বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়লে ১৫ জন আহত হন বলে জানা গেছে।
আহতরা গাবতলী উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে গাবতলী উপজেলা সদরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
জানা গেছে, গত শুক্রবার (২৭ মে) বগুড়ার গাবতলী উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে জেলা মহিলা দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুরাইয়া জেরিন রনি তার বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করে অশালীন ও অসংলগ্ন কথা বলেন। এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ, জেলা আওয়ামী লীগ ও জেলা ছাত্রলীগ ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে।
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি মতে রোববার (২৯ মে) বেলা ১১টায় গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোর্শেদ মিল্টনের বাড়ির সামনে পৌঁছালে বিএনপির সমর্থকরা মিছিলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে সড়কের পাশে থাকা আওয়ামী লীগের দলীয় ব্যানার ভাঙচুর করেন। প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া করলে তারা পালিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা সংগঠিত হয়ে আবারও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। প্রতিবাদ জানাতে গেলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষস্থলে পুলিশ এ লে বিএনপি নেতাকর্মীরা চলে যান।
এদিকে, কে বা কারা উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে ভাঙচুর করেছে বলে খবর ছড়িয়ে পড়ে। এতে দুপুর দেড়টার দিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা আবারও একযোগে লাঠিসোটা নিয়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ের দিকে হামলা করতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যেতে চাইলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাবার বুলেট ছোড়েন পুলিশ সদস্যরা।
রাবার বুলেটে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের কমপক্ষে ১৫ নেতাকর্মী আহত হন। আহত বিএনপির নেতাকর্মীরা হলেন গাবতলী পৌর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক ও পৌর কাউন্সিলর হারুন উর রশীদ (৪০), পৌর যুবদল নেতা সেলিম রেজা (৩২), উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি এম আর হাসান পলাশ (৩০), ছাত্রদল নেতা আশিক (২৮), আল-আমিন (২৫), স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিবুল ইসলাম হিরু (৩৫), মানিক মুক্তাদির (৩৪) ও ফুয়াদ হোসেন (৩২)।
আওয়ামী লীগের আহতরা হলেন- কর্মী সুজন (২৮), আব্দুল মতিন (৩৮), নারী নেত্রী আসমা বেগম (৩৮) ও লেমন (৩৫)। বাকি তিনজনের নাম জানা যায়নি। তবে এদের মধ্যে বিএনপির দুজন ও আওয়ামী লীগের একজন আছে বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ আই ফয়সাল খান জনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে উপজেলা বিএনপির সম্মেলনে কটূক্তি ও অশালীন বক্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল আহ্বান করা হয়। আমাদের সেই শান্ত ও শৃঙ্খল বিক্ষোভ মিছিলে বিএনপির নেতাকর্মীরা অস্ত্রসহ হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এদিকে, গাবতলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোর্শেদ মিল্টন বলেন, আমাদের ওপরই হামলা চালানো হয়েছে। আমরা আওয়ামী লীগের ওপর হামলা চালাইনি। আর পুলিশ যে রাবার বুলেট ছুঁড়েছে তাতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
এ বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী (প্রশাসন) বলেন, কতটি রাবার বুলেট ছোঁড়া হয়েছে তার গণনা চলছে। কাউকে আটক করা যায়নি। মামলাও হয়নি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নিতে তৎপর রয়েছে। তবে গাবতলী উপজেলার পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।