রাজশাহী কর অফিসে অভিযান চালিয়ে ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার হওয়া উপ-করকমিশনার মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে বেরিয়ে আসছে আরও চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়কর ফাইল আটকিয়ে ঘুষ বাণিজ্য ছিল মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়ার বড় টার্গেট। বিশেষ করে রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের ফাইল আটকিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন তিনি। গত ৪ এপ্রিল এই কর্মকর্তা দুদকের ফাঁদে গ্রেপ্তার হওয়ার পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভূক্তভোগী আরও কয়েকজন চিকিৎসক এসব তথ্য দিয়েছেন।
এদিকে, গুষ বাণিজ্য করে কি কি সম্পদ গড়ে তুলেছেন গ্রেপ্তারকৃত ওই কর্মকর্তা সেটি নিয়েও কাজ শুরু করেছে দুদুকের একটি দল।
চিকিৎসকদের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন, রাজশাহী কর অঞ্চলের সার্কেল-১৩ এর আওতায় সক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়কর দিতে হয়। যার মধ্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরাও পড়েন। এই চিকিৎসকদের মধ্যে যারা বাইরে প্রাইভেট প্রেক্টিস করেন, তাঁরা হয়ে পড়েন উপ-করকমিশনার মহিবুল ইসলাম ভুঁঁইয়ার প্রদান লক্ষ্য। প্রাইভেট প্রেক্টিসে চিকিৎসকরা লাখ লাখ টাকা আয় করে কর ফাঁকি দেন বলে ফাইল আটকিয়ে হয়রানি করায় ছিল মহিবুলের প্রধান কাজ। যেসব চিকিৎসক দিনে ৫০ জনের বেশি রোগী দেখেন তাঁদের নিকট থেকে বছরে অন্তত ৩ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করেন মহিবুল ইসলাম। আর যারা ৫০ জনের নিচে রোগী দেখেন তাদের নিকট থেকে কমপক্ষে দুই লাখ টাকা আদায় করে আয়কর ফাইল ছাড় করতেন। এসব নিয়ে চিকিৎসকরা প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন মহিবুলের কাছে।
রামেক হাসপাতালের নাক কান গরা বিভাগের আরেক চিকিৎসক বলেন, তাঁর স্ত্রী সদ্য চিকিৎসা পেশায় যোগ দিয়েছেন। মাসে তাঁর বাড়তি তেমন কোনো আয় নাই। তার পরেও তাঁর স্ত্রীর ফাইল আটকিয়ে দুই লাখ টাকা দাবি করেছিলেন মহিবুল ইসলাম। শেষ-মেশ ৭০ হাজার টাকায় রফা-দফা হয়ে আয়কর ফাইল সনদ হাতে পান ওই চিকিৎসক।
এদিকে সার্জারি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, তাঁর আয়কর সনদ হাল-নাগাদের জন্য এবার মহিবুল চার লাখ টাকা দাবি করেছিলেন। শেষে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে আয়কর সনদ নিয়েছেন ওই চিকিৎসক।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, ‘চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দীকার ২৬ কোটি টাকার সম্পদের আয়কর ফাঁকির বিষয়টি ধরা পড়ার পরে তাঁকে নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা বা কর ধার্য করা যেত। কিন্তু সেই পন্থায় না করে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে সরকারি রাজস্ব ফাঁকির অপরাধ ঢাঁকতে আরেকটি অপরাধে জড়িয়ে পড়েন মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়া। এভাবে তিনি আরও একাধিক চিকিৎসককের জিম্মি করে অর্থ আদায় করেছেন। তবে অন্যরা আত্মসম্মানের ভয়ে এবং পরবর্তিতে কর দিতে গিয়ে ঝামেলার ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি। দুদক সেসব বিষয়েও কাজ করছে। এছাড়া ঘুষের টাকা দিয়ে ওই কর কর্মকর্তা কি কি সম্পদ গড়েছেন সেগুলোও খুঁজে বের করার অনুমোদন চাওয়া হবে। দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে ওই অনুমোদন পাওয়ার পরেই মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়ার সম্পদের খোঁজে মাঠে নামবে দুদক টিম।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী সমন্বিত বার্যালয়ের উপপরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘মহিবুলকে ফাঁদ আইনের মামলায় গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি নিয়ে এখনো কাজ চলছে। এর পরে নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত পেলে আমরা সেসব নিয়েও কাজ করবো।
প্রসঙ্গত, রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাাতলের অবসরপ্রাপ্ত গাইনি চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দীকার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ এপ্রিল ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় রাজশাহীর উপ-করকমিশনার মহিবুল ইসলাম ভুঁইয়াকে। চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দীক গত ৫-৬ বছরে ২৬ কোটি টাকার সম্পদের বিবরণ তার আয়কর ফাইলে উল্লেখ না করে গোপন করেছিলেন। সেই ফাইল ছাড় করতে ৬০ রাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছিলেন কর কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম। শর্তানুযায়ী দাবিকৃত ৬০ লাখ টাকার মধ্যে প্রথম কিস্তি ১০ লাখ তুলে দিয়েছিলেন ফাতেমা সিদ্দীক।