২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:২৯:২২ অপরাহ্ন
৩৩৭ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিতে নিষেধাজ্ঞা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৪-২০২৩
৩৩৭ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিতে নিষেধাজ্ঞা

৩৩৭টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে পরিকল্পনা কমিশন। সেইসঙ্গে জুনের মধ্যেই এসব প্রকল্পের কাজ বাধ্যতামূলক শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এজন্য চলতি অর্থবছর সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) পর্যাপ্ত বরাদ্দও নিশ্চিত করা হয়। ১৬ মার্চ মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে দেওয়া কমিশনের চিঠিতে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন-প্রতিবছর মূল এডিপিতে প্রকল্প সমাপ্ত করার যে লক্ষ্য ধরা হয় তা পরে সংশোধনের সময় আরও কমে যায়। এরপরও অর্থবছর শেষে দেখা যায় অনেক প্রকল্পই অসমাপ্ত থাকে। আবার যেগুলো শেষ করা হয় সেখানে নানা ত্রুটিবিচ্যুতি থাকে। অর্থাৎ শতভাগ কাজ না করেই সমাপ্ত ঘোষণার মতো ঘটনাও ঘটছে। এ অবস্থা ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকায় এ বছর কঠোর অবস্থান নিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ১ মার্চ অনুষ্ঠিত এনইসি সভায় নেওয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এর অংশ হিসাবে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে চিঠি দিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংশোধিত এডিপিতে ৩৩৭টি প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ২৮০টি, কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ৪৩টি এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্প রয়েছে ১৪টি। এসব প্রকল্প জুনের মধ্যে শেষ করা কথা। তাই প্রকল্পগুলোর মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবে না। এমনকি মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব না করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সাবেক পরিকল্পনা সচিব মামুন-আল-রশীদ শনিবার যুগান্তরকে বলেন, এমন কঠোর উদ্যোগ এর আগেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে হয়। কেননা ততদিনে প্রকল্পের কাজ সিংহভাগই শেষ হয়ে যায়। ফলে বাকিটা করতে না পারলে আগের বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়ে। তবে সেই ধারাটা এখন অনেকটাই কমে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এসব ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়গুলো ঠিকভাবে গুরুত্ব দেয় না বা মনিটরিং করে না। ফলে সময়মতো বাস্তবায়নও শেষ হয় না। বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল ৩৫৫টি প্রকল্প। কিন্তু এগুলোর মধ্যে ২৯৪টি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

এছাড়া ওই অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল না এমন ৪২টি সমাপ্ত ঘোষণা করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এতে মোট বাস্তবায়িত প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩৬টি। তবে এসবের মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে এমন প্রকল্প রয়েছে ১৫০টি। বাকি ১৮৬টি প্রকল্প কাজ শতভাগ শেষ না করেই সমাপ্ত করা হয়েছে।

আইএমইডির বিভিন্ন অর্থবছরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে সমাপ্তির লক্ষ্য ছিল ৪৩৯টি। এর মধ্যে বাস্তবায়ন করা হয় ২৩৬টি প্রকল্প। এরসঙ্গে নির্ধারিত প্রকল্পের বাইরে কাজ শেষ হয়েছে এমন ২৮টি প্রকল্প যোগ করায় মোট বাস্তবায়ন হয় ২৬৪টি প্রকল্প। এর মধ্যে কাজ বাকি রেখেই সমাপ্ত ঘোষিত প্রকল্প সংখ্যা ছিল ১২৪টি। ফলে শতভাগ কাজ শেষ করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল ১৪০টি প্রকল্প।

আরও জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাস্তবায়নের কথা ছিল ৩০৫টি প্রকল্প। এর মধ্যে সমাপ্ত হয় ১৪১টি। এর সঙ্গে লক্ষ্যের বাইরে থেকে সমাপ্ত ৪৯টি প্রকল্প যোগ হওয়ায় মোট সমাপ্ত প্রকল্পের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮২টি। কিন্তু এসব প্রকল্পের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ করা প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ৯০টি।

এছাড়া শতভাগ কাজ শেষ না করেই সমাপ্ত ঘোষণা করা হয় ৯২টি প্রকল্প। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৪৬টি প্রকল্প সমাপ্ত করার লক্ষ্য ছিল। এর মধ্যে শেষ হয় ২৪৫টি। এর সঙ্গে লক্ষ্যমাত্রার বাইরে থেকে শেষ হওয়া ৬৭টি প্রকল্পসহ মোট শেষ হয়েছিল ৩১২টি প্রকল্প। কিন্তু শতভাগ কাজ শেষ হয়েছিল ১৫৫টির। বাকি ১৫৭টি প্রকল্প শতভাগ ছাড়াই শেষ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছর যেসব প্রকল্প সমাপ্তির জন্য ধরা হয়েছে সেগুলো মধ্যে সাধারণ শিক্ষা খাতে রয়েছে ছয়টি প্রকল্প। এছাড়া প্রতিরক্ষায় দুটি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় ১১টি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ১১টি, কৃষিতে ৩৯টি এবং পরিবহণ ও যোগাযোগ সেক্টরে রয়েছে ৪০টি প্রকল্প।

আরও আছে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ২১টি, পরিবেশ-জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদে ৩৪টি এবং গৃহায়ণ ও কমিউনিটি সুবিধাবলীতে ৩৫টি প্রকল্প। এছাড়া স্বাস্থ্য সেক্টরে ১৭টি, সামাজিক সামাজিক সুরক্ষায় ১৯টি এবং শিক্ষা সেক্টরে রয়েছে ১৫টি প্রকল্প।

যেসব প্রকল্প আবশ্যিকভাবে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি হলো-পদ্মা সেতু নির্মাণ এবং বাংলাদেশ সরকারের জন্য বিশেষ গবেষণা কার্যক্রম প্রকল্প। এছাড়া দেশের ৬৪ জেলা সদরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ। শাহজীবাজার ১০০ মেগাওয়াট গ্যাস টারবাইন পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ। শরীয়তপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খনন।

ঢাকার লালমাটিয়ায় হাউজিং এস্টেটে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব কর্মচারীদের কাছে বিক্রির জন্য ৫৪টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জেনারেল এভিয়েশনে হ্যাঙ্গার, হ্যাঙ্গার অ্যাপ্রোচ এবং ফায়ার স্টেশনের উত্তর দিকে অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ।

ন্যাশনাল হাউজহোল্ড ডাটাবেজ প্রকল্প। বাংলাদেশ কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স প্রজেক্ট। শহর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। কক্সবাজার-মহেশখালী মাতারবাড়ী এলাকায় পানি উন্নয়নে পরিকল্পনা প্রণয়ন। বাংলাদেশে মসলা জাতীয় ফসলের গবেষণা জোরদারকরণ। ন্যাশনাল অ্যাগ্রিকালচারাল টেকনোলজি প্রোগ্রাম-ফেজ-২। কারা নিরাপত্তা আধুনিকায়ন এবং শেখ হাসিনা তাঁত শিল্প স্থাপন-প্রথম পর্যায়।

শেয়ার করুন