ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু গ্রাহক কিছু জানতেই পারেননি। যখন জানতে পারলেন, তখন ব্যাংক হিসাব প্রায় ফাঁকা। ব্যাংক স্টেটমেন্ট তুলে এই গ্রাহক জানতে পারেন, মোবাইল ব্যাংকিং বিকাশের ১০টি নম্বরে তাঁর হিসাব থেকে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এই গ্রাহক সন্দেহ করছেন, টাকা তুলে নেওয়ার এই ঘটনার সঙ্গে ব্যাংকের কেউ জড়িত।
হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়ার এই ঘটনা ঘটেছে বেসরকারী ইস্টার্ন ব্যাংকের রাজশাহী শাখা থেকে। যে গ্রাহকের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে তার নাম আতিকুর রহমান। তিনি একটি ইনস্যুরেন্স প্রতিষ্ঠানের ব্রাঞ্চ প্রধান। তাঁর হিসাব থেকে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। গত ১৬ ও ১৭ আগস্ট ১০টি ট্রানজকশনে ১০টি বিকাশ নম্বরে এই টাকা সরানো হয়।
এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ভুক্তভোগী এই গ্রাহক রাজশাহী সাইবার আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেছেন। তাঁর পক্ষে আদালতে মামলাটি ফাইলিং করেন জেলা জজ আদালতের আইনজীবী শাহীন আলম মাহমুদ। আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা এই মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বাদী আতিকুর রহমান জানান, তিনি ১৫ আগস্ট ব্যক্তিগত কাজে ভারতে যান। এরপর ১৬ ও ১৭ আগস্ট তাঁর ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ১৯ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন। পরবর্তীতে ৩ সেপ্টেম্বর তিনি ব্যাংকে টাকা তুলতে যান। তখন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, তাঁর হিসাবে পর্যাপ্ত টাকা নেই। এরপর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ একটি স্টেটমেন্ট দেয়। সেখানে দেখা যায়, ১০টি বিকাশ নম্বরে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
এরমধ্যে ০১৭৩৩২৭৫১৬১ নম্বরে ২০ হাজার ৪০০ টাকা, ০১৭৯০১৪৫৪০২ ০১৬৪০০৯৩৯২৩ ও ০১৬৪০০৯৩৯২২ নম্বরে ২৫ হাজার ৫০০ টাকা করে এবং ০১৭৮৭০২৮৩৩৩, ০১৮২৮১৬২৫১০, ০১৭৭৪৬২৭৪৪৩, ০১৭৯৭৮৫১৫৮০, ০১৭৮৭০০৩৩৮০ ও ০১৫১৭০০২৫৮৯ নম্বরে ৩০ হাজার টাকা করে তুলে নেওয়া হয়েছে।
আতিকুর রহমান মামলার আরজিতে বলেছেন, দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য তিনি ব্যাংকে ডলার এনড্রোজ করতে গিয়েছিলেন। সে কারণে তিনি যে ভারত যাচ্ছেন, তা ব্যাংকের অনেক কর্মকর্তাই জানতেন। আতিকুরের সন্দেহ, তাঁর অনুপস্থিতিতে ব্যাংকের এক বা একাধিক কর্মকর্তা এই টাকা তুলে নিয়েছেন। টাকা তোলার বিষয়টি জানতে পারার পরদিন গত ৪ সেপ্টেম্বর তিনি নগরীর বোয়ালিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পুলিশ প্রাথমিক তদন্তও করে। এরপর মঙ্গলবার আদালতে মামলা দায়ের করলেন আতিকুর।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইস্টার্ন ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ব্যবস্থাপক আবির আহমেদ খান বলেন, ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের অনুমতি ছাড়া তিনি কোন কথা বলতে পারবেন না।
আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ইসমত আরা জানান, আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী ২৫ অক্টোবর আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য ইস্টার্ন ব্যাংকের রাজশাহী শাখাকে নির্দেশনাও দিয়েছেন আদালত। আদালতের আদেশের এই অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহীর নির্বাহী পরিচালক এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছেও পাঠাতে বলা হয়েছে।