০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, মঙ্গলবার, ১১:১৩:০০ অপরাহ্ন
বেনাপোল কাস্টমসের ১৯ কেজি সোনা চুরি: সাক্ষ্য গ্রহণেই আটকা বিচার
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৯-২০২৩
বেনাপোল কাস্টমসের ১৯ কেজি সোনা চুরি: সাক্ষ্য গ্রহণেই আটকা বিচার

বেনাপোল কাস্টমস থেকে ১৯ কেজি সোনা চুরির মামলার চার বছর পেরিয়ে গেলেও বিচারকাজ সাক্ষ্য গ্রহণে আটকে আছে। মামলায় ৩৪ সাক্ষীর মধ্যে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন ১০ জন। এমনকি অভিযোগপত্রভুক্ত সাত আসামির সবাই জামিনে রয়েছেন।


সাক্ষীরা নির্ধারিত সময়ে আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় মামলাটির বিচার থমকে আছে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এদিকে ঘটনাস্থলে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা এবং প্রশাসনিক নিরাপত্তার মধ্যে লকার খুলে চুরি হওয়া সোনা চার বছরেও উদ্ধার হয়নি।


বেনাপোল কাস্টমস ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ১১ নভেম্বর—তিন দিন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী, সরকারি ছুটি এবং ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে কাস্টমস বন্ধ ছিল। সেই সময়ে কাস্টম হাউসের পুরাতন ভবনের দ্বিতীয় তলার গুদামের তালা ভেঙে চোরেরা ভল্ট থেকে ১৯ কেজি ৩১৮ দশমিক তিন গ্রাম সোনা চুরি করেন। চুরি হওয়া সোনার সে সময়ে বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। এই ভল্টের চাবি ছিল তৎকালীন ভল্ট ইনচার্জ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুলের কাছে। ১২ নভেম্বর সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা এমদাদুল হক বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে চুরির মামলা করেন বেনাপোল পোর্ট থানায়।


ভল্ট ইনচার্জ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুলকে তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। পরে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর মামলাটি অগ্রগতির জন্য তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। দেড় বছরেরও বেশি সময় তদন্ত শেষে ২০২১ সালের ১৪ জুন পাঁচ কাস্টমস কর্মকর্তাসহ সাতজনকে আটক দেখিয়ে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। বলা হয়, লুট করা স্বর্ণের বার আসামিরা বিক্রি করে ফেলায় উদ্ধার সম্ভব হয়নি। বর্তমানে আসামিরা সবাই হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন।


অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন সাবেক সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও ভল্ট ইনচার্জ বিশ্বনাথ কুণ্ডু, সাবেক ভল্ট ইনচার্জ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা শাহিবুল সরদার, শহিদুল ইসলাম মৃধা, আর্শাদ হোসাইন, মোহাম্মদ অলিউল্লাহ, কাস্টমসের এনজিওকর্মী আজিবার রহমান মল্লিক এবং বেনাপোলের ভবেরবের পশ্চিমপাড়া গ্রামের শাকিল শেখ।


বেনাপোলের সাধারণ ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান রুবেল বলেন, ‘এতগুলো সোনা খেয়ে ফেলার জিনিস না। সোনা বা সোনা বিক্রির টাকা এত দিনে কোনোটাই উদ্ধার হলো না? আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও সবাই জামিনে আছেন। আমাদের দেশের প্রশাসন এখন অনেক দক্ষ। আরও আন্তরিক হলে চুরি হওয়া সোনা বা বিক্রির টাকা উদ্ধার কঠিন কিছু না।’


বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ বিপুল বলেন, ‘কাস্টমসের লকার থেকে সোনা চুরির ঘটনা চার বছর পার হচ্ছে। অথচ তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সেই সোনা উদ্ধার না হওয়ায় আমরা হতাশ। বেনাপোল কাস্টম হাউস থেকে সোনা চুরি করে চক্রটি অনেকটা পার পেয়ে যাওয়ায় এবার ঢাকা বিমান বন্দরে একইভাবে চুরিতে অপরাধীদের সাহস জুগিয়েছে। যদি বেনাপোল কাস্টমস থেকে লুট হওয়া সোনা উদ্ধার হতো, তাহলে নতুন করে সরকারের এই সম্পদ লুটের কথা শুনতে হতো না।’


যশোরের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) এম ইদ্রিস আলী বলেন, আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণেই এ মামলার কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রয়েছে। তবে দ্রুত সময়ে অন্যদের সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যে দিয়ে মামলাটি শেষ করা হবে।


মামলার তদন্ত সংস্থা যশোর সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ‘সাত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদে সোনা চুরির সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। মামলাটি বিচারাধীন।’


শেয়ার করুন