২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ১২:০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন
বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৪-২০২৩
বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য প্রস্তুত

বিদেশি বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি আরো বেশি পরিমাণে বড় আকারের জাপানি বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার টোকিওতে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তিনি বলেন, সরকারের বাস্তবসম্মত নীতির কারণে বাংলাদেশ বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও রপ্তানির এক আঞ্চলিক কেন্দ্র হতে যাচ্ছে।

বাসস জানায়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) যৌথভাবে ‘বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ’ শীর্ষক এই সম্মেলনের আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বাস্তবসম্মত নীতি ও দূরদৃষ্টির কারণে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন এবং এই অঞ্চলে ও এর বাইরে বিভিন্ন গন্তব্যে রপ্তানির আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে।’

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জেসিসিআই ও এফবিসিসিআইয়ের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ ও জাপানের বেসরকারি কম্পানির মধ্যে ১১টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) বিনিময় করা হয়। সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম।

বাংলাদেশে বিনিয়োগে রিটার্ন ধারাবাহিকভাবে বেশি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ ছাড়া বাংলাদেশের ব্যবসাবান্ধব রাজস্ব ও অ-আর্থিক নীতি ও প্রণোদনা, স্থিতিশীল গণতন্ত্র, বিচক্ষণ শাসন ও নেতৃত্ব বিদেশি বিনিয়োগে ভালো রিটার্নের নিশ্চয়তা দিচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে আপনাদের আশ্বস্ত করতে পারি যে বাংলাদেশ বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের জন্য অটুট ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দেয়। তাই আমরা, বিশেষ করে জাপানি বিনিয়োগকারীসহ বিশ্বের সব বিনিয়োগকারীকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের সুযোগগুলো দেখার জন্য স্বাগত জানাই।’ তিনি বলেন, ‘তবে প্রকৃত বিনিয়োগ এখনো কম। আমরা জাপানের কাছ থেকে আরো বিনিয়োগ চাই। আমি আপনাদের সবাইকে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাগুলো অনুসন্ধান করতে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৭ কোটি মানুষের দেশ বাংলাদেশ একটি ক্রমবর্ধমান বাজার এবং প্রায় ৩০০ কোটি ভোক্তার একটি বৃহৎ বাজারের কেন্দ্রস্থলে এর অবস্থান, যা ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য একটি বিশাল আকর্ষণ। শেখ হাসিনা বলেন, এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চ প্রজেকশন রিপোর্ট ইঙ্গিত করে যে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাজ্য ও জার্মানিকে ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী নবম বৃহত্তম ভোক্তা বাজার হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার ব্যবসা করার উপায়গুলো সাবলীল, সহজতর ও কার্যকর করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগের জন্য তাঁর সরকার ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাই-টেক ও সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণ করছে। তিনি বলেন, ‘আমি জাপানি বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে চাই যে বাংলাদেশ আপনাদের জন্য প্রস্তুত এবং সেখানে গেলে আপনাদের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা হবে। আপনাদের ব্যবসার সুবিধার জন্য প্রয়োজনীয় সব সংস্থা ও কাঠামো তৈরি করা হয়েছে।’

‘পরাজয়ের ভয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় না’ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রাতে জাপানপ্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বলেন, বিএনপি-জামায়াত চক্র কিভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে; তারা মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে এবং জনগণের কোনো উন্নয়ন চায় না এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে তারা নির্বাচনে পরাজয়ের আশঙ্কা করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়, আওয়ামী লীগের আমলেই দেশে গণতন্ত্র চর্চা হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে বলে যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই এবং বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় না। বিএনপি কোন মুখ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবে, ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট ২৯টি আসন পেয়েছিল এবং নির্বাচনের ন্যায্যতা সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়নি। তারা ২০টি দল, কিন্তু তারা মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল এবং পরে তারা উপনির্বাচনে আরো একটি আসন পেয়েছিল।’ তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট পরাজয়ের ভয়ে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বর্জন করেছিল।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত চক্র ৭০টি সরকারি অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি অগ্নিসংযোগ করে ৫০০ জনকে হত্যা এবং সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি করেছিল। তিনি বলেন, ‘মানুষের যদি মানবিক গুণ থাকে, তাহলে তারা কখনোই মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে না। যারা এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে, তারা কোন মুখে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে?’

‘বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই’—এমন যাঁরা বলতে চান তাঁদের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা মনে করে যে বাংলাদেশে শুধু তখনই গণতন্ত্র ছিল, যখন দেশে স্বৈরাচার, ভোট কারচুপি এবং ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করা হয়েছিল।

‘নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশ-জাপান অংশীদারিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে’ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে সোচ্চার সমর্থন জানানোর জন্য জাপানিদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নতুন প্রজন্ম আগামী বছরগুলোতে দুই দেশের মধ্যেকার ‘দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব’ এবং ‘ঈর্ষণীয় অংশীদারি’কে এগিয়ে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘আমি আত্মবিশ্বাসী যে জাপানের জনগণ অতীতের মতোই আমাদের প্রয়োজনে সরকারের পাশাপাশি সব সময় আমাদের পাশে থাকবে। ৫০ বছর ধরে বিদ্যমান দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব ও ঈর্ষণীয় অংশীদারিকে আমাদের নতুন প্রজন্ম আগামী বছরগুলোতে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

টোকিওর আকাসাকা প্যালেস গেস্টহাউসে গতকাল চার জাপানি নাগরিককে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন চার জাপানির সম্মানে প্রশংসাপত্র পাঠ করেন। তাঁরা হলেন জাপান রেড ক্রস সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ইমেরিটাস তাদাতেরু কোনো, অধ্যাপক গ্যালপ পেমা, রাজনৈতিক নেতা হিদেও তাকানো (মরণোত্তর) এবং ফটো সাংবাদিক তাইজো ইচিনোসে (মরণোত্তর)। অনুষ্ঠানে সম্মাননাগ্রহীতাদের পক্ষে অধ্যাপক গ্যালপ তাঁর অনুভূতি ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশে বিশ্বমানের শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণ করবে জাপান : বিশ্বখ্যাত স্থপতি তাদাও আন্দো কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত তাদাও আন্দো আর্কিটেক্ট অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ঢাকায় একটি শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণ করবে। গতকাল টোকিওর আকাসাকা প্রাসাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় তাদাওর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল এ কথা জানায়।

সাক্ষাতের আগে জাপানের অনুদানে বাংলাদেশে একটি শিশু গ্রন্থাগার নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর ও তাদাও আন্দো আর্কিটেক্ট অ্যাসোসিয়েটসের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

চার দিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীরা আজ শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে জাপান ছাড়বেন।

শেয়ার করুন