২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৭:৪৫:১৩ অপরাহ্ন
স্বাধীনতার চেতনাবিরোধীদের রুখতে নতুন আইনের প্রস্তাব
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৪-২০২৩
স্বাধীনতার চেতনাবিরোধীদের রুখতে নতুন আইনের প্রস্তাব

মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার বিপক্ষে যারা কথা বলে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নতুন আইন করার প্রস্তাব করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১৪৭ বিধিতে আনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি নতুন আইনের প্রস্তাব করেন।

গতকাল রোববার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মিথ্যাচার, ইতিহাস বিকৃতি, স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচরণকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ না থাকলে রাষ্ট্র হুমকির মুখে পড়তে পারে। নতুন আইন করা প্রয়োজন, যাতে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে মন্ত্রী বলেন, সংসদ অকার্যকর করার জন্য গত দুটি নির্বাচন তারা প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল। তারা দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত করছে। দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের মুখপাত্র হিসেবে তারা কাজ করছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলনের মাধ্যমে আবার সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। তিনি সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। সংসদীয় কমিটিগুলোকে কার্যকর করেছেন। এতে সংসদের কাছে সরকারের দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দেশের সব কার্যক্রম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন করছে।

কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সংসদ সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এই সংসদকে বলা হয়, ‘হাউস অব দ্য নেশন’– অর্থাৎ সমগ্র জাতির ঠিকানা এই সংসদ। সংসদকে কার্যকর করতে জাতির পিতা তাঁর জীবনের সর্বস্ব দিয়ে গেছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক চেতনায় উজ্জীবিত করতে তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, তাঁর আক্ষেপ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে দেশে কোনো প্রতিবাদ হয়নি। তিনি অঝোরে কেঁদেছেন, তাঁদের হাতে কিছুই ছিল না। কিছুই করতে পারেননি। মুক্তিযোদ্ধা হলেও তাঁদের হাতিয়ার ছিল না, কিছুই ছিল না। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর সংগঠনকে শক্তিশালী করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানীর সমালোচনা করে মোশাররফ বলেন, ‘জেনারেল ওসমানীকে বঙ্গবন্ধু ভালোবাসতেন। তাঁর ওপরে সব দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বীরউত্তম, বীরবিক্রম সবকিছু, সে যাকে পেয়েছে, তাকে দিয়েছে। এর কোনো হিসাব ছিল না।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন।

জাতি দু’ভাগে বিভক্ত: জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, জাতি আজ দু’ভাগে বিভক্ত। নিরপেক্ষ কেউ নেই। জীবনকে রাতারাতি বদলে দেওয়ার একমাত্র পন্থা হচ্ছে রাজনীতি। এখন এটা পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগে রাজনীতি নেশা ছিল, জীবনকে বাজি রেখে মানুষ রাজনীতি করত। এখন এটা সবচেয়ে বড় পেশা। পাকিস্তান আমলে যাঁরা রাজনীতি করতেন, তাঁদের জন্য বিয়ের পাত্রী পাওয়া যেত না– এমন মন্তব্য করে কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘এখন যদি শোনে পাত্র সরকারি দল করে তাহলে কয় আলহামদুলিল্লাহ। এর চেয়ে ভালো পাত্র আর হয় না।’ বর্তমান সরকারের আমলে বিএনপির ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি ব্যবসা পেয়েছেন দাবি করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ব্যবসা নেয়। আর পিছে থাকে বিএনপি। সংসদের অনেক অর্জনের সঙ্গে দুর্বলতাও আছে মন্তব্য করে ফিরোজ রশীদ বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যে জড়িতদের খুঁজে বের করতে এখনও কমিশন হয়নি। সরকারি দলের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘চরম বামপন্থি, চরম দক্ষিণপন্থি সবাই নৌকায় উঠে গেছে। নৌকা তো আপনারা চালাবেন। নৌকার পাইলট আপনারা। তাঁরা উঠে বসে আছেন। কয় মাঝি আর কতদূর? পার হতে কতদূর। নির্বাচনের আর ৯ মাস আছে। তার পর পাঁচ বছরের জন্য নিশ্চিন্ত। গণতন্ত্র বলেন, সমাজতন্ত্র বলেন, কোনো তন্ত্রে কোনো দিন কাজ হয় না যদি পেটে ভাত, বাসস্থান, শিক্ষা না থাকে। যদি ভাতের সংস্থান, কাপড়ের সংস্থান না থাকে।’ আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘সতর্ক হন, সামনে বিপদ আসতেছে। একদা বড় দল তারা সংসদ নির্বাচনে আসবে না বলে দিছে।’

‘সংসদে এখনও ইনডেমনিটির মতো কালো আইন হয়’: গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেছেন, এখনও সংসদে দুর্নীতিবাজ, অর্থ পাচারকারী, লুটেরাদের জন্য ইনডেমনিটির মতো কালো আইন পাস হয়। এটা লজ্জার ব্যাপার। জাতির পিতাকে হত্যার পর সংসদকে বিভিন্নভাবে কলুষিত করা হয়েছে। বিচার বন্ধ করার জন্য ইনডেমনিটি আইন এই সংসদে পাস করে সংসদকে কলঙ্কিত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের, রাজাকার, আলবদরদের সংসদ সদস্য করে সংসদকে কলুষিত করা হয়েছে। জনগণের মালিকানা ছিনতাই করে গঠিত হচ্ছে জাতীয় সংসদ। আজকের সংসদে জাতির পিতার দর্শন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা অনেকাংশেই অনুপস্থিত। ১৯৭৫ সালের পর বৈধ-অবৈধ কোনো সরকারের আমলে নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়নি। নির্বাচন নিয়ে অপবাদ থেকে বাদ পড়েননি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও।

ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়: আওয়ামী লীগের মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, গর্ব করে বলতে পারি, দেশের মানুষ আজ না খেয়ে নেই। ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এখন পঁচাত্তর নয়, ২০২৩ সাল। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশের পথে।

তিনি বলেন, ‘ভাবতে অবাক লাগে, স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে একটি ছোট শিশুকে ১০ টাকা দিয়ে মিথ্যা তথ্য দিতে দ্বিধা করেনি। যে দেশে জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় মন্ত্রীদেরও বিচার হয়, যে দেশে প্রতিটি স্তরের মানুষকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়, সেখানে একজন সাংবাদিক মিথ্যা তথ্য দিয়ে নতুন প্রজন্মকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে, তাদের বিচার হবে না! আবার সেটা নিয়ে কথা বলে, এর চেয়ে অবাক-বিস্ময়ের কিছু আছে বলে মনে করি না।’

সংসদের ৫০ বছর পূর্তিতে প্রবীণ সংসদ সদস্য ছাড়াও নতুন সদস্যরা আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। প্রবীণ সদস্যরা তাঁদের বাবা, দাদা, নানাসহ পুরোনো প্রজন্মের রাজনৈতিক ধারাবাহিকতা ও কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন। সংরক্ষিত আসনের সদস্য জাকিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘আজকে সবার আলোচনা শুনে মনে হয়েছে আমরা একটি পরিবারে বাস করছি। আমার এতখানি অভিজ্ঞতা ছিল না।’

জাকিয়া তাবাসসুম জানান, তাঁর বাবা দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্রাবাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রুমমেট ছিলেন। বঙ্গবন্ধু যে কত মহান, সেটা কবিতা ও গান লিখে শেষ করা যাবে না। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা কত মহৎ, তিনি আমাদের খুঁজে খুঁজে বেছে বেছে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমাদের সামনে অনেক দায়িত্ব।

শেয়ার করুন