২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৬:১০:৪৩ অপরাহ্ন
রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা জানাল এনবিআর
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৭-০৪-২০২৩
রাজস্ব বাড়ানোর পরিকল্পনা জানাল এনবিআর

আগামী অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা চলতিবারের চেয়ে ৬০ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কী কৌশল নিতে যাচ্ছে তা নিয়েই মূলত এনবিআর রাজস্ব বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল বুধবার এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রতিনিধিরা বৈঠক করেন। আইএমএফের দেওয়া রাজস্ব সংস্কারের কতটা আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।

এনবিআর সূত্র জানায়, সংস্কারের অংশ হিসেবে আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট প্রস্তাবে কোন কোন খাত বা পণ্য থেকে ভ্যাট অব্যহতি তুলে নেওয়া হবে, বিদ্যমান কর অবকাশ সুবিধার আওতা কমানো হবে, সঠিক হিসেবে রাজস্ব আদায় করতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো, নতুন আয়কর আইনের প্রয়োগ, অর্থ পাচার রোধে করণীয় নির্ধারণ, মিথ্যা ঘোষণা বন্ধে বন্দরে স্ক্যানার ব্যবহার নিশ্চিত করা, এনবিআরের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে পদক্ষেপ নিয়ে বৈঠকে কথা হয়েছে। বৈঠকে স্বচ্ছতার সঙ্গে ভ্যাট আদায়ে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) সরবরাহের অগ্রগতি জানতে চান আইএমএফ প্রতিনিধিরা। রাজস্ব জালের বিস্তার এবং নতুন ২০ লাখ করদাতা সংগ্রহ করার বিষয়েও কথা হয়েছে এ সময়ে। ঋণ অনুমোদনের আগেই সরকারকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, শর্ত মানা না হলে ঋণের কিস্তি ছাড় স্থগিত করা হবে। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগেই আইএমএফ দেখতে চায় তাদের দেওয়া সংস্কারের কতটা পূরণ করেছে এবং বাকিটা পূরণে পরিকল্পনা কী। এসব জানতে গত ২৫ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত আইএমএফ প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে অবস্থান করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এসব বৈঠকে বাজেট সহায়তা নিয়েও আলোচনা হবে। এরপর সেপ্টেম্বরে আরও একটি দল আসার কথা রয়েছে। তখন এসব নিয়ে আরও বিস্তৃত আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

আইএমএফের স্টাফ কনসালটেশন মিশন আসার আগেই এনবিআরের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন আইএমএফের ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান (আবাসিক প্রতিনিধি) জয়েন্দু দে। চিঠিতে আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়নের হালনাগাদ পরিস্থিতি প্রস্তুত রাখতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এনবিআর কর্মকর্তারা আইএমএফ প্রতিনিধিদের কাছে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে কাজ চলছে বলে উল্লেখ করেছেন। তাদের তৈরি প্রতিবেদনে বলা জয়েছে, এরই মধ্যে আয়কর আইনমন্ত্রী সভায় অনুমোদন হয়েছে, বন্দরে স্ক্যানার বসানোর কাজ চলছে। ইএফডি কেনার কাজ চলছে। এ যন্ত্র কেনার কাজে গতি আনতে আরও একাধিক প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অব্যাহতির তালিকা ছোট করতে হিসাব কষা হচ্ছে। যা আগামী রাজস্ব বাজেট প্রস্তাবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রাজস্ব জালের আওতা বাড়াতে এরই মধ্যে কর অঞ্চলের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অনলাইনে রাজস্ব জমা দিতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। যা আগামী বাজেটেই বাধ্যতামূলক করা হবে। অর্থ পাচার রোধে কাউকে ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের। জড়িতদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। সরকারের সব প্রতিষ্ঠান সমন্বয় করে কাজ করার প্রস্তুতি নিয়েছে। এনবিআর কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সততা নিশ্চিত করতে কঠোর অবস্থানে আছে কর্তৃপক্ষ।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা দেশ রূপান্তরকে বলেন, বৈঠকে এনবিআরের রাজস্ব আদায় নিয়ে কথা হয়। আইএমএফ মার্চের মধ্যে সরকারকে কমপক্ষে ২ লাখ ৭ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা কর আদায় করার শর্ত দিয়েছিল। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এনবিআর রাজস্ব আদায় করেছে ১ লাখ ৯৬ হাজার ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মার্চে ২ লাখ ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি আদায় হয়েছে বলে এনবিআর জানিয়েছে। তবে এ আদায় মূল হিসাব থেকে কম ছিল বলেও আলোচনায় উঠে আসে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য আইএমএফ প্রতিনিধিরা রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি বাড়াতে বলেছেন। এনবিআরের সঙ্গে আইএমএফের আলোচনায় উঠে আসে, শুল্ক-কর অব্যাহতির কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় করতে পারছে না এনবিআর। এ পরিমাণ অব্যাহতিপ্রাপ্ত শুল্ক-কর আদায় করা গেলে রাজস্ব আদায় প্রায় ৮০ শতাংশ বেশি হতো। স্বল্প করহার, কর অব্যাহতি এবং কর অবকাশ সুবিধাগুলোর কারণে দেশে কর-জিডিপির বর্তমান অনুপাত সম্ভাব্য প্রকৃত অনুপাতের তুলনায় ২ দশমিক ২৮ শতাংশ কম হচ্ছে বলে আলোচনা উঠে আসে। বাংলাদেশে কারা, কখন, কীভাবে কর ছাড় পায় তার সুস্পষ্ট নীতিমালা করার কথা জানিয়ে সংস্থাটির প্রতিনিধিরা বলেছে, কর ছাড়গুলো বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন সময়ে দেওয়া হয়েছে। কখনো কখনো অর্থবছরের মাঝখানে প্রজ্ঞাপন দিয়েও কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। এসব সুবিধা দেওয়ার ফলে লাভ কতটা হয়েছে তা যাচাই করা প্রয়োজন বলে আইএমএফ দলের প্রতিনিধিরা সুপারিশ করেছেন।

খেলাপি ঋণ নিয়ে আইএমএফের উদ্বেগ : ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ। একই সঙ্গে সংস্থাটির খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে জুনের মধ্যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সংস্থাটি। ঢাকা সফররত প্রতিনিধিদলটি গতকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্ম সলীম উল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করে এ উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। বৈঠকের একটি সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

এ ছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনী সম্পর্কে জানতে চেয়েছে ঢাকা সফররত আইএমএফ প্রতিনিধিদল। তারা ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়াও দেখতে চেয়েছে। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এখনই সেটা পাবলিক করা যাবে না। পাসের জন্য সংসদে উত্থাপন করা হলে তাদেরও কপি দেওয়া হবে। প্রতিনিধিদলের সামনে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার সার্বিক অবস্থা তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। তাতে বছরভিত্তিক খেলাপি ঋণের চিত্র, ঋণ বিতরণ, আদায়, মূলধন ঘাটতি, সঞ্চয় পরিস্থিতিসহ ব্যাংকগুলোর সার্বিক চিত্র তুলে ধরা হয়। ব্যাংক খাতের সার্বিক খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আইএমএফ। এ ছাড়া অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি গঠনের বিষয়েও তারা জানতে চায়। তবে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটা নিয়ে সরকার আপাতত ধীরগতিতে চলছে।

শেয়ার করুন