বর্ণাঢ্য আয়োজনে উৎসবমুখর পরিবেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্নুজান হলের দুই দিনব্যাপী হীরক জয়ন্তী ও প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। শুক্রবার সকালে বেলুন-ফেস্টুন উড়িয়ে হীরক জয়ন্তী ও প্রথম পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। এরপর প্রাক্তন ছাত্রীদের অংশগ্রহণে মন্নুজান হলের সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়।
শোভাযাত্রাটি প্যারিস রোড হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ও ভবন প্রদক্ষিণ শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শহীদ ড. শামসুজ্জোহার সমাধীতে ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তক অর্পণের শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মন্নুজান হলের প্রাক্তনীরা। এরপর সকাল ১১টায় কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে কেক কাটা ও স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্নুজান হলের হীরক জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ও বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেণী।
অনুষ্ঠানে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে এসে অংশগ্রহণকারীরা অতীতের স্মৃতি রোমন্থণ করেন। দীর্ঘদিন পর একে অন্যকে পাশে পেয়ে আনন্দঘন মুহুর্তের সৃষ্টি হয়। মন্নুজান হলের হীরক জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে।
রাসিক মেয়র বলেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নারীদের জয়জয়কার, নারীদের জাগরণ ঘটেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুরু থেকে নারীদের এমনভাবে উৎসাহিত করেছেন যে নারীরা আজকে শিক্ষাক্ষেত্র সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। সামরিক, বেসামরিক, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কাজে এবং ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক সকল বিষয়ে নারীরা আজকে অগ্রণী ভুমিকা পালন করছে। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী সহ নারী-পুরুষ মিলে মোট জনসংখ্যায় দেশের কাজে লাগায় দেশ দৃশ্যমান উন্নয়নের দিকে চলে যাচ্ছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ‘ফ্রেশ নিউক্লিয়ার ফুয়েল বা ইউরেনিয়াম হস্তান্তর করা হয়েছে। বিশ্বের ৩৩তম দেশ হিসেবে নিউক্লিয়ার ক্লাবে এখন বাংলাদেশ। এভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নে শিখরে পৌছে যাচ্ছে বাংলাদেশ ।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় শেখ হাসিনা দেশে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান করে দিয়েছেন। এসব স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বজায় রাখতে সংশ্লিষ্টদের সজাগ থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল কাজ হচ্ছে গবেষণা। সেই বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।
অনুষ্ঠানে রাবি উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, মন্নুজান হলের হীরক জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী উৎসব ও আনন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এটি আমাদের সবার জন্য আনন্দের। মন্নুজান হলের প্রাক্তনীরা সমাজে সবাই প্রতিষ্ঠিত। দেশ ও মানুষের কল্যানে অবদান রাখছেন। এটি আমাদের জন্য গর্বের।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সমাজসেবী শাহীন আকতার রেণী বলেন, আজকের হীরক জয়ন্তী ও পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। আমরা যেন সেই আগের সময়ে ফিরে গেলাম। দীর্ঘদিন পর আমরা এখানে একত্রিত হতে পেরেছি, এটি অনেক আনন্দের। এখান থেকে একটি বার্তা যাবে যে, আমরা নারীরা একত্রিত। নারীরা জয় সবার জয়।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর সুলতান-উল-ইসলাম, উপ-উপাচার্য হুমায়ুন কবীর উপস্থিত ছিলেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য দেন মন্নুজান হলের প্রাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. রাশেদা খাতুন। অনুষ্ঠানে মন্নুজান হলের সাবেক প্রাধ্যক্ষ ও প্রতিটি ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্রী স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৬৪ সালে ছাত্রীদের প্রথম আবাসিক হল ‘মন্নুজান হল’ নির্মিত হয়। হলটির নাম দানবীর হাজি মুহম্মদ মহসিনের বড় বোন বেগম মন্নুজানের নামানুসারে নামকরণ করা হয়। হীরক জয়ন্তী ও প্রথম পুনর্মিলনী উৎসবে ১৯৬৪ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত মন্নুজান হলের প্রাক্তন ছাত্রীরা অংশ নেন মন্নুজান হলের প্রাক্তনীদের পদচারণায় মুখর উঠেছে মতিহারের সবুজ চত্বর। প্রথম দিনের অনুষ্ঠানমালায় আরো ছিল র্যাফেল ড্র, ফটোসেশন ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শনিবার (৭ অক্টোবর) দ্বিতীয় দিনেও রয়েছে স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।