ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ রাষ্ট্রীয় সফরে গতকাল রোববার রাতে ঢাকায় পৌঁছেছেন। জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার পর ভারতের নয়াদিল্লি থেকে তিনি ঢাকায় পৌঁছান।
মাখোঁকে বহনকারী বিশেষ উড়োজাহাজটি রাত ৮টা ১০ মিনিটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টকে ফুলের তোড়া দিয়ে বিমানবন্দরে স্বাগত জানান। রাষ্ট্রীয় অতিথিকে সেখানে লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সশস্ত্র বাহিনীর একটি দল প্রেসিডেন্টকে গার্ড অব অনার দেয়। এ সময় ২১ বার তোপধ্বনি করা হয়। বাজানো হয় উভয় দেশের জাতীয় সংগীত।
ইমানুয়েল মাখোঁ গতকাল তাঁর সম্মানে প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত এক রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেন। আজ সোমবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে অংশ নেবেন। দুই নেতা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, ফরাসি বিনিয়োগ, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা, প্রযুক্তি হস্তান্তর, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করবেন বলে কূটনীতিকেরা জানান। ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ও তাঁদের আলোচনায় আসবে।
মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফেরাতে ফ্রান্সের সহযোগিতা চাইবে সরকার।
দুই নেতার উপস্থিতিতে কমপক্ষে দুটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা রয়েছে বলে কূটনীতিকেরা জানান।
ফরাসি প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণের জন্য একটি এবং এয়ারবাসের উড়োজাহাজ ক্রয়ের বিষয়ে আরও একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ থেকে ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে দেশের স্থলভাগ, জলভাগ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের ওপর নজর রাখা যাবে বলে কর্মকর্তারা জানান।
এর আগে টেলিযোগাযোগ খাতে ব্যবহারের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে।
বড় উড়োজাহাজের জন্য মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের ওপর নির্ভরতা কমাতে চলতি বছরের শুরুর দিকে সরকার ফ্রান্সের এয়ারবাস কোম্পানি থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক সংহত করতে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের এই সফর বলে ঢাকায় দেশটির দূতাবাস জানায়।
বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট হুমায়ুন কবির বলেন, ফরাসি প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফর প্রধানত দেশটির বাণিজ্যিক স্বার্থে। ভারত মহাসাগরে দেশটির ভৌগোলিক ও সামরিক উপস্থিতি আছে। তাই বর্তমান বৈশ্বিক জটিল পরিস্থিতিতে ভারত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে দেশটির ভূকৌশলগত স্বার্থও আছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০২১ সালের নভেম্বরে প্যারিস সফরে দুই দেশ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার সম্মতিপত্রে সই করে। মাখোঁর ঢাকা সফরে প্রতিরক্ষা খাতে সাধারণ সহযোগিতার পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট সামরিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের আলোচনা আরও এগোনোর সম্ভাবনা আছে বলে জানান কূটনীতিকেরা।
ফ্রান্স বাংলাদেশের কাছে যুদ্ধবিমানসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম বিক্রিতে আগ্রহী বলে শেখ হাসিনার ফ্রান্স যাওয়ার আগে ২০২০ সালের মার্চে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঢাকা সফর করেন। দেশটির কর্মকর্তারা তখন বাংলাদেশের কাছে রাফায়েল জঙ্গিবিমান বিক্রির প্রস্তাব দেন।
মাখোঁ ফ্রান্সের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট, যিনি বাংলাদেশে এসেছেন। এর আগে ১৯৯০ সালে এসেছিলেন তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ৩৩ বছর পর প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের এই সফর দুই দেশের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে এক ‘নতুন উচ্চতায়’ নিয়ে যাবে।
মিতেরার সফরের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ছিল ২১ কোটি ডলার মূল্যমানের। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ৫০০ কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়ে থাকে।
প্রেসিডেন্ট মাঁখোর আগামীকাল বিকেলে ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে।