২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৫:৪০ অপরাহ্ন
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি নিরীক্ষায় আসছে নতুন আইন
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৪-২০২৩
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি নিরীক্ষায় আসছে নতুন আইন

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে যোগ্য বেসরকারি অংশীদার নির্বাচন এবং অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতায় মহা হিসাব নিরীক্ষকের মাধ্যমে অডিট বা নিরীক্ষার বিধান রেখে পাবলিক অডিট বিল, ২০২৩-এর খসড়া তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

  নতুন আইনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারের ঋণ, অনুদান বা ভর্তুকির ক্ষেত্রেও নিরীক্ষার বিধান রাখা হয়েছে।

 

পাবলিক অডিট বিল, ২০২৩-এর খসড়াটি গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে তিন সপ্তাহের মধ্যে অংশীজনের মতামত চাওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এটি কার্যকর হলে আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, নতুন আইনের বিধানাবলি প্রাধান্য পাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামীতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) প্রকল্পের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এসব প্রকল্পে সঠিকভাবে বাস্তবায়নসহ সরকারি ব্যয়ের স্বচ্ছতা বাড়াতে নতুন এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন আইনের খসড়া অনুযায়ী, পিপিপি ভিত্তিতে প্রকল্প চুক্তি, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব ব্যবস্থা, বেসরকারি অংশীদার নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং এসব প্রকল্পের লক্ষ্য অর্জন সংক্রান্ত অডিট পরিচালনা করতে পারবেন মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। একইভাবে এনজিও, ফাউন্ডেশন, ট্রাস্ট, চ্যারিটি এবং সুশীল সমাজ সংগঠন বা অন্য কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংস্থাকে সরকার ঋণ, তহবিল, অনুদান কিংবা ভর্তুকি দিলে সে অর্থ ব্যয়ের যথার্থতা সম্পর্কে অনুসন্ধান, পরীক্ষা ও যাচাই তথা নিরীক্ষা পরিচালনা করা যাবে। তবে বিদেশি রাষ্ট্র বা আন্তর্জাতিক সংস্থায় সংযুক্ত তহবিল হতে প্রদত্ত অনুরূপ কোনো অনুদান বা ঋণের ক্ষেত্রে এ বিধান প্রযোজ্য হবে না।

রাজস্ব ও প্রাপ্তি অডিট সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়, সরকারের প্রাপ্ত রাজস্ব যথাযথভাবে সরকারের কোষাগারে জমা হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করা হবে। একই সঙ্গে কর এবং কর ব্যতীত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নিরূপণ এবং আদায়ে পর্যাপ্ত পদ্ধতি ও ব্যবস্থা রয়েছে কিনা সেগুলোও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এসব যাচাই করতে মহা হিসাব নিরীক্ষক যেরূপ রেকর্ড ও হিসাব পরীক্ষা করা উপযুক্ত বলে মনে করবেন, সেভাবেই পরীক্ষা করতে পারবেন।

এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, সরকারের আংশিক অর্থে পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়। তাই এ ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিতে সরকার অডিট চালাবে, এটা ভালো উদ্যোগ। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরকার ঋণ বা অনুদান দিলে তারও নিরীক্ষা সরকার করতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে শুধু সরকারি অর্থ ব্যয়ের অংশে অডিট যৌক্তিক হবে।

রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও আদায় কৌশল সংক্রান্ত অডিট বিষয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে মহা হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়ের সক্ষমতা রয়েছে কিনা, সে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে হবে। কারণ, একজন সরকারি কর্মকর্তা বা একটি সরকারি কার্যালয়ের মাধ্যমে হুট করে এ ধরনের টেকনিক্যাল বিষয় সম্পন্ন করা কঠিন। বিভিন্ন দেশে এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান করে থাকে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

খসড়া আইনের ব্যয় ও পরিশোধ অডিট সংক্রান্ত ধারায় বলা হয়, সরকারি অর্থ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আইন, বিধি-বিধানাবলি প্রতিপালনপূর্বক যে উদ্দেশ্যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে, মিতব্যয়িতার সহিত সেই উদ্দেশ্যেই ব্যয় করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিতে ব্যয়িত সব অর্থের অডিট করা হবে। একই সঙ্গে সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন, বাণিজ্য ও লাভ-ক্ষতি হিসাব এবং ব্যালেন্স শিটসহ তাদের নিকট রক্ষিত সব হিসাব অডিট করা হবে।

মহা হিসাব নিরীক্ষক সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ বা অনুরূপ সব সংস্থার মিতব্যয়িতা, দক্ষতা এবং ফলপ্রসূতা অডিট করতে পারবেন। একই সঙ্গে সরকারের সম্পদ এবং দায় সংবলিত সরকারি হিসাবসমূহের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন স্থিতি এবং নগদ স্থিতিও অডিট করতে পারবেন। এসব কার্য সম্পাদনে মহা হিসাব নিরীক্ষক প্রবিধান দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে যে কোনো ধরনের বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে পারবেন। আইনটি চূড়ান্ত করার পর তা বাস্তবায়নে মহা হিসাব নিরীক্ষকের পরামর্শক্রমে সরকার বিধিমালা প্রণয়ন করবে।

শেয়ার করুন