২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৪:৪৩:৩২ অপরাহ্ন
রাজশাহী নগরে মোটর বাইকে অপ্রতিরোধ্য ছিনতাইকারীরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৩-২০২৩
রাজশাহী নগরে মোটর বাইকে অপ্রতিরোধ্য ছিনতাইকারীরা

রাজশাহী মহানগরীতে দামী মোটরসাইকেলে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে ছিনতাইকারীরা। গত এক মাসে নগরীর অন্তত ২০টি স্থানে তারা ছিনতাইকাজে ব্যবহার করছে দামী মোটর বাইক। ছিনতাইয়ের পর কয়েকটি ভিডিও ফুটেজ দেখে এ বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।

অব্যাহত ছিনতাইয়ে শান্তির রাজশাহী যেন রাত হলেই আতঙ্কেও নগরীতে পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে নগরীর অলি-গলির রাস্তাগুলোতে চরম নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিচ্ছে। তবে এই এক মাসে উল্লেখযোগ্য কোনো ছিনাতাইকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। হাতে গোনা কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে জেলহাজতে পাঠানো হলেও আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিনে মুক্তি পাচ্ছে তারা; এমনটিও দাবি করেছে মহানহগর পুলিশের কর্মকর্তারা।

সর্বশেষ গত শুক্রবার রাত ৮টার দিকে চারুকলা অনুষদের পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল জাহেদ ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হন। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় জাহেদকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ওইদিন রাতে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে আটক করে।

এর আগে গত বুধবার রাত ৮ টার দিকে নগরীর নতুন বিলসিমলা এলাকায় ঘটে যায় বড় ধরনের একটি ছিনতাইয়ের ঘঠনা। ওই ঘঁনাই অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে দৈনিক কালের কণ্ঠের রাজশাহী ব্যুরো প্রধান রফিকুল ইসলামে স্ত্রী খালেদা আক্তার এবং তাঁর আড়াই বছরের শিশু কন্যা আরিশা জাইফা রায়া।

ব্যাটারি চাালিত অটোরিকশাযোগে বাড়িত যাওয়ার সময় তিনজন ছিনতাইকারী সাংবাদিক রফিকুল ইসলামের স্ত্রীর ভ্যানেটি ব্যাগ ধরে টান দিলে শিশু সন্তানসহ রাস্তার ওপরে পড়ে যান খালেদা আক্তার। এতে তিনি এবং তাঁর শিশু কন্যা মারাত্মক আহত হন। ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে একটি সাড়ে চার লাখ টাকা দামের মোটরসাইকেল নিয়ে তিনজন ছিনতাইকারী যুবক এই ঘটনাটি ঘটে পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিভিন্ন সিসিটিভির ফুটেজ পর্যালোচনা করে এটি নিশ্চিত হন।

রাজপাড়া থানার ওসি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। যেভাবে ছিনতাইকারীদেও হামলায় রাস্তায় পড়ে গেছেন সাংবাদিক রফিকুলের স্ত্রী এবং কন্যা তাতে বড় ধরনের কিছু ঘটে যেতে পারত। ওই ঘটনায় আমরা প্রাথমিকভাবে তিনজন ছিনতাইকারীকে চিহ্নিত করতে পেরেছি। তারা সবাই একটি দামি মোটরসাইকেল নিয়ে ওই ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঘটায়। তাদেও গ্রেপ্তাওে অভিযান চালানো হচ্ছে।’

এদিকে, ওই ঘটনার মাত্র একদিন আগে নগরীর শিরোইল এলাকায় সাবিনা নামের এক নারীর একটি ভ্যানেটি ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর আগের দিন নগরীর হেতেম খা এলাকায় আরেক নারীর ভ্যানেটি ব্যাগ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

নগরীর একজন পুলিশ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘গত এক মাসে অন্তত ২০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী নগরীতে। এসব ছিনতাইকাজে ব্যবহৃত হয়েছে দামি মোটরসাইকেল। কোনো কোনো মোটরসাইকেলে দু’জন আবার কোনো মোটরসাইকেলে তিনজন মিলে একসঙ্গে ছিনতাইয়ে নামছে একাধিক চক্র। নগরীর নব্ধগেট, তেরোখাদিয়া, কাদিরগঞ্জ, ডাবতলা, নওদাপাড়া, কাশিয়াডাঙ্গা, চন্ডিপুর, লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ২৫-৩০টি গ্রপে অন্তত শতাধিক যুবক এই ছিনতাইয়ে জড়িত। যাদেও অধিকাংশই মাদকসেবী।’

রাজপাড়া থানার এসআই রাজিবুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন আগেই রাজশাহীর একজন শীর্ষ ছিনতাইকারীকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হলো। কিন্তু দুদিন পরেই শুনছি আইনের ফাঁক গলিয়ে জামিনে মুক্তি হয়ে ঘুওে বেড়াচ্ছে। এদেও গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। কিন্তু ক্রমেই যেন এরা নানা কৌশল পরিবর্তন কওে ছিনাতাইকাজে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে ছিনাতাই নিয়ন্ত্রণ একটু কঠিন হয়ে পড়েছে।’

রাজশাহীর সচেতন নাগরিক সমাজের সভাপতি আহমেদ শফি উদ্দিন বলেন, হঠাৎ ব্যাপক হাওে ছিনতাই আমাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে অনেকেই মারাত্মক আহত হচ্চেন। এইভাবে চলতে থাকলে আরও বড় ধরনের ঘটনাও ঘটতে পারে। কাজেই দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বড় ধরনের অভিযান ছাড়া এ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয়।

শেয়ার করুন