২৭ নভেম্বর ২০২৪, বুধবার, ১০:০৪:৫২ পূর্বাহ্ন
রিজার্ভ ২৪০০ কোটি ডলারে রাখার চেষ্টা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৫-২০২৩
রিজার্ভ ২৪০০ কোটি ডলারে রাখার চেষ্টা

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে ধরে রাখতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে তারা বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা নতুনভাবে বিন্যস্ত করেছে।

এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করতে আমদানিতে আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ, বিদেশ ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা, সভা-সেমিনারের মতো কম গুরুত্বপূর্ণ খাতে বৈদেশিক মুদ্রা ছাড়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে।

একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়াতে রপ্তানির নতুন বাজার অনুসন্ধান, নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়ানো, অপ্রত্যাবাসিত রপ্তানি আয় দেশে ফেরত আনা, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো।

পাশাপাশি চড়া সুদের স্বল্পমেয়াদি বৈদেশিক ঋণ কমিয়ে কম সুদের দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেশি নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। 

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেখেছে, ডলার সংকট আগামী অর্থবছরেও থাকবে।

তবে সংকট চলতি অর্থবছরের মতো এতটা প্রকট হবে না। যে কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো ডলার সাশ্রয় করার নীতি অনুসরণ করে যাচ্ছে। যা আগামীতেও অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

আইএমএফ জুনের মধ্যে দেশের গ্রস রিজার্ভ ২ হাজার ৯৯৬ কোটি ডলারে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। যা মোট আমদানি ব্যয়ের সাড়ে ৩ মাসের সমান। একই সঙ্গে ওই সময়ে নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলারে নেমে আসতে পারে।

যা দিয়ে ২ দশমিক ৯ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। অর্থাৎ ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের চেয়ে কম। জুনে রিজার্ভ বেড়ে ৩ হাজার ৪২৩ কোটি ডলারে উঠতে পারে। নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৮৭৩ কোটি ২০ লাখ ডলারে নামতে পারে। যা দিয়ে ৩ দশমিক ২ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। 

এদিকে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। ৮ মে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দেনা পরিশোধের পর রিজার্ভ ২ হাজার ৯৭০ কোটি ডলারে নেমে যায়।

৯ মে বিশ্বব্যাংক বাজেট সহায়তা বাবদ ৫০ কোটি ৭০ লাখ ডলার ছাড় করলে রিজার্ভ আবার বেড়ে ৩ হাজার ৯৬ কোটি ডলারে ওঠে। ১১ মে রিজার্ভ আবার কমে ৩ হাজার ৩৫ কোটি ডলারে নেমে যায়।

গত ১৭ মে রিজার্ভ আরও কমে ৩ হাজার ১৮ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আবার আকুর দেনা বাবদ ১১৮ কোটি ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আরও কমে ২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের ঘরে নেমে আসতে পারে।

এছাড়া মে ও জুনের মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ও এলসির দেনা শোধ করতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে আরও ১০০ কোটি ডলারের মতো বিক্রি করতে হবে। ফলে রিজার্ভ আরও কমবে।

তবে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স থেকে যে ডলার আয় হয় তা দিয়ে এখন আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণ শোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। 

এ পরিস্থিতিতে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী জুনের মধ্যে নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ২০ লাখ ডলারে ধরে রাখা সম্ভব হবে না। যে কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাচ্ছে নিট রিজার্ভ কমপক্ষে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে ধরে রাখতে।

যা দিয়ে প্রায় ৫ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হবে। আন্তর্জাতিক নিরাপদ মান অনুযায়ী কমপক্ষে ৩ মাসের আমদানি ব্যয়ের সমান রিজার্ভ থাকলেই তাকে নিরাপদ ধরা হয়। 

বর্তমানে কঠোর নিয়ন্ত্রণের ফলে দেশের মাসিক আমদানি ব্যয় ৫০০ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। আগে মাসে ৮৫০ কোটি ডলারও ব্যয় হয়েছে। সে হিসাবে আমদানি কমেছে ৩৫০ কোটি ডলার। আমদানিতে আরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে। ফলে রিজার্ভ সাশ্রয় করা সম্ভব হবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। 

আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী বর্তমান রিজার্ভ থেকে বিভিন্ন তহবিলে বিনিয়োগ করা অর্থ বাদ দিতে হবে। বিভিন্ন তহবিলে আগে বিনিয়োগ ছিল ৮০০ কোটি ডলার। এখন কমিয়ে ৫৫০ কোটি ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে।

এ থেকে আরও কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে রিজার্ভ থেকে ৪০০ কোটি ডলার বাদ দিতে হবে। এতে নিট রিজার্ভ ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে। 

সূত্র জানায়, ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স ব্যাংক ও কার্ব মার্কেটে ডলারের দামের ব্যবধান কমানো হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি ঋণ ছিল প্রায় ২ হাজার কোটি ডলার। এর মধ্য থেকে প্রায় ৮০০ কোটি ডলার ইতোমধ্যে পরিশোধ করা হয়েছে।

চলতি বছরের মধ্যে আরও ৮০০ কোটি ডলার পরিশোধ করা হবে। স্বল্পমেয়াদি ঋণ এখন কম নেওয়ার নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। আমদানি কমানোর ফলে এ ঋণও কমে যাচ্ছে।

কারণ বেশির ভাগ স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হয় আমদানির বিপরীতে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ বেশি নেওয়া হবে। যা রিজার্ভের জন্য সহায়ক হবে। 

এদিকে আইএমএফের পূর্বাভাসে জুনে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি হিসাবে ভারসাম্য জিডিপির আকারের হিসাবে ৩ দশমিক ২ শতাংশের মধ্যে থাকবে। আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ৪ দশমিক ২ শতাংশ হবে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা কমে সাড়ে ৩ শতাংশ হবে। পরের ২ অর্থবছরে ৩ শতাংশের মধ্যে আসবে। অর্থাৎ আগামী বছর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ার ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়বে। এতে আমদানি বেশি হবে।

এর বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় কম হবে। ফলে ঘাটতি বাড়বে। চলতি অর্থবছরে রেমিট্যান্স ২ শতাংশ বাড়তে পারে। আগামী অর্থবছরে তা ৭ শতাংশ বাড়তে পারে। চলতি অর্থবছরে রপ্তানি আয় ৭ দশমিক ২ শতাংশ কমতে পারে। আগামী অর্থবছরে বেড়ে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। আমদানি চলতি অর্থবছরে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ কমতে পারে। আগামী অর্থবছরে বেড়ে ১৪ দশমিক ২ শতাংশ হতে পারে। 

চলতি অর্থবছরে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৭ হাজার ৯৫২ কোটি ডলারে সীমাবদ্ধ থাকবে। আগামী বছর তা বেড়ে ৮ হাজার ৯০০ কোটি ডলার হবে। ঋণের দিক থেকে বাংলাদেশের ঝুঁকি নিম্নমানের। 

এদিকে রপ্তানি আয় বাড়ানোকে বড় চ্যালেঞ্জিং মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ, বাংলাদেশের বড় বাজারগুলোতে এখন অর্থনৈতিক মন্দা প্রকট। এতে রপ্তানির আদেশ কমেছে গড়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।

ফলে কাঁচামাল আমদানিও কমেছে। এতে আগামীতে রপ্তানি আয় আরও কমতে পারে। তবে আগে যেসব পণ্য রপ্তানি করা হয়েছে, মন্দার কারণে আয় দেশে আসেনি। সেগুলো দেশে আনার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

একই সঙ্গে নতুন বাজার অনুসন্ধান ও নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নতুন বাজারে রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ। এতে আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন