২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১০:৪১:৩৫ অপরাহ্ন
নাফ নদীতে বসছে বিশেষ ক্যামেরা, ঢাকা থেকে হবে মনিটরিং
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০২-২০২৩
নাফ নদীতে বসছে বিশেষ ক্যামেরা, ঢাকা থেকে হবে মনিটরিং

এবার মাদক চোরাকারবারি ও মানবপাচার ঠেকাতে টেকনাফের নাফ নদীতে বিশেষ ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার ২৭০ কিলোমিটার সীমান্তের মধ্যে ৬৩ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে রয়েছে নাফ নদী। নাফ নদীর গড় প্রস্থ ১ হাজার ৪০০ মিটার। ৬৩ কিলোমিটার নাফ নদীর কখনও প্রস্থের পুরো অংশ বাংলাদেশে, কখনো অর্ধেক আবার কখনো পুরাটা মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। মাদক চোরাকারবারি ও মানবপাচারের সবচেয়ে বড় রুট এই নাফ নদী। নদী দিয়ে পাচার হয় বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তা প্রতিরোধ করা সবসময় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবার নাফ নদীতে বিশেষ ক্যামেরা বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। 


সূত্রমতে, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত নাফ নদীর পাড়ে অন্তত ১০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এ নদী দিয়ে বানের পানির মতো প্রবেশ শুরু করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক। ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নাগরিক প্রবেশ করায় ইয়াবা পাচারের ঘটনা বেড়ে যায়। পরবর্তীতে মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশ নাফ নদীতে মাছ ধরা বন্ধ করে দেয়। এরপরও নাফ নদী দিয়ে মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে বাংলাদেশে প্রতিদিন ইয়াবা আটক হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। নাফ নদী দিয়ে মাদক পাচারের ভয়াবহতা দেখা যায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর পরিসংখ্যানে।



২০২২ সালে এক বছরে এ নদী দিয়ে পাচার হয়ে আসা ৯০০ কোটি টাকার বেশি ইয়াবা ও আইস উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে ২ হাজার ৩১০টি মামলায় ৩ হাজার ৯৩ জন গ্রেপ্তার হয়। এর আগে ২০২১ সালে টেকনাফে ২৮৫ কোটি টাকার মাদক, স্বর্ণ ও বিভিন্ন চোরাই পণ্য জব্দ হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে। 


সংশ্লিষ্টরা আরও জানায়, বর্তমানে মিয়ানমারের নাফ নদী দিয়ে টেকনাফে ইয়াবা পাচারে কোনো বিনিয়োগ লাগে না। নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে ইয়াবা নিরাপদে পৌঁছানোর পর মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা পরিশোধ করতে হয়। বাহকের কাজ হচ্ছে নির্দিষ্ট ব্যক্তির কাছে টাকা জমা দিয়ে আকর্ষণীয় কমিশন নিয়ে নেওয়া। ফলে মিয়ানমার থেকে পাঠানো ইয়াবা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও দুই দেশের চোরাকারবারিদের মধ্যে আর্থিক কোনো দায়বদ্ধতা নেই। দিনে দিনে চোরাকারবারির ঘটনা আশংকাজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ সদর দপ্তর। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে গোয়েন্দা ইউনিটগুলো নাফ নদী ঘিরে বিশেষ জরিপ ও অনুসন্ধান করে।



পুলিশের বিশেষ সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে নাফ নদীতে ২০০ বিশেষ ক্যামেরা স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ক্যামেরাগুলো রাতেও কাজ করবে। প্রথম অবস্থায় পানির নিচে ১০০ এবং নদীর তীরে ১০০ ক্যামেরা বসানো হবে। নদীর তীরের যেসব পয়েন্ট চোরাকারবারিরা ব্যবহার করে তাও চিহ্নিত করা হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে এ বছরের মধ্যেই ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ হবে বলে ওই কর্মকর্তা জানান। কিন্তু  সেই ক্যামেরার অবস্থান একমাত্র স্থাপনে নিয়োজিত কয়েকজন ছাড়া কেউই জানতে পারবে না। আর ক্যামেরা গুলি ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষ একটি সংস্থা মনিটরিং করবে। কারা কারা নদী দিয়ে আসা-যাওয়া করছে সেই চিত্র পাওয়া যাবে। এসব মনিটরিং করবে পুলিশের একটি সংস্থা। সেখানে সন্দেহজনক ভিডিও ফুটেজ পেলে তাৎক্ষণিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানানো হবে। এতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে। এজন্য সীমান্তে অবস্থানকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের ভেতরে সমন্বয় করা হবে। 

শেয়ার করুন