২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৫:৪৬:২৩ পূর্বাহ্ন
রাজশাহীর রাজনীতিতে অতীত নিয়ে টানাটানি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৩-০৭-২০২৩
রাজশাহীর রাজনীতিতে অতীত নিয়ে টানাটানি

এক বসায় রাজশাহীর সংসদ সদস্যদের অতীত টেনে আনেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বিএনপির নেতা মিজানুর রহমান মিনু। টেলিভিশন টক শোতে তাঁর সেই বক্তব্যের ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মিনুর অতীত নিয়ে টানাটানি শুরু করেছেন সরকারদলীয় এমপিরাও।


সম্প্রতি একটি টক শোর আয়োজন করে বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেল। এতে আলোচক হয়ে অংশ নেন মিনু এবং রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দারা। আলোচনায় মিনু বলেন, ‘রাজশাহীর-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। তাঁকে আমি দেখেছি রাজশাহী মাদ্রাসা মাঠের স্টেজে কর্নেল ফারুকের পাশে অস্ত্র নিয়ে জনগণের দিকে তাক করা। তিনি এখন আওয়ামী লীগের এমপি।’


রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি এনামুল হক সম্পর্কে মিনুর মন্তব্য ছিল, ‘এমপি এনামুল সাহেব। জীবনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ কিছুই করতে দেখি নাই। বরঞ্চ বগুড়ায় যখন পড়াশোনা করত তখন সে শিবিরের প্রেসিডেন্ট ছিল। সে-ও এখন এমপি।’


রাজশাহী-৫ আসনের এমপি মনসুর রহমান সম্পর্কে বিএনপির নেতা মিনু বলেন, ‘আমি তো মনে করতাম সে বিএনপি করত। আমাদের মন্ত্রী কবির ভাইয়ের ড্রয়িংরুমে সব সময় বসে থাকত প্রমোশন আর ট্রান্সফারের জন্য। এখন দেখি মনসুরও এমপি।’ আর রাজশাহী-৬ আসনের এমপি শাহরিয়ার আলম সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আরেকজন হচ্ছে চারঘাটের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী (শাহরিয়ার আলম)। ও আমার সাথে তদবির করতে আসছিল বিএনপি থেকে ভোট করবে। আমি বলেছি, ব্যবসা করছো। কর গা। এখানে এসো না...তো ও জীবনে ছাত্রলীগ, যুবলীগ করেনি।’


এমপিদের নিয়ে মিনু এসব মন্তব্য এমন সময়, যখন রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ দুই মেরুতে বিভক্ত। একটি বলয় তৈরি হয়েছে সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে ঘিরে। অপরটি হলো আওয়ামী লীগের তিন এমপির নেতৃত্বে। এই এমপিরা সিটি নির্বাচনে লিটনকে কোনো ধরনেরই সহযোগিতা করেননি। তাই স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ মিনুর মন্তব্যে খুশি। এ কারণে খোদ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের পক্ষ থেকেও এই বক্তব্য ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।


মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রকি কুমার ঘোষ তাঁর ফেসবুকে মিনুর বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে লিখেছেন, ‘আসলে এটাই সত্যি রাজনীতি, আর রাজনৈতিক নেতাদের হাতে রাজনীতি নাই চাটুকার ও হাইব্রিডদের হাতে রাজনীতি চলে গেছে।’


ফেসবুকে রকির এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকেই। এদের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা জোবায়ের হাসান রুবন লিখেছেন, ‘একজন জঙ্গির মদদদাতা, আমাদের সময় আমাদের উপর কেস জেলের মূল হোতা, নেত্রীকে হুমকি দানকারী মিনুর আওয়ামী লীগের ৪ এমপির নামে মিথ্যা ও কুৎসিত বক্তব্য মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিসাবে কিভাবে প্রচার করিস, তা আমার মাথায় আসে না। রাজনৈতিক ব্যক্তি হলে পোস্ট ডিলিট কর।’


মিনুর বক্তব্যে চটেছেন আওয়ামী লীগের চার এমপিও। এক প্রতিক্রিয়ায় ফেসবুকে রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের এমপি ওমর ফারক চৌধুরী মিনুকে বাংলা ভাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘মিনুর মুখে আওয়ামী লীগের নেতার মুখের কথার প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম! এরা তো একই গাছের শিকড়! উল্লাস করার কারণটি বোঝার জন্য, কারা মিনুর কথা নিয়ে সামাজিক মিডিয়াতে উল্লাস করছে, সেটি লক্ষ্য করলে, সবকিছু জলোবোধ তলোরং হবে!’


ওমর ফারুক আরও লিখেছেন, ‘বাংলা ভাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা মিনু। কোর্টে মামলা চলমান, তাঁর কথাতে আমরা আনন্দ পাচ্ছি! পাতানো খেলা কত দিন চলবে?’


মিনুর মন্তব্যের বিষয়ে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি এনামুল হক বলেন, ‘আমি ভিডিও ক্লিপটি দেখেছি। উনি (মিনু) কি তাহলে বগুড়া জেলা শিবিরের সভাপতি ছিলেন! তা না হলে আমার কথা বলছেন কেমন করে।’ ছাত্রশিবিরের সভাপতি বলায় মিনুর বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।


আর রাজশাহী-৫ আসনের এমপি ডা. মনসুর রহমান বিএনপি নেতা মিনুর কথাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মন্তব্য করে বলেন, ‘১৯৬৮ সালে রাজশাহী মুসলিম হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন আমি চার আনা পয়সা দিয়ে ছাত্রলীগের সদস্য হই। আমি ১৯৯১ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএমএর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্যানেলে নির্বাচন করেছি। আওয়ামী লীগ ঘরানার চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাচিপের ১১ বছর সভাপতি ছিলাম এবং বিএমএর সভাপতি ছিলাম ১৩ বছর।’


মিনুর বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। 

মিজানুর রহমান মিনু অবশ্য নিজের দেওয়া বক্তব্য সম্পর্কে অটল। তিনি বলেন, ‘যা সত্যি, তা-ই বলেছি। এগুলো সবাই জানে।’ 


শেয়ার করুন