে এ পর্যন্ত ১১ জন রোগীকে নিজ ঠিকানায় পাঠাতে সক্ষম হয়েছে।

আরো ৯ জনকে সঠিক ঠিকানা খুঁজে তাদের পরিবারের নিকট পঠানোর জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে, ইতিপূর্বে জাতীয় পত্রিকায় ছবিসহ ৭ জন রোগীর বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত সঠিক ঠিকানা খুঁজে পাওয়া যায়নি। ইতোমধ্যে ঠিকানা খুঁজে না পাওয়া তিন জন রোগী মারা গেছে হাসপাতালেই ।

সুস্থ্য হয়েও যেতে পারছে না নিজের বাড়িতে এমন রোগীর মধ্যে রয়েছে ঢাকার মগবাজার এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে ২২/০৭/১৯৯৬ সাল থেকে ভর্তি রয়েছে সাইদ হোসেনকে, তিনি এখন সুস্থ্য। ভর্তি হওয়া ঠিকানায় স্বজনদের খুঁজে না পাওয়ার যেতে পারছে না স্বজনদের কাছে। সাইদ হোসেন জানালেন বাবা মার কাছে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু কেউ নিয়ে যায় না ।

বদিউল আলম প্রথম বার ১৯৯৯ সালের ১১ এপ্রিল ভর্তি হয়ে ২০০৩ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত একটু সুস্থ্যহয়ে বাড়িতে ফিরে যায়, পূনরায় অসুস্থ্য হলে আবার ভর্তি হয় ২০০৫ সালের ১১ নভেম্বর। দুই বছর পরেই সে সুস্থ্য হয়ে যায়। স্বজনরা আর কেউ নিতে আসেনি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ্য ঠিকানা খুঁজে না পেয়ে আবার ভর্তি করে রাখে হাসপাতালে। এরকম ৯ জন সুস্থ্য রোগীর ঠিকানা জটিলতা। এ সকল ভুল ঠিকানা দিয়ে ভর্তি করা রুগীদের ঠিকানা এখন পাবনা মানসিক হাসপাতালে অন্যান্য অসুস্থ্য রোগীদের সাথে ।

এ ছাড়া ১৭ জুলাই ২০০৯ ভর্তি হওয়া জাকিয়া সুলতানা, ২৫ নভেম্বর ভর্তি হওয়া শিপ্রা রানী রায়, ১৪ অক্টেবর ১৯৯৯ ভর্তি হওয়া অনামিকা বুবি, ১ এপ্রিল ১৯৮৯ সালে ভর্তি হওয়া নাজমা নিলুফার, ৯ আগষ্ট ২০০০ সালে ভর্তি হওয়া গোলজার বিবি, ৮ মে ১৯৯৯ সালে ভর্তি হওয়া শাহানারা আক্তার ও ১৪ নভেম্বর ২০০৯ থেকে ভর্তি রয়েছে নাঈমা চৌধুরী। স্বজনদের কাছে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।

বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকাতে থাকতে হাসপাতালেই মারা গেছে তিন রোগী ৭ আগষ্ট ২০১৫ সালে শরীরের অন্য জটিল রোগে চিকিৎসারত অবস্থায় পাবনা জেনারেল হাসপাতালে মারা গেছে মাহবুব আনোয়ার, ৮ আগষ্ট ২০২৫ সালে হাসপাতালের ১৪ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্ধক্য জনিত কারণে মারা গেছে ছকিনা, ২১ নভেম্বর ২০১৮ সালে হাসপাতালের ১৫ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বার্ধক্য জনিত কারণে মারা গেছে সাহিদা। এরা সবাই সুস্থ্য ছিলো।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ডা: রতন কুমার রায় বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন পর্যন্ত দিয়েছি কিন্তু ঠিকানা খুঁজে না পাওয়ায় তাদের কে আমরা বাড়ি পাঠাতে পারছি না। ফলে নতুন রোগী ভর্তির ক্ষেত্রে ৯ টি শয্যা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে রোগীরা। আমরা দ্রুত এসব রোগীকে তাদের পরিবারের কাছে তুলে দিতে চাই সেজন্য আমরা বিভিন্নভাবে রোগীদের সঠিক ঠিকানা ও অভিভাবক খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

দেশের একমাত্র বিশেষায়িত মানসিক রোগ নিরাময় কেন্দ্র ‘পাবনা মানসিক হাসপাতাল’। পাবনা শহর থেকে তিন কি: মি: দূরে হেমায়েতপুর ইউনিয়নে ১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের শীতলাই জমিদার বাড়িতে তৎকালীন পাবনা জেলার সিভিল সার্জন ডা: মোহাম্মদ হোসেন গাংগুলী এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার বছরেই হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালে রয়েছে ১৫০ টি কেবিন, বাঁকি ৩৫০ টি রয়েছে সাধারণ শয্যা।

শেয়ার করুন