সব ধরনের অন্যায় কর্ম যেন পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টির কাছে এ প্রত্যাশাই করেন, তার বান্দারা যেন সব ধরনের অন্যায় ও পাপ থেকে মুক্ত থাকে।
তারা যেন কারও সঙ্গে জুলুম না করে এবং তার দ্বারা যেন কোনো ধরনের মন্দকর্ম সংঘটিত না হয়। সে যেন নিজেকে এমনভাবে গড়ে তোলে, যাতে করে তার কথা ও কাজ দ্বারা সৃষ্টির কেউ যেন কোনো ধরনের কষ্ট না পায়। আমি যদি নিজেকে একজন আল্লাহপ্রেমিক হিসাবে গড়ে তুলতে চাই তাহলে অবশ্যই আমাকে আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে।
আমি যে ধর্মের অনুসারীই হই না কেন, আমি যদি আমার ধর্মের মূল শিক্ষা মেনে জীবন পরিচালনা করি তাহলে আমার দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ সংঘটিত হতেই পারে না।
অন্যায়ভাবে মানুষের ওপর যারা জুলুম করে তাদের সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা সতর্ক করেছেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘কিন্তু তাদের অভ্যন্তরে বিভিন্ন দল মতভেদ করে। অতএব, ওই লোকদের জন্য, যারা জুলুম করেছে, তাদের জন্য রয়েছে এক কষ্টদায়ক দিনের আজাবের দুর্ভোগ’ (সূরা আয যুখরুফ, আয়াত : ৬৫)।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত জাবের (রা.) বর্ণনা করেছেন, হজরত রাসূলে করিম (সা.) বলেন, ‘জুলুম নির্যাতন করা থেকে বিরত থাকো, কেননা কিয়ামত দিবসে তোমার কৃত জুলুম অন্ধকাররূপে ধেয়ে তোমার সামনে এগিয়ে আসবে। লোভ-লালসা, কৃপণতা ও বিদ্বেষপরায়ণতা থেকে দূরে থাকো, কেননা লোভ-লালসা, কৃপণতা ও বিদ্বেষপরায়ণতা আত্মমর্যাদাকে আক্রান্ত করে হত্যা করায় উসকিয়ে দেয় আর সম্মানজনক বস্তুর মানহানি ঘটায়’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, ৩য় খণ্ড, ৩২৩ পৃষ্ঠা)।
ইসলাম এমন এক শান্তিপ্রিয় ধর্ম, যেখানে কাউকে গালিগালাজ তো দূরের কথা কোনোরূপ অন্যায় কাজের শিক্ষা এতে পাওয়া যায় না। এক কথায় ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষা ইসলাম প্রদান করে।
একটি হাদিস রয়েছে, মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনকে গালিগালাজ করা বিদ্রোহাত্মক কর্ম আর তার সঙ্গে লড়াই করা কুফর’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, ১ম খণ্ড, ৪৩৯ পৃষ্ঠা, বৈরুতে মুদ্রিত)। অপর একটি হাদিসে হজরত আব্দুর রহমান বিন শিবল বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ব্যবসায়ীরা দুষ্ট প্রকৃতির হয়। বর্ণনাকারী বলেন, নিবেদন করা হলো, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.)!
আল্লাহতায়ালা ব্যবসা-বাণিজ্য কি বৈধ করেননি? রাসূল করিম (সা.) বললেন, ‘কেন নয়? কিন্তু তারা যখন বেচাকেনা করে তখন মিথ্যা বলে আর কসম খেয়ে খেয়ে মূল্য বাড়ায়’। বর্ণনাকারী বলেন, মহানবি (সা.) আরও বলেন, ‘পাপাচারীরা নরকবাসী’। নিবেদন করা হলো ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! পাপাচারী কারা?’ এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘নারীরাও পাপাচারী হয়ে যায়।’
একজন ব্যক্তি নিবেদন করল ‘হে রাসূলুল্লাহ (সা.)! ওরা কি আমাদের মাতা, ভগ্নি আর সহধর্মিণী নয়?’ মহানবি (সা.) উত্তরে বললেন ‘কেন নয়! তবে তাদের কিছু দেওয়া হলে তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না আর তাদের ওপর যখন কোনো পরীক্ষা আপতিত হয় তখন তারা ধৈর্যও ধারণ করে না’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, ২য় খণ্ড, ৪২৮ পৃষ্ঠা, বৈরুতে মুদ্রিত)।
এখানে সেসব ব্যবসায়ীর ভেবে দেখা দরকার যারা মানুষদের ঠকায়, মাপে কম দেয়, খারাপ জিনিস দেয় আর অধিক মুনাফার জন্য মজুত করে রাখে। তাই ব্যবসা-বাণিজ্য খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন হওয়া উচিত, সৎ থাকা চাই।
আমরা যদি কারও অধিকার হরণ করি তাও কিন্তু জুলুমের পর্যায়ে পৌঁছে। এ বিষয়ে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ বর্ণনা করেন, আমি মহানবির (সা.) কাছে নিবেদন করি, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সা.)! কোন জুলুমটি সবচেয়ে বড়?’
উত্তরে হজরত রাসূল করিম (সা.) বললেন, ‘সব থেকে বড় অন্যায় হলো, কোনো ব্যক্তি নিজের ভাইয়ের প্রাপ্য অংশ থেকে একহাত পরিমাণ জমি জবরদখল করে। এমনকি ওই জমির এক টুকরা পাথরও যদি সে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে নিয়ে থাকে, তবে পাথরের তলার ওই জমিটুকু পরিপূর্ণ আকারের এক কাঁটায় পরিণত করে কিয়ামত দিবসে তার গলায় ঢুকিয়ে দেওয়া হবে আর জমির তলদেশে কি লুকানো আছে তা ওই পবিত্র সত্তা ব্যতিরেকে কেউই জানে না, যিনি তা সৃষ্টি করেছেন’ (মুসনাদ আহমদ বিন হাম্বল, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৬, বৈরুতে মুদ্রিত)।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সব ধরনের অন্যায়, জুলুম ও মন্দ কর্ম থেকে বেঁচে চলার এবং শ্রেষ্ঠ নবি (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণ করে জীবন পরিচালনার তৌফিক দান করুন, আমিন।