রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তিন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার তারিখ পিছিয়েছে। আগামী ১৮ জুলাই এই প্রতিবেদন দাখিলের দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার মামলা তিনটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু এদিন পুলিশ প্রতিবেদন জমা দেয়নি। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শুভ্রা চক্রবর্তী প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ওই তারিখ ধার্য করেন।
মামলা তিনটি হলো- ডেলিভারিম্যান নাহিদ হত্যা মামলা, পুলিশের ওপর হামলা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা।
গত ১৮ এপ্রিল দিবাগত রাত ১২টায় নিউমার্কেট ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়ান। পরদিন মঙ্গলবারও দিনভর থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। মঙ্গলবার রাতে দুপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত নাহিদ (১৮) নামে এক তরুণ চিকিৎসাধীন মারা যান। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সংঘর্ষে আহত দোকানী মোরসালিন (২৬)।
এ ঘটনায় নিহত নাহিদের বাবা মো. নাদিম হোসেন বাদী হয়ে নিউমার্কেট থানায় অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করে হত্যা মামলা করেন। মুরসালিনেরও নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা করেন তার ভাই নুর মোহাম্মদ।
মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ১৭২৪। দুজনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে দুটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এ ছাড়া সংঘর্ষ ও বোমাবাজির ঘটনায় আলাদা দুটি মামলা করেছে পুলিশ। আরেকটি মামলা করেছেন সংঘর্ষের দিন ভাঙচুর হওয়া অ্যাম্বুলেন্সের মালিক। এর মধ্যে হত্যা মামলা দুটির তদন্ত করছে গোয়েন্দা পুলিশ। বাকি তিন মামলার তদন্ত করছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ।
এই সংঘর্ষের ঘটনায় উসকানি দেওয়ার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পরে পুলিশ বাদী হয়ে ওই দুটি মামলা দায়ের করেছে। একটি মামলা বিস্ফোরক আইনে এবং অন্যটি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে। দুই মামলাতে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মচারী ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীসহ মোট ১৪০০ জনকে আসামি করা হয়।
সরকারি কাজে বাধা, পুলিশের ওপর হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জখম ও ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেনকে ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। ওই মামলায় মকবুল ছাড়াও আরও ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন আমির হোসেন আলমগীর, মিজান, টিপু, হাজি জাহাঙ্গীর হোসেন পাটোয়ারী, হাসান জাহাঙ্গীর মিঠু, হারুন হাওলাদার, শাহ আলম শন্টু, শহিদুল ইসলাম শহিদ, মিজান ব্যাপারী, আসিফ, রহমত, সুমন, জসিম, বিল্লাল, হারুন, হেহা, মনির, বাচ্চু, জুলহাস, মিঠু, মিন্টু ও বাবুল।
পুলিশের নিউমার্কেট অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহেনশাহ মাহমুদ জানান, গোয়েন্দা তথ্য ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এজাহারে আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে সংঘর্ষের মামলায় নিউমার্কেট থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মকবুল হোসেনকে এর আগে গ্রেফতার করে পুলিশ। নাহিদকে হত্যার ঘটনায় ইতোমধ্যে পাঁচজনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি। তারা হল-মো. আবদুল কাইয়ুম, পলাশ মিয়া, মাহমুদ ইরফান, মো. ফয়সাল ইসলাম ও মো. জুনাইদ বোগদাদী। এরা ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। সংঘর্ষের সময় তারা ধারাল অস্ত্র নিয়ে সামনের সারিতে ছিল।