নওগাঁর বদলগাছীতে দলীয় সভায় কটাক্ষ করে বক্তৃতা দেয়ায় নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়েছেন একই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার সেলিম।
শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এই ঘটনাটি ঘটে। এ সময় অনুষ্ঠানস্থলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সোমবার এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রায় সাড়ে তিন মিনিটের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, নওগাঁ-৩ (মহাদেবপুর-বদলগাছী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম উত্তেজিত কণ্ঠে সাবেক সাংসদ সদস্য আকরাম হোসোন চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর একই সারিতে বসে থাকা সাবেক সংসদ সদস্য আকরাম হোসেন চৌধুরীর সামনে টেবিলে মাইক্রোফোন দেন বর্তমান এমপি ছলিম উদ্দীন তরফদার।
তখন আকরাম হোসেন চৌধুরী মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিমের উদ্দেশ্যে কটাক্ষ বক্তব্য শুরু করলে তার কাছ থেকে মাইক্রোফোন জোর করে কেড়ে নিয়ে ছলিম উদ্দীন তরফদার উত্তেজিত কণ্ঠে বক্তব্য দিতে শুরু করেন। তখন আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, ওই ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মধ্যে দুটি ভাগ হয়ে গেছে। অথচ সবাই বলেন, বিলাশবাড়ী ইউনিয়নটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। যদি এমনটাই হয়, তাহলে গত নির্বাচনে নৌকা কেন পরাজিত হলো? আমার প্রশ্ন হলো, যেখানে ঘাঁটি ছিল তাহলে হঠাৎ করে সেটি ভেঙে গেল কেন?
তিনি আরও বলেন, তখন উদাহরণ দিয়ে বলি, সত্যিকার অর্থে দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন অনেক সময় আমরা অবহেলা করি। দল নিয়ে চিন্তা করি না। কিন্তু বিরোধী দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন আমাদের অনেক চিন্তা করতে হয়। মরহুম ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী ১৭ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তার সময়ে দুই উপজেলার তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি। আমার সময়ে অনেক উন্নয়ন করেছি।
তিনি বলেন, বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকলে মন্ত্রী ও সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তর সহযোগিতা করেন। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দিন তরফদার মাইক্রোফোন কেড়ে নেন। তাকে আমি বোঝাতেই পারিনি এ বক্তব্যের শেষ পয়েন্টটা আসলে কী ছিল।
মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে তিনি নানান ধরনের তর্কবিতর্ক শুরু করে দিলেন। তার মনে হয়তো আঘাত লাগায় তিনি এমনটা করেছেন। কিন্তু তাকে কটাক্ষ বা লক্ষ্য করে কিছু বলিনি বা বলতে চাইনি। তিনি আমার প্রতি অবিচার করেছেন এবং আমাকে লাঞ্ছিত করেছেন সবার সামনে। তিনি হয়তো আমাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু আমি ধৈর্য ধরে ছিলাম।
এ বিষয়ে ছলিম উদ্দিন তরফদার বলেন, আমি সেদিন বলেছিলাম, সামনে সম্মেলন উপলক্ষে যে উদ্দেশ্য বর্ধিত সভা হচ্ছিল, সে বিষয়ে আপনে (আকরাম হোসেন চৌধুরী) কথা বলেন। কিন্তু তিনি বর্ধিত সভার বিষয়ে কোনো কথা না বলে তার সময়ে কী কী উন্নয়ন করেছেন সে সব কথা বলছিলেন। তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ওই ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচনে যদি ভুল হয়, তাহলে ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনে আপনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের করার পরও কেন আমার কাছে পরাজিত হলেন। এর জবাবটা কে দেবে? একজন ভালো এমপি হতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক বা যোগাযোগ রাখতে হবে। এতে করে মন্ত্রী ও সচিবরা গুরুত্ব দেবেন। এটা দিয়ে তিনি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন। এ কারণে তাকে ল্যাঙ্গুয়েজ ঠিক রেখে কথা বলতে বলেছিলাম।
মাইক্রোফোন কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ছলিম তরফদার বলেন, নৌকার জন্য যখন আপনার (আকরাম হোসেন চৌধুরী ) এত ভালোবাসা, তাহলে মাইক্রোফোন নিয়ে একটু বলেন ২০১৮ সালে জাতীয় নির্বাচনের সময় কোথায় কার জন্য ভোট চেয়েছেন কি তার কোনো প্রমাণ দেখাতে পারবেন?
এ সময় আকরাম হোসেন চৌধুরী মাইক্রোফোন নিয়ে বললেন, ওই সময় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (আকরাম হোসেন চৌধুরী ) থাকায় ভোট চাওয়া সম্ভব হয়নি। তখন আমি মাইক্রোফোন তার কাছ থেকে নিয়ে নেই। এটাই ছিল মূল কথা। তবে লাঞ্ছিত করার মতো কোনো ঘটনা হয়নি বলে তিনি দাবি করেন ।
ছলিম উদ্দিন তরফদার বলেন, আকরাম হোসেন চৌধুরীকে লাঞ্ছিত করা হয়নি। সভায় বর্তমান আওয়ামী লীগের সরকারের উন্নয়নের কথা না বলে তাকে উদ্দেশ্যে করে কটাক্ষ করায় মাইক্রোফোন নেয়া হয়েছে মাত্র।
এদিকে এ ঘটনাটি নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আকরাম হোসেন চৌধুরীর সমর্থক বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কর্মী ইউসুফ আব্দুল্লাহসহ অনেকেই বলেন, এমন ঘটনার ধিক্কার ও নিন্দা জানাই। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সঠিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
ছলিম তরফদারের সমর্থক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল রানা বলেন, ওই সভায় আমিও ছিলাম। এমপি সাহেব যেটা করেছেন ঠিকই করেছেন। তিনি এমপি (আকরাম হোসেন চৌধুরী) থাকার সময় নানা বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন। অথচ এখন তিনিই (আকরাম হোসেন চৌধুরী) বড় বড় কথা বলেন। তাকে (আকরাম হোসেন চৌধুরী) অনুষ্ঠানে দাওয়াত দেওয়াই ঠিক নাই।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলু বলেন, সেদিনের অনুষ্ঠানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। সাবেক ও বর্তমান এমপির মাঝে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। যেটা ঘটেছে সেটা একটি অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তবে পরে সেটা নিরসন হয়েছে।