২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৮:২৫:১১ অপরাহ্ন
চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতা: পানি আটকে যায় ৩ সংস্থার ১২৩ পাইপে
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৮-২০২৩
চট্টগ্রাম নগরে জলাবদ্ধতা: পানি আটকে যায় ৩ সংস্থার ১২৩ পাইপে

বর্ষাকালে বৃষ্টি ঝরলে চট্টগ্রাম নগরীতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। চারটি বড় প্রকল্প নিয়েও জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। এই সমস্যার পেছনে অনেকগুলো কারণ থাকলেও সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা ভোগাচ্ছে নগরবাসীকে। জলাবদ্ধতা সমস্যার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে, নগরজুড়ে ব্রিজ-কালভার্টের নিচে থাকা তিন সেবা সংস্থার ১২৩ পাইপলাইন। খালে ফেলা বর্জ্য এসব পাইপলাইনে আটকে থাকে। এ কারণে অতিবৃষ্টি ও জোয়ারের পানি নামতে অসুবিধা হয়।


‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শিরোনামে চট্টগ্রাম নগরীতে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার চলমান মেগা প্রকল্প কর্তৃপক্ষ ব্রিজ-কালভার্টের নিচে তিন সেবা সংস্থার ১২৩টি পাইপলাইন চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার পাইপলাইন যায় ৫৯টি ব্রিজ-কালভার্টের নিচ দিয়ে, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) সরবরাহ লাইন যায় ৪৪টির নিচ দিয়ে এবং বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি লিমিটেডের সংযোগ লাইন যায় ২০টি ব্রিজ-কালভার্টের নিচ দিয়ে। বর্ষা মৌসুমের আগেই পাইপলাইনগুলো সরাতে তিন সেবা সংস্থাকে গত ফেব্রয়ারির শেষ দিকে চিঠি দেওয়া হয় মেগা প্রকল্পের পরিচালক লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলীর পক্ষ থেকে। পাইপগুলো না সরালে বর্ষায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু চিঠির ফলাফল এখনো শূন্য বলে জানা গেছে।


জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (ইঞ্জিনিয়ারিং) প্রকৌশলী মো. শফিউল আজম খান বলেন, ‘গ্যাসলাইন সরানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা থেকে আমাদের বাজেট দেওয়া হয়নি। এই কারণে লাইনগুলো সরানো যায়নি।’


সমন্বয়হীনতার ব্যাপারে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী জানান, ‘সংস্থাগুলোর মধ্যে আসলে সমন্বয়ের লেশমাত্র নেই। এখানে কার কথা কে শোনে! আর এই সমন্বয়হীনতার খেসারত দিচ্ছি আমরা নগরবাসী।’


চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) তত্ত্বাবধানে উল্লিখিত মেগা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনী। প্রকল্প কর্তৃপক্ষ নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে তিন সেবা সংস্থার ১২৩টি ব্রিজ-কালভার্টের নিচে সরবরাহ লাইনের সঙ্গে আবর্জনা আটকে যাওয়ার যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে। এরপর সংশ্লিষ্ট সেবা সংস্থাগুলোকে অপসারণের বিষয়ে তাগাদা দেয়।


এদিকে মেগা প্রকল্পের আওতায় ৪৫টি ব্রিজ ও ৬টি কালভার্টের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেনাবাহিনী নির্মিত এসব ব্রিজ ও কালভার্টের নিচে সেবা সংস্থাগুলোর লাইন নেই। এ কারণে আবর্জনা আটকে জলাবদ্ধতা হওয়ার সুযোগ নেই বলে জানান লে. কর্নেল মো. শাহ্ আলী।


বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে জাপানের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জাইকার করা সাম্প্রতিক এক বর্জ্য প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার ১০০ টন বর্জ্য উৎপাদনের তথ্য জানান চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাশেম। এসব বর্জ্যের মধ্যে ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টন সিটি করপোরেশন সংগ্রহ করতে পারে। বাকি বর্জ্য নগরীর নালা-নর্দমায় ও খালে পড়ে পানির প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। নগরীতে জলাবদ্ধতার জন্যও দায়ী এসব বর্জ্য।


এই বিষয়ে আবুল হাশেম জানান, উল্লিখিত তিন সেবা সংস্থার পাইপগুলো দ্রুত অপসারণ করা জরুরি। এগুলো জলাবদ্ধতার জন্য অনেকাংশে দায়ী। 


সব ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ

এদিকে অতিবৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রাম মহানগরীর সরকারি ও বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ মঙ্গলবার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অবস্থার উন্নতি সাপেক্ষে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গতকাল সোমবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল খায়ের এ তথ্য জানান। তিনি জানান, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে আজ ৮ আগস্ট শুধু চট্টগ্রাম মহানগরীর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের আওতাধীন সরকারি ও বেসরকারি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস বন্ধ থাকবে।


চট্টগ্রামের আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত রোববার দুপুর ১২টা থেকে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৪২৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে আরও দুই দিন অতি ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। তবে পরশু দিন থেকে আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হবে। যদিও ১২ আগস্ট পর্যন্ত এ ধরনের মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে পাহাড় ধসের আশঙ্কাও করা হচ্ছে।


ৃেৃৃ

শেয়ার করুন