ভয়াবহ লোডশেডিং বন্ধ এবং বিদ্যুৎ-সংকট সমাধানের দাবিতে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি পুলিশের বাধায় পণ্ড হয়ে গেছে। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে গেলে জিরো পয়েন্ট মোড়ে তাদের মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। সমাবেশ থেকে আগামী ১৯ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতন্ত্র মঞ্চ।
সমাবেশ শেষে মিছিল নিয়ে জিরো পয়েন্ট মোড়ে গেলে সেখানে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয় পুলিশ। তখন পুলিশের সঙ্গে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ব্যারিকেডের টানাটানিতে উভয় পক্ষের একাধিক সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরে সেখানেই সমাবেশ করেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা-কর্মীরা।
এ সময় গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকার পুলিশ বাহিনীকে জনগণের কণ্ঠরোধ করতে বাধ্য করছে। বিক্ষোভ দমন করতে ব্যবহার করছে। যে পুলিশের বেতন জনগণের ট্যাক্সের টাকায় হয় সে পুলিশ আজ মানুষের বিক্ষোভ দমন করছে। পুলিশ আজ লুটেরাদের পাহারাদারে পরিণত হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই, অবৈধ সরকারের নির্দেশে জনগণের ওপর হামলে পড়লে জনগণ সমুচিত জবাব দেবে। এরপর আরও ঘেরাও হবে, সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও করে বাংলাদেশের মানুষ দাবি আদায় করবে।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ যেভাবে বাধা দিয়েছে তার নিন্দা জানাই। পুলিশের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করুন। অবৈধ সরকারের সহযোগী হিসেবে আপনাদের দেশের মানুষ দেখতে চায় না। গত ১৫ বছরে আপনারা জনগণের বিরুদ্ধে যে অপরাধ করেছেন তার তালিকা হয়েছে, প্রত্যেকের অপরাধের হিসাব নেওয়া হবে। এই সরকারের পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে। এই ঈদের পর আরেকটা ঈদ এই সরকার দেখতে পাবে না।’
মিছিল-পূর্ব সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এই বছর বাংলাদেশের যত মুদ্রার ঘাটতি দেখা গেছে তা গত কয়েক বছরে হয়নি। এ সরকারের কাছে বাংলাদেশের জনগণ বিদ্যুৎ পাবে না, নিরাপত্তা পাবেন না, ভোট দিতে পারবেন না। এই সরকারের যাওয়ার সময় হয়েছে। এই সরকার হচ্ছে স্বৈরাচারী, বদমাইশ, লুটপাটের সরকার। এই সরকার আগে আমাদের ভয় দেখাত। জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য নানা কায়দা দেখাত। এ জন্যই আমরা বলি, তোমাদের সময় হয়েছে তোমরা এবার যাও।’
আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘এই দেশের অর্থনীতির অবস্থা খুবই খারাপ। জনগণের স্বার্থে মানুষের স্বার্থে এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এই সরকারকে আগে পদত্যাগ করতে হবে। এই মুহূর্তে দরকার, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ সরকারের পায়ের তলে মাটি নাই।’
সভাপতির বক্তব্যে কর্মসূচি ঘোষণা করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ‘এই সরকারের পদত্যাগসহ গণতন্ত্র মঞ্চের ১৪ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আগামী ১৯ থেকে ২১ জুলাই গণতন্ত্র মঞ্চ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ কর্মসূচি করবে।’
মিছিলে বাধার প্রসঙ্গে পুলিশের নিউমার্কেট জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) শাহেন শাহ বলেন, ‘সচিবালয় সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখানে হুট করেই কেউ মিছিল নিয়ে আসতে পারে না বা এর সামনে কেউ সমাবেশ করতে পারে না। তাই গণতন্ত্র মঞ্চের মিছিল নিয়ে এখানে আসার সুযোগ নেই। এ জন্যই মিছিলে বাধা দেওয়া হয়েছে। আমরা ধৈর্যের সঙ্গে তাদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি। আমাদের বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।’