ঘোষিত তফশীল অনুযায়ী আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন। ইতিমধ্যে রাজশাহী সিটিতে বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে আবারো মেয়র প্রার্থী মনোনীত করেছে আওয়ামী লীগ।
খায়রুজ্জামান লিটনকে মনোনীত করায় রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগ উজ্জীবীত। লিটনের মনোনয়নে সাধারণ মানুষও খুশি। আর মনোনয়ন পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ। কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনও।
এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহী সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে মনোয়নফর্ম দাখিল করেছিলাম। সবদিক বিবেচনা করে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে আবারো চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছেন।
নির্বাচনে সবাইকে তাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন। তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু করছি। ২০১৮ সাল থেকে রাজশাহীতে ব্যাপক উন্নয়ন ও জনকল্যানমূলক কাজ করেছি। অনেক কাজ চলমান আছে। করোনাকালীন দুঃসময়ে মানুষকে দফায় দফায় খাদ্য, নগদ অর্থ, বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা প্রদান করা হয়েছে, রাজশাহীর মানুষ তা মনে রাখলে নির্বাচনে জয় পাওয়া কঠিন কিছু হবে না।
রাসিক মেয়র বলেন, ইতোমধ্যে পরিচ্ছন্ন-সবুজ নগরী গড়তে সক্ষম হয়েছি। দুইবার পরিবেশ পদক অর্জন করেছি। ইপিআই কার্যক্রমে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের টানা ১১ বার জাতীয়ভাবে সেরা হয়েছে। পরিচ্ছন্নতা, সবুজ ও আলোকায়নে আমরা দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করেছি। এখন আমাদের প্রয়োজন কর্মসংস্থান। এটিতে জোর দিতে চাই।
কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ইতোমধ্যে বিসিক শিল্পনগরী-২ এর কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। সেখানে যাতে উদ্যোক্তারা কাজ শুরু করতে পারেন সে ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে। নারী উদ্যোক্তাদের এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিনাসুদে ঋণ প্রদান করা হবে। আগামী ৫ বছরে অন্ততপক্ষে ৫০ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মের ব্যবস্থা করে দিতে চাই।
সেক্ষেত্রে আইটি সেক্টর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক বড় ভুমিকা পালন করবে ইনশাল্লাহ। আগামীতে রাজশাহী সুন্দর, পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর ও বাসযোগ্য শহর তো বটেই, একই সঙ্গে কর্মচঞ্চলসহ সবকিছু মিলে শুধু বাংলাদেশের মধ্যে নয়, এশিয়ার মধ্যে অন্যতম মডেল শহর হিসেবে দাঁড়াবে ইনশাল্লাহ।
রাজশাহীবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আরো একটি বার নৌকায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার সুযোগ দিন। রাসিক মেয়র বলেন, রাজশাহী তিলে তিলে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত হয়েছে। আগামী ৫টি বছর যদি আবারো সুযোগ পাওয়া যায়, তাহলে রাজশাহী শহরে উন্নয়ন করার মতো হয়তো আর জায়গা থাকবে না। সেক্ষেত্রে সিটি এরিয়াকে সম্প্রসারিত করা হবে। যাতে সেই এলাকাগুলোর মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা যায়, উন্নয়ন করা যায়। সেটি বাস্তবায়িত হবে শুধুমাত্র নির্বাচনে জয়যুক্ত হলে।
এদিকে মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ইতিমধ্যে পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। প্রতিদিন মানুষের পাশে থাকছেন। উন্নয়ন নিয়ে ভাবছেন।
গত শনিবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভা করেন তিনি। অনুষ্ঠানে রাসিক মেয়র রাজশাহীবাসীর কর্মসংস্থানের বিষয়ে আলোচনা ও বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করেন।
এদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। মিছিল মিটিং শুরু হয়েছে নগরীতে। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের নেতৃত্বে আমরা ঐক্যবদ্ধ আছি। আগামী নির্বাচনে আমাদের বিজয় হবে ইনশাল্লাহ। সে লক্ষ্যে সার্বিক প্রস্ততি শুরু হয়েছে। ঈদের পর পুরো নির্বাচনী আমেজে তারা মাঠে থাকবেন।
এবারের রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে ভিন্ন কৌশল। গতানুগতি নির্বাচনীধারা নেই। কারণ, এর আগের সকল সিটি নির্বাচনেই বড় দল বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। ছিল জামায়াতও। কিন্তু এবার বিএনপি-জামায়াত নির্বাচনে প্রার্থী দিচ্ছে না-এটি মোটামুটি নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দলীয় মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের সামনে বড় কোনো বাধা থাকছে না। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভিন্ন কৌশলী হয়ে উঠতে পারে। লিটনকে ঠেকাতে তারা ডামি প্রার্থী দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দলীয় সূত্র জানায়, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করেছেন। নৌকার টিকিট হাতে পেয়েই মাঠে নেমে পড়েছেন লিটন। আগেভাগেই মাঠ গুছানোর কাজে হাত দিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও বিভিন্ন কমিউনিটির সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। ঘোষিত তপশীল অনুযায়ী, নির্বাচনে মনোননয়পত্র দাখিলে এখনো একমাসেরও বেশি সময় বাকি। তবে হাতে থাকা সময়টা নষ্টা করতে চান না। এজন্য ভোটের মাঠে এখন থেকেই কুশল বিনিময়ে নেমেছেন লিটন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিকরাও লিটনের বাইরে কিছু ভাবছে না। তারাও অকুণ্ঠ সমর্থন দেবে তাঁকে। ভোটের হিসেব-নিকেশে বিএনপি শেষ পর্যন্ত না আসলে লিটনের সামনে আর কোনোই বাধা থাকছে না বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। যদিও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও বর্তমান মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন জানিয়েছেন, তিনি ফাঁকা মাঠে গোল দিতে চান না। খেলেই গোল দিতে চান। এজন্য জোর প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। তিনি চান বিএনপিও নির্বাচনে আসুক। জনগণের কাছে জনপ্রিয়তার পরীক্ষা দিক তারা।
তবে সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও প্রকাশ্যে বিএনপির কাউকে দেখা যাচ্ছে না। অতীতে সিটি নির্বাচনে রাজশাহীতে একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোটের মাঠে নামতে দেখা গেলেও এবার এখন পর্যন্ত তাদেরও খবর নেই।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ছিলেন মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন এক লাখ ৬৫ হাজার ৩৩২ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এর আগে ২০১৩ সালের ১৫ জুনের সিটি নির্বাচনে আনারস প্রতীকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে বুলবুল এক লাখ ৩৮ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে রাজশাহী সিটির মেয়র হন। এর আগে ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে হারিয়ে প্রথমবার রাজশাহী সিটি মেয়র নির্বাচিত হন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।