রাকিব হাসান। বাড়ি ঢাকার সাভার এলাকায়। গত প্রায় দুই মাস ধরে আছেন নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে। সঙ্গে আছেন আরও ৫ জন বাংলাদেশী। তাঁরা সবাই ঢাকার আশে-পাশের বাসিন্দা। ৬ জনই যাবেন ইউরোপেযর দেশ লিথুনিয়ায়। সেখান থেকে ফ্রান্স বা জার্মানি পাড়ি দিবেন। নেপালে কাঠমান্ডুতে লিথুনিয়া দুতাবাসের মাধ্যমে আবেদন জমা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো ভিসা অনুমোদন হয়ে আসেনি। ফলে কাঠমাÐুতেই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন রাকিবসহ তাঁর সঙ্গের ৬ যুবক। রাকিবের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয় কাঠমান্ডু শহরের শুধারা এলাকার একটি হোটেলে। রাকিবসহ ওই ৬ যুবকই উঠেছেন ওই এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে। দুটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে তাঁরা দিনের পর দিন সেখানে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন লিথুনিয়া যাওয়ার আশায়।
সদ্য স্নাতোকত্তোর শেষ করা শিক্ষিকত যুবক রাকিব বলেন, ‘দুই তিন মাসের মধ্যে ভিসা হয়ে আসে। তবে আমাদের টা দুই মাস পার হয়ে গেছে। আশা করছি দুই-একদিনের মধ্যে চলে আসবে। ভিসা পেলেই আমরা রওনা দিবো লিথুনিয়ায়। সেখানে কয়েক মাস কাজ করে ফ্রান্স বা জার্মানিতে ঢুকার চেষ্টা করবো।’ লিথুনিয়ার ভিসা পাওয়া সহজ। বাংলাদেশী এ্যাজেন্টের মাধ্যমে ওয়ার্ক পার্মিট নিয়েছি। এখন ভিসা পেলেই চলে যাবো। আমার সঙ্গে আরও ৫ জন আছেন, তাঁরাও একই পদ্ধতিতে লিথুনিয়া যাবেন। এর পর ইউরোপের বড় কোনো দেশে যাবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘৮ লাখ টাকা দিয়ে এক এ্যাজেন্টের মাধ্যমে ওয়ার্ক পার্মিট ভিসা নিয়েছেন তিনি।
নেপালের কাঠমান্ডু ঘরে দেখা গেছে, রাকিবের মতো শত শত যুবক ইউরোপ পাড়ি দেওয়ার আশায় নেপাল গিয়ে বসে আছেন ভিসার আবেদন করে। তাঁদের কেউ পর্তুগাল যাবেন, কেউ জার্মানি, কেউ ফ্রান্স, কেউ ফিনল্যান্ড, কেউ বা ইটালী বা ইউরোপেযর অর্থনীতিতে সমৃদ্ধশালী দেশগুলোতে। তবে এসব দেশে সরাসরি যেতে নানা বাধার কারণে এসব যুবক আগে ইউরোপের ভিসা পাওয়া সহজ এমন দেশগুলোতে প্রথমে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। লাখ লাখ টাকা দালালকে দিয়ে ওয়ার্ক পার্মিট ভিসা নিয়ে উন্নত জীবন গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ইউরোপ পাড়ি দিচ্ছেন এসব যুবক।
আরেক যুবক সাজেদুল ইসলাম জানান, তিনি ক্রোয়েশিয়া যাবেন প্রথমে। এর জন্য ওয়ার্ক পার্মিট নিয়ে ভিসার জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। এক মাস আগে আবেদন জমা দিয়েছেন। তবে ভিসা আসেনি এখনো। ওয়ার্ক পার্মিট ভিসার জন্য তাঁকে গুনতে হয়েছে ৭ লাখ টাকা।
নেপালের কাঠমান্ডু শহরের থামেল এলাকার বিসমিল্লাহ নামের একটি হোটেলে কথা হয় আরকে ব্যক্তি শামসুর রহমানের সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘তিনিসহ ৯জন আছেন ওই এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে। তাঁরা সবাই যাবেন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। তবে প্রথমে যাবেন লিথুনিয়ায়। একেকজন ৭-৯ লাখ টাকা দিয়েছি এ্যাজেন্টকে। ভিসার জন্য আবেদন করে কাঠমান্ডুতে বসে আছি। প্রতিদিন হোটেলে থাকা আবার হোটেলে খাওয়া। অনেক খরচ হচ্ছে। কিন্তু করার কিছু করার নাই। একবার ইউরোপ যেতে পারলে সব ঠিক করে ফেলবো।’
তিনি আরও জানান, লিথুনিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস বা কন্সুলেট নাই। সে কারণে তিনি নেপাল হয়ে হয়ে লিথুনিয়ায় যেতে চান। তাঁর মতো শত শত যুবক বর্তমানে নেপালে অপেক্ষা করছেন ইউরোপ পাড়ি দিতে। তাঁদেও অনেকের সঙ্গেই যোগাযোগ হচ্ছে শামসুর রহমানের। সবাই নেপালের কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হোটেলে অপেক্ষা করছেন। দিনের বেলা অনেকেই একসঙ্গে ঘুরছেন। খাচ্ছেন।
প্রায় ৪৫ বছর বয়স্ক হাসান আলীও যাবেন ইউরোপে। তাঁর সঙ্গে কথা হয় কাঠমান্ডুর দরবার স্কয়ার এলাকায়। তিনিও ভিসার জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। প্রথমে লিথুনিয়ায় যাবেন তিনি। তিন সন্তানের জনক হাসান আলীর বাড়ি নোয়াখালি সদর এলাকায়। আগে ব্যবসা করতেন তিনি। তবে ব্যবসায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে এখন স্বপ্ন দেখছেন ফ্রান্স যাওয়ার। এ আশায় লিথুনিয়ায় পাড়ি দিবেন প্রথমে। সেনজেন ভিসা নিয়ে লিথুনিয়ায় গিয়ে সেখানে কয়েক মাস থাকার পরে যাবেন ফ্রান্সে। ফ্রান্সে তাঁর এক আত্মীয় আছেন। তাঁর মাধ্যমে সেখানে কাজও সংগ্রহ করে নিবেন তিনি।
হাসান আলী বলেন, ‘আমার কয়েকজন বন্ধু এরই মধ্যে চলে গেছে লিথুনিয়ায়। আমিও যাওয়ার অপেক্ষায় আছি। আশা করছি দ্রæতই ভিসা পাবো।’